নারায়ণগঞ্জ ভোটের ‘বিচারিক তদন্ত’ চায় বিএনপি

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে জয়ী করতে কারচুপির অভিযোগ এনে ‘বিচার বিভাগীর তদন্ত’ দাবি করেছে বিএনপি।

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Dec 2016, 06:46 AM
Updated : 23 Dec 2016, 11:18 AM

ভোটের পরদিন শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “বাহ্যিকভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের বাতাবরণ সৃষ্টি করে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সত্যিকার অর্থে গণরায়ের প্রতিফলন ঘটলে আমরা সেটিকে শুভেচ্ছা জানাই।

“তবে ধানের শীষের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের কারচুপির অভিযোগকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”

বৃহস্পতিবারের এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী পৌনে এক লাখ ভোটের ব‌্যবধানে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে নারায়াণগঞ্জের মেয়র নির্বাচিত হন।

রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষিত ফল অনুযায়ী, আইভী নৌকা পেয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬১১ ভোট। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাখাওয়াতের ধানের শীষ পেয়েছে ৯৬ হাজার ৪৪ ভোট।

বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ‘সন্তুষ্টি’র কথা বললেও ‘ভোট গণনায় ত্রুটি’ হয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন।

ওই প্রসঙ্গ টেনে নয়া পল্টনে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, “ধানের শীষের প্রার্থীর অভিযোগকে আমলে নিয়ে খতিয়ে দেখা অত্যন্ত জরুরি। সেজন্য গতকালের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ, গণনা, ফলাফল- ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য আমি বিএনপির পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি।”

সাত খুনের মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী হিসেবে আলোচিত সাখাওয়াত ভোট গণনা নিয়ে সন্দেহের কথা বললেও ফলাফল প্রত‌্যাখ‌্যান করার কথা বলেননি। শুক্রবার সকালে বিজয়ী প্রার্থী আইভী মিষ্টি নিয়ে তার বাসায় গেলে নারায়ণঞ্জের উন্নয়নে মেয়রকে সহযোগিতা করার কথাও তিনি বলেছেন।

আর ‘গণনার ত্রুটির’ অভিযোগকে ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের ভোট ‘অনুকরণীয় হয়ে থাকবে’।

রিজভী অভিযোগ করেন, নারায়ণগঞ্জের ১৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৪৪টির স্বাক্ষরিত ফলাফলের অনুলিপি বিএনপির এজেন্টদের সরবারহ করা হয়নি।

“ধানের শীষের প্রার্থী অভিযোগ করেছেন একটি কেন্দ্রে মোট ভোট পড়েছে এক হাজার, অথচ সেখানে ঘোষণা করা হয়েছিল নৌকা প্রতীকে আটশ ও ধানের শীষ পাঁচশ। পরে সাংবাদিক ও এজেন্টরা ওই অভিযোগটা করলে প্রিজাইডিং অফিসার ফলাফল পাল্টে দেন।”

আগের দিন ভোট শেষে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে রিজভী বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জের ভোট ‘বাহ‌্যিকভাবে’ সুষ্ঠু বলে মনে হলেও ‘শেষ মুহূর্তে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের’ আশঙ্কা তাদের কাটেনি।  

রুহুল কবির রিজভী (ফাইল ছবি)

তার সূত্র ধরে শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা বলে আসছিলাম, এই নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশের আড়ালে সরকারি ভেল্কিবাজির কোনো মহড়া চলছে কিনা। জনগণের রায়কে পাল্টে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে কিনা।

“কারণ এবার নির্বাচনের ৭২ ঘণ্টা পূর্ব থেকে এলাকার বাইরের লোকজনদের নির্বাচনী প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ফলে দলের কেন্দ্রীয় ও অন্যান্য জেলার নেতারা নির্ধারিত প্রচারের শেষ সময়ের দেড়দিন আগে থেকেই প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে পারেননি, যা নজিরবিহীন। এতো আগে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করাও সন্দেহজনক। এটি আগে ছিল না।”

বিএনপির দাবি অনুযায়ী ইসি এ ভোটে সেনা মোতায়েন না করায় নির্বাচনী এলাকায় ‘ভয়ভীতির পরিবেশ বিদ্যমান ছিল’ বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।

“ভয়ভীতির পরিবেশ বিদ্যমান ছিল- যার প্রতিফলন আমরা দেখলাম ভোট কেন্দ্রে স্বল্প সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি। কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোট পড়েছে মাত্র ২৫ ভাগ। সার্বিকভাবে স্থানীয় নির্বাচনে যে পরিমাণ ভোট পড়ার কথা, তার চেয়ে উপস্থিতি ছিল অনেক কম।”

“আবার কোনো কোনো কেন্দ্রে সারাদিন ভোটার উপস্থিতি নগণ‌্য দেখা গেলেও ফলাফলে দেখা গেছে শতকরা ৮০ ভাগ ভোট পড়েছে। আবার কোনো কোনো কেন্দ্রে দীর্ঘ লাইন ধরে ভোট দিতে দেখা গেছে, তাদের ভোট আগেই দেওয়া হয়ে গেছে বলে আজ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।”

ইসির হিসাবে নারায়ণগঞ্জের এবারের নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬২.২ শতাংশ, যা গতবার ৬৯ শতাংশের বেশি ছিল।

রিজভী বলেন, “আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজীরবিহীন নিরাপত্তার আড়ালে রাতের অন্ধকারে কী ভূমিকা রাখা হয়েছে তা নিয়েও জনমনে সংশয় রয়েছে। কারণ কারফিউয়ের মত পরিস্থিতিতে কোনো কিছু জনগণের নজরদারিতে থাকার কথা নয়।”

ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স, সিলের মতো ভোটের সরঞ্জাম ক্ষমতাসীনদের হেফাজতে থাকলে ‘জালিয়াতির যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে’ মন্তব‌্য করে এই বিএনপি নেতা বলেন, সেনাবাহিনী থাকলে ক্ষমতাশালীরা সেই অনিয়ম করা সাহস পায় না।

“আর এসব কিছু করা হয়নি বলেই নির্বাচনী ফিল্ড লেভেল হয়নি, সমতল হয়নি, যেটা আমাদের প্রার্থীও গতকাল (বৃহস্পতিবার) অভিযোগ করেছেন।”

অবশ‌্য সংবাদ সম্মেলনের পর সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রশ্ন করলে তার জবাব দেননি রিজভী।

অন‌্যদের মধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, বিলকিস জাহান শিরিন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আফরোজা আব্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, অ্যালবার্ট পি কস্টা, মুনির হোসেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।