এক-তৃতীয়াংশ জেলা পরিষদে বিদ্রোহীরা জয়ী

৬১ জেলার মধ‌্যে ২১টিতে চেয়ারম‌্যান প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে ছিলেন, দুটি স্থগিত হওয়ায় বাকি ৩৮টি জেলা পরিষদের চেয়ারম‌্যান নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয় বুধবার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Dec 2016, 12:05 PM
Updated : 28 Dec 2016, 02:59 PM

বিএনপি-জাতীয় পার্টিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের বর্জনের মধ‌্যে পরোক্ষ ভোটের এই নির্বাচনে বাকি ৩৮টি জেলার এক-তৃতীয়াংশে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয় দেখা গেছে।

জেলা পরিষদের একজন করে চেয়ারম‌্যান ও ২০ জন করে সদস‌্য নির্বাচনে বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলার পর সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা ফল ঘোষণা করেন।

যে ৩৮টি জেলায় চেয়ারম‌্যান পদে নির্বাচন হয়েছে, তার ১৪টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।

তারা হলেন- জামালপুরে ফারুক আহমেদ চৌধুরী, মেহেরপুরে গোলাম রসূল, রাজশাহীতে মোহাম্মদ আলী সরদার, শেরপুরে হুমায়ুন কবির রোমান, পিরোজপুরে মহিউদ্দিন মহারাজ, বরিশালে মইদুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গায় শামসুল আবেদীন খোকন, সাতক্ষীরায় নজরুল ইসলাম, নড়াইলে সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, পঞ্চগড়ে আমানুল্লাহ বাচ্চু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শফিকুল আলম, নীলফামারীতে জয়নাল আবদীন, গাইবান্ধায় আতাউর রহমান সরকার ও সুনামগঞ্জে নুরুল হুদা মুকুট।

বাকি ২৪টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।

তারা হলেন মৌলভীবাজারে আজিজুর রহমান, নরসিংদীতে আসাদুজ্জামান, চাঁদপুরে ওসমান গণি পাটোয়ারী, ঝিনাইদহে কনক কান্তি দাস, মাগুরায় পঙ্কজ কুন্ডু, কুড়িগ্রামে জাফর আলী, রংপুরে ছাফিয়া খানম, শরীয়তপুরে ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার, বরগুনায় দেলোয়ার হোসেন, লক্ষ্মীপুরে শামসুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মইনুদ্দিন মণ্ডল, পটুয়াখালীতে খান মোশাররফ হোসেন, পাবনায় রেজাউল রহিম লাল, লালমনিরহাটে মতিয়ার রহমান, মাদারীপুরে মিয়াজ উদ্দিন খান, খুলনায় শেখ হারুনুর রশিদ, সিলেটে লুৎফুর রহমান, মানিকগঞ্জে গোলাম মহীউদ্দিন, ময়মনসিংহে ইউসুফ খান পাঠান, রাজবাড়ীতে ফকির আবদুল জব্বার, কুমিল্লায় আবু তাহের, নোয়াখালীতে এ বি এম জাফরুল্লাহ, কক্সবাজারে মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী ও গোপালগঞ্জে চৌধুরী ইমদাদুল হক।

অন‌্য দলগুলোর বর্জনের মধ‌্যে এই বিদ্রোহী প্রার্থীদের আটকানোর চেষ্টা শেষ সময়ে ছেড়ে দিয়েছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবারই বলেন, “আমরা একটা পর্যায়ে চিন্তা করলাম যে, অপজিশন নেই ইলেকশনটায়, একেবারেই আনঅপোজড সবাই হয়ে যাবে, এটা কেমন যেন একটা রং মেসেজ যায়।

“যারা প্রতিপক্ষ হিসেবে নির্বাচন করছে, দলীয় লোক হলেও তাদের প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ বা কনভিন্স করা- সে বিষয়টা আছে, কিন্তু চাপাচাপিটা করা থেকে আমরা বিরত থেকেছি।”

৬১টি জেলার মধ‌্যে ৩৮টিতে চেয়ারম‌্যান নির্বাচনে ভোট দেন সংশ্লিষ্ট জেলার সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি অর্থাৎ মেয়র, কাউন্সিলর, চেয়ারম‌্যান, ভাইস চেয়ারম‌্যান ও সদস‌্যরা।

চট্টগ্রামে এক ভোটার ভোট দিচ্ছেন

কুষ্টিয়া ও বগুড়ায় চেয়ারম‌্যান পদে নির্বাচন স্থগিত আছে।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ২১টি জেলায় চেয়ারম‌্যান প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে ইসি।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতরা হলেন- নারায়ণগঞ্জে আনোয়ার হোসেন, গাজীপুরে মো. আখতারুজ্জামান, ঠাকুরগাঁওয়ে সাদেক কোরাইশী, জয়পুরহাটে আরিফুর রহমান রকেট, নাটোরে সাজেদুর রহমান খাঁন, সিরাজগঞ্জে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, যশোরে শাহ হাদিউজ্জামান, বাগেরহাটে শেখ কামরুজ্জামান টুকু, ঝালকাঠিতে সরদার শাহ আলম, ভোলায় আব্দুল মোমিন টুলু, নেত্রকোনায় প্রশান্ত কুমার রায়, মুন্সীগঞ্জে মো. মহিউদ্দিন, দিনাজপুরে আজিজুল ইমাম চৌধুরী, নওগাঁয় এ কে এম ফজলে রাব্বি, ফেনীতে আজিজ আহমেদ চৌধুরী, কিশোরগঞ্জে মো. জিল্লুর রহমান, ঢাকায় মো. মাহবুবুর রহমান, হবিগঞ্জে মো. মুশফিক হুসেন চৌধুরী, চট্টগ্রামে এম এ সালাম, টাঙ্গাইলে ফজলুর রহমান খান ফারুক ও ফরিদপুরে মো. লোকমান মৃধা।

মাদারীপুরসহ কয়েকটি স্থানে মারামারি এবং ময়মনসিংহে দুই সদস‌্য প্রার্থীর ভোট বর্জন ছাড়া আর বড় ধরনের কোনো গোলাযোগ হয়নি এই ভোটে।

নির্দলীয় এই নির্বাচনে গোলযোগ না হলেও এই নির্বাচনে বিপুল টাকা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে এবং তা স্বীকারও করে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

ভোটে অংশ না নেওয়া বিএনপির নেতারা একে ‘তামাশার ভোট’ বলেছেন। পরোক্ষ ভোট সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় যুক্তি দেখিয়ে জেলা পরিষদের প্রথম এই নির্বাচন বর্জন করে দলটি।