বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির এই প্রার্থী বলেন, “নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও ভোট গণনায় ত্রুটি হয়েছে।”
রাত ১০টার দিকে শহরের পুরান কোর্ট এলাকায় শায়েস্তা খান রোডে বিএনপির নির্বাচনী মিডিয়া সেল ও কন্ট্রোল রুমে সাংবাদিকদের যখন সাখাওয়াত একথা বলেন, তখন ফলাফল অনেকটাই স্পষ্ট।
তার এক ঘণ্টার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নূরুজ্জামান তালুকদার ভোটের পূর্ণাঙ্গ ফল প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, ১৭৪টি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে আইভী পেয়েছেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬১১ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৪৪ ভোট। দুজনের ভোটের ব্যবধান ৭৯ হাজারের বেশি।
ত্রুটির বিষয় তুলে ধরতে গিয়ে কেন্দ্রের নাম উল্লেখ না করে সাখাওয়াত বলেন, “একটি কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার জানিয়েছেন, ভোট কাস্ট হয়েছে ১ হাজার। কিন্তু প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, ওই কেন্দ্রে নৌকা প্রতীক ৮০০ ও ধানের শীষ ৫০০ ভোট পেয়েছে।”
প্রিজাইডিং কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত ফল পোলিং এজেন্টদের দেওয়ার নিয়ম থাকলেও ১৭৪ কেন্দ্রের মধ্যে ৩০টির ফল ধানের শীষের এজেন্টরা পেয়েছেন বলে দাবি করেন সাখাওয়াত।
নিজের এই বক্তব্য ‘তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা আমার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, যাচাই-বাছাই করে পরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাব।”
ইসির সমালোচনা করে বিএনপির প্রার্থী বলেন, “আমি একজন আইনজীবী, আমি অনেকে দেশের নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা সম্পর্কে পড়ে জেনেছি। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা পড়েছি।
“সেই বিচার করলে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা অন্যান্য দেশের নির্বাচন কমিশনের চেয়ে কম না। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচনের কমিশন সরকার যা চায় তারা তাই করে।”
এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি এখনও রেজাল্ট শিট পাইনি। আমার প্রতিনিধি সেখানে গেছে। সেটা পাওয়ার পর আমি আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করব।”
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত তার ভোটকেন্দ্র চাষাঢ়ার ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন আদর্শ স্কুলে আইভীর কাছে ভোটে হেরেছেন।
ওই বিদ্যালয়ের দুটি কেন্দ্রে সাখাওয়াতের ধানের শীষ পেয়েছে ৯৬৮ ভোট (৫০৪ ও ৪৬২)। আর আইভীর নৌকা প্রতীক পেয়েছে ১ হাজার ৯৩০ ভোট (১২৫২ ও ৬৭৮)।
সাত খুনের মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সাখাওয়াত এবারই প্রথম ভোটের লড়াইয়ে নেমেছিলেন।
সকালে নিজের ভোট দেওয়ার পর জয়ের আশা প্রকাশের সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ভোটার সংখ্যা কম মনে হচ্ছে তার। এজন্য প্রভাব বিস্তারকে দায়ী করেছিলেন তিনি।
বিএনপির বর্জনের মধ্যে গতবার প্রায় ৭০ শতাংশ ভোটগ্রহণ হলেও এবার ভোটের হার কমে ৬২ শতাংশে দাঁড়ায়।
সাখাওয়াতের মতো তার দল বিএনপিও সুনির্দিষ্ট না করেই কারচুপির সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভোট গ্রহণ শেষে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, বাহ্যিকভাবে ভোট সুষ্ঠু হলেও এরপর ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের’ আশঙ্কা তাদের রয়েছে।
তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই ভোট সুষ্ঠু হয়েছে।