ভোট বাহ্যিকভাবে সুষ্ঠু, ভয় এখনও আছে: বিএনপি

নারায়ণগঞ্জের সিটি নির্বাচন  ‘বাহ্যিকভাবে সুষ্ঠু’ হয়েছে মন্তব্য করে ‘শেষ মুহূর্তে ভোটের ফলাফলে ইঞ্জিনিয়ারিং’ হয় কিনা- সেই সংশয় প্রকাশ করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Dec 2016, 12:25 PM
Updated : 22 Dec 2016, 12:25 PM

বৃহস্পতিবার বিকালে ভোটগ্রহণ শেষে ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই সংশয়ের কথা বলেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, “বাহ্যিকভাবে আমরা সারাদিনে দুই-চারটি বিছিন্ন ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠু ভোট হওয়ার পরিবেশ দেখেছি। অন্তঃশরীর প্রবাহে কী হবে, সেটা আমরা এখনো জানি না। ভোট গণনার পর ফলাফল ঘোষণার ব্যাপার আছে। এর মধ্যে কী হবে?”

রিজভীর দাবি, ‘পর্দার অন্তরালে ফল পাল্টানোর বা ছিনিয়ে নেওয়ার’ ঘটনা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের আমলে ‘বহুবার দেখা গেছে’।

“এখন জানি না কী হবে? আমাদের আশঙ্কা, শেষ মুহূর্তে কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং ঘটে কিনা।”

নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এ ব্যাপারে সর্তক থাকার আহ্বান জানান রিজভী।

“আমাদের আহ্বান থাকবে- ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা করা পর্যন্ত পর্দার আড়ালে কোনো কিছু যাতে না ঘটে, সেটি তারা দেখবেন।”

ফলাফল ঘোষণা করা না পর্যন্ত দলের পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রের ভেতরে এবং নেতা-কর্মীদের কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান রিজভী। তিনি বলেন, ফলাফল ঘোষণার পর নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।

প্রথমবারের দলীয় প্রতীকে হওয়া এ সিটি নির্বাচন নিয়ে প্রচারের সময় বিভিন্ন আশঙ্কার কথা বলেছিল বিএনপি। ভোটের মাঠের নিরাপত্তায় সেনা মোতায়েনের দাবি ছিল দলটির, যদিও তা ইসির সাড়া পায়নি।

ভোটের দিন কোথাও কোনো গোলযোগ না ঘটায় সবার মধ‌্যে স্বস্তি দেখা গেছে। শান্তিপূর্ণ ভোট হওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর পাশাপাশি বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দুজনেই বলেছেন, সুষ্ঠু ভোটের ফল মেনে নিতে তারা প্রস্তুত।    

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভোটের পর বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উৎসব মুখর ভোট ছিল জাতির কাছে সরকার ও আওয়ামী লীগের ওয়াদা; তা পূরণ হয়েছে।

আর গোলযোগহীন ভোট হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, “আল্লাহর অসীম রহমতে কোনো মারামারি হয়নি।”

তারপরও বিএনপির শঙ্কা যে কাটেনি, তা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, “আমাদের আশঙ্কা আছে, পর্দার অন্তরালে অনেক কিছু ঘটতে পারে এবং ঘটানো যায়, যেটি বিভিন্ন সময়ে এই সরকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অন্ধকারে, ভোররাতে ব্যালট বাক্স ভরানো হয়েছে।”

নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি আবারও অনুরোধ করব, যাতে কোনো ধরণের সুক্ষ্ম ও স্থূল ইঞ্জিনিয়ারিং না হয়, সেটি সবাই দেখবেন। তারা তাদের শেষ বেলায় ঘুরে দাঁড়াবেন, কোনো অনাচার যাতে সৃষ্টি না হয় এবং যে ভোটটি পড়েছে, সেই ভোটে যাতে জনগনের প্রতিফলন ঘটে সেটার ব্যবস্থা তারা গ্রহণ করবেন।”

স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমানের প্রাকাশ্যে ভোটদানের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, এতে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন হয়েছে।

“এটাও ক্ষমতার দাপট দেখানোর অংশ, যা গণতন্ত্র অনুমোদন করে না। এই যে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীক ভোট দেওয়া দেখানো হচ্ছে, এতেই বোঝা যায় যে সরকারের মনোভাবটা কী।”

অন‌্যদের মধ‌্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, আবুল খায়ের বাবলু, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবউদ্দিন খোকন, শামা ওবায়েদ, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ফাহিমা মুন্নী, আসাদুল করীম শাহিন, সেলিমুজ্জামান সেলিম, মুনির হোসেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।