প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিচারকে প্রভাবিত করছে: ফখরুল 

জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ‘দোষী সাব্যস্ত করে’ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিচারকে প্রভাবিত করছে বলে অভিযোগ করছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2017, 05:38 PM
Updated : 11 Jan 2017, 05:38 PM

আগের দিন আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে গতকাল (মঙ্গলবার) তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, এতিমের নামে আসা টাকা তিনি (খালেদা জিয়া) চুরি করে খেয়েছেন।

“হোয়াই ইট ইজ গিভেন? এটি ইজ সাবজুডিস। কোর্টে কেইস চলছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) রায় দিয়ে দিয়েছেন।”

বুধবার বিকালে সেগুনবাগিচায় কঁচিকাঁচা ভবন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আপনি সরকারের প্রধান, আপনি এক্সিকিউটিভ ব্রাঞ্চের প্রধান। একটি মিথ্যা মামলা হয়েছে, সেই মামলার অনুসন্ধান হয়েছে, অনুসন্ধানের পর সেটার বিচারও চলছে।

“আপনি (প্রধানমন্ত্রী) ইতোমধ্যে অনুসন্ধানও করে ফেলেছেন অর্থাৎ অভিযুক্তও করেছেন, ট্রায়ালে নিয়েছেন; বলেছেন চুরি করেছে অর্থাৎ আর  প্রয়োজন আছে বিচারকের রায় দেয়ার?

“দেশের সরকার প্রধান হয়ে উনি যখন আরেকজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মামলায় এভাবে কথা বলতে থাকেন, তখন সেই মামলার রায় কী হবে- আমরা জানি। এই হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র।”

‘মিথ্যা মামলা’ এবং এতে ‘রায়’ দিয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষকে দাবিয়ে রাখা যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের জনসভায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার প্রসঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “জিয়া অরফানেজের নামে এতিমখানার জন্য যে টাকা এসেছিল, সেই টাকা উনি লুট করে নিয়েছেন। অরফানেজের নামে টাকা নিলেও ওই টাকা এতিমরা পায় নাই। সে টাকা উনি গায়েব করে দিয়েছেন। লোপাট করে খেয়েছেন।

“সেই মামলার কাজ যখন চলছে, ৬৭ দিন তারিখ পড়েছে কোর্টে। উনি কয়দিন কোর্টে গেছেন? মাত্র সাতদিন। উনি নিজেই জানেন, কীভাবে দুর্নীতি করে এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছেন। কাজেই ওই মামলা চললেই শাস্তি অবধারিত নিশ্চয় এই ভয় তার আছে। কারণ যেহেতু দুর্নীতি করেছেন, চোরের মন পুলিশ পুলিশ - একটা কথা আছে না? এ জন্য উনি কোর্টে যান না। কোর্ট তারিখ দেয়, উনি যাবেন না। নানা অজুহাত নিয়ে উনি কোর্টকে ডজ মারেন।”

চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলামের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় ‘উন্নয়ন মেলা’র সমালোচনাও করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “সারাদেশে উন্নয়ন মেলা হচ্ছে। আইয়ুব খান ১৯৬৮ সালে উন্নয়নের দশ বছর করেছিল। ১৯৬৯ সালে তাকে পত্রপাঠ বিদায় হতে হয়েছিল। ইতিহাস কোনো দিন কাউকে ক্ষমা করেনি।

“আজকে যারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে, আজকে যারা আইনের শাসনকে ধ্বংস করছে, যারা মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, ভোট দেওয়ার অধিকারকে কেড়ে নিচ্ছে- তাদেরও দেশের জনগণ ক্ষমা করবে না।”

গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে না দেওয়ার কথা তুলে ধরে দেশে ‘দুই আইন চলছে’ বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।

“২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমরা সোহরাওয়ার্দীতে ৭ বার সমাবেশের জন্য অনুমতি চাইলে অনুমতি দেওয়া হয়নি। এই সরকার বিরোধী দল ও বিরোধী মতের কাউকে কাউকে সমাবেশ করতে দেয়নি। এরা আবার গণতন্ত্রের কথা বলে!

“আমার খুব মজা লেগেছে- গতকালকের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গণতন্ত্রের ভাষা শিখতে হবে বেগম খালেদা জিয়াকে।

“দিজ ইজ দ্য আইরনি। যারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না, তারা নিজের প্রয়োজনে কথা বলে, তারা আবার গণতন্ত্রের ভাষার কথাটা বলে।”

জাসাসের মহাসচিব রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ,জাসাসের সাধারণ সম্পাদক মনির খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের জাকির হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।