দুর্নীতির দুই মামলায় আদালতে খালেদা

সোয়া পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের দুই মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে হাজির হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। 

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2017, 07:16 AM
Updated : 12 Jan 2017, 07:16 AM

এর মধ‌্যে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর আত্মপক্ষ সমর্থনের অসমাপ্ত বক্তব‌্য উপস্থাপনের দিন নির্ধারিত আছে। আর জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ‌্যগ্রহণের কথা রয়েছে নতুন করে।

পুরান ঢাকার বকশীবাজারে ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে এ দুই মামলার বিচার কাজ চলছে। বৃহস্পতিবার সকালে গুলশানের বাসা থেকে রওনা হয়ে বেলা ১১টার দিকে খালেদা আদালতে পৌঁছান।

এর আগে গত ১ ডিসেম্বর আদালতে উপস্থিত হয়ে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন খালেদা। ওই ট্রাস্টের তিন কোটি ১৫ লাখ টাকা আত্মসাতের এ মামলায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে সুবিচার চান তিনি।

এরপর মামলার কার্যক্রম স্থগিতের জন্য হাই কোর্টে আবেদন করেন বিএনপির চেয়ারপারসন। শপথ আইন ‘না মানার’ কারণ দেখিয়ে ৩২ জনের সাক্ষ্য নতুন করে নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয় ওই আবেদনে।

১৫ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার পক্ষে সাফাই সাক্ষী দেওয়ার জন্য ২২৫ জনের তালিকা আদালতের কাছে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু খালেদা পর পর দুটি ধার্য দিনে উপস্থিত না হওয়ায় তার অসমাপ্ত আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি পিছিয়ে যায়।

বিএনপি চেয়ারপারসন ৫ জানুয়ারি আদালতে হাজির হলে হাই কোর্টে তার আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকার কথা জানিয়ে শুনানি পেছানোর আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। পরে বিচারক খালেদার অসমাপ্ত বক্তব‌্য শোনার জন‌্য ১২ জানুয়ারি দিন রাখেন।

সেদিন খালেদার আইনজীবী আদালতকে বলেন, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের নূর উদ্দিন আহমেদ তার প্রতিবেদনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগের কথা বলেননি। কিন্তু তার সাক্ষ‌্যগ্রহণ না হওয়ায় জেরাও করা যায়নি।

এই যুক্তি দেখিয়ে আসামিপক্ষ দুদক কর্মকর্তা নূর উদ্দিনের সাক্ষ‌্য‌নেওয়ার আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন। এ বিষয়ে সমন জারি করে করে নূর উদ্দিনের সাক্ষ‌্য‌নেওয়ার জন‌্য ১২ জানুয়ারিই দিন রাখেন তিনি।

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলা

জিয়া দাতব্য ট্রাস্টের নামে আসা তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ অগাস্ট তেজগাঁও থানায় এই মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

খালেদা জিয়া ছাড়া অভিযুক্ত অপর আসামিরা হলেন- বিগত চারদলীয় জোট সরকার আমলে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তৎকালীন একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএ-এর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চার জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। পরের বছরের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরু হয়।

এ মামলায় মোট ৩২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। আসামিদের মধ্যে জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা

এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলা দায়ের করে দুদক। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। তদন্ত শেষে দুদক ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

তার পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ বাসুদেব রায় অভিযোগ গঠন করে খালেদাসহ ছয় আসামির বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।

আসামিদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন। খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান আছেন দেশের বাইরে।

এছাড়া সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।