রিজভীকে সংবাদ সম্মেলন না করার পরামর্শ জাফরুল্লাহর

বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত সংবাদ মাধ্যমের সামনে আসা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে সংবাদ সম্মেলন করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2017, 03:25 PM
Updated : 14 Jan 2017, 04:13 PM

শনিবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় রিজভীর কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বিএনপি সমর্থক এই পেশাজীবী নেতা বলেন, “উনি প্রতিদিন স্টেটমেন্ট দিয়ে বেড়ান, কারও সাথে আলাপ না করে ঘোষণা দিয়ে কিছু একটা করে কাগজ ছেড়ে দেন। এতো বড় দলের ইয়েকে তো উপদেশ দেওয়া যায় না, এই ধৃষ্টতা আমার নেই। তবে একটা সুপারিশ করতে পারি।

“রিজভী সাহেব অনুগ্রহ করে আর প্রেস কনফারেন্স করবেন না, আর প্রেস নোট ছাপবেন না।”

রিজভীকে নিয়ে এক আত্মীয়ের বক্তব্য তুলে ধরে জাফরুল্লাহ বলেন, “আজকে সকালে এখানে আসার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম, তখন আমার এক আত্মীয় বললেন, সেখানে যদি রিজভী সাহেব থাকেন, তাকে একটা কথা বইলেন। এটা বোঝে না দেশের মানুষ কী শুনতে চায়, ঘরের মধ্যে থেকে শুধু...।”

তার ওই কথা শুনে সাবেক সামরিক শাসক এইচএম এরশাদের কথা মনে পড়ে যায় বলে জানান জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

“যখন এরশাদ সাহেব ক্ষমতায় ছিলেন, তখন উনি প্রতিদিন টেলিভিশনের পর্দায় আসতেন। আমার ছোট মেয়ে ছিল বৃষ্টি। সে বলত যে, বাবা- হু ইজ দ্যাট টেলিকাস্টার, হু কামস এভরি ডে। না না বৃষ্টি, হি ইজ আওয়ার প্রেসিডেন্ট এরশাদ।”

পরে এরশাদের সঙ্গে দেখা হলে আট-নয় বছরের মেয়ের ওই প্রশ্ন তাকে জানিয়েছিলেন এবং তাতে কাজ হয়েছিল বলে জানান তিনি।

“উনার (এরশাদ) বুদ্ধি ছিল বলে এরপর থেকে উনি টেলিভিশনে এত বেশি আসতেন না। দুর্ভাগ্য, বিএনপির মাথায় সেটাও নাই, তারা সব কিছু জানে।”

সরকার মিছিল করতে দেয় না অজুহাত দেখিয়ে রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলন করেন বা বিবৃতি দেন বলে মন্তব্য করেন জাফরুল্লাহ। তা না করে ঢাকার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে সভা-সমাবেশ করলে তাতে বিএনপি লাভবান হবে বলে মনে করেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিতিতেই রিজভীর সমালোচনা করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ নামের একটি সংগঠন আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও নানা পরামর্শ দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

সরকারবিরোধী ছোট-বড় সব দলকে নিয়ে ‘সম্মিলিত বিরোধী দল’ গঠনের জন্য্ খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

তা না হলে বিএনপিকে বহুদিন বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ওই মূল আসনে যেতে পারবেন না। মূল আসনে যেতে হলে জিয়াউর রহমানের জিনিসগুলো উপলব্ধি করতে হবে, জনগণকে উপলব্ধি করতে হবে, অন্যের কথা শুনতে হবে। নিজেদের এতো পণ্ডিত ভাবলে চলবে না।”

যে কোনো বক্তব্য দেওয়ার আগে বিএনপি নেতৃত্বকে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, মাহবুবউল্লাহ, মাহফুজউল্লাহ ও দিলারা চৌধুরীর মতো যেসব ব্যক্তি আছেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করার পরামর্শ দেন তিনি।

“নিজেদের এতো পণ্ডিত মনে করলে হবে না। জিয়াউর রহমান এটা মনে করতেন না। জিয়া সন্ধ্যা থেকে রাত ৪টা পর্যন্ত নানা মানুষের সাথে আলাপ করতেন,” বলেন তিনি।

খালেদা জিয়াকে শিমুল বিশ্বাসের পাশাপাশি আরেকজন নারী সহকারী রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “উনি সকাল ৮-৯টার সময় গুলশানের বাসায় যাবেন, দিনের ১-২টা পর্যন্ত থাকবেন, কর্মীদের সাথে নেত্রীর দেখা করানোর ব্যবস্থা নেবেন।”

বিএনপির ‘১০ হাজারের মতো’ নেতা-কর্মী এখন কারাগারে আছেন জানিয়ে তাদের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান জাফরুল্লাহ।

“তাদের সকলকে ফোন করে খোঁজ নেওয়া, তার মায়ের খোঁজ নেওয়া, বউয়ের খোঁজ নেওয়া। নেত্রীকে বলব- এসব করুন। দেখেন কী রকম জাগরণ সৃষ্টি হয়। আমি বলব, জনগণের সাথে সম্পৃক্ত হন, ওই আবরণের বোরকা ছেড়ে দিয়ে রাস্তায় নামুন, তাহলে দেখবেন যে আপনার উন্নতি হবে,” বলেন তিনি।

ওই অনুষ্ঠানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের গুটি কয়ের উপস্থিতিতেও হতাশা প্রকাশ করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

“আজকের এখানে ৫৭২ জনের কমিটির কজন উপস্থিত আছেন? যে দলের এ রকম অবস্থা হয় তাদের ভবিষ্যৎ খুব বেশি উজ্জ্বল না। তাদের অনেকদিন বক্তৃতা দিয়ে বেড়াতে হবে। সেই বক্তৃতা হচ্ছে প্রেস কনফারেন্স করা।”

‘ভারতপ্রীতি’ দিয়ে বিএনপি কখনও ক্ষমতায় আসবে না মন্তব্য করে কাশ্মির পরিস্থিতি, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা-এসবের বিষয়ে দলটির নেতাদের সরব হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।