মঙ্গলবার সকালে নগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের দেওভোগ এলাকা দিয়ে শেষ দিনের প্রচার শুরু করেন গত মেয়াদের মেয়র; দুপুরে দুই ঘণ্টার বিরতি নিয়ে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদনগরে ঘুরে ঘুরে গণসংযোগ শেষ করেন।
অবশ্য্ নিয়ম অনুযায়ী মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত প্রচার চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। ওই সময় পর্যন্ত ঘরোয়াভাবে আইভীর প্রচারও চলবে।
গণসংযোগ শেষে আইভী সাংবাদিকদের বলেন, “শেষ প্রচার চালিয়ে এলাম ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। এখন মানুষ ভোট দেবে, সেই অপেক্ষায় আছি। এখনকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ যেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত থাকে।”
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আইভীর বিশ্বাস, ইসি ‘নিরপেক্ষ থাকলে’ আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ‘সক্রিয় থাকলে’ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।
কোনো আশঙ্কা দেখছেন কিনা- এমন প্রশ্নে ক্ষমতাসীন দলের এই প্রার্থী বলেন, “কোনো আশঙ্কা আমি উড়িয়ে দিচ্ছি না। প্রার্থীদের মধ্যেতো চিন্তা থাকেই।”
বেলা দেড়টার দিকে রিকশায় বঙ্গবন্ধু সড়ক ধরে এগিয়ে যাওয়ার সময় রেল কলোনি কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে মুসল্লিরা হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও তার আগে পৌরসভার অভিভাবকের দায়িত্বে ১৩ বছর কাটিয়ে আসা আইভীকে।
শুভেচ্ছার জবাব দিয়ে দেওভোগ পাক্কা সড়ক দিয়ে তিনি হযরত মিন্নত আলীর মাজারে যান। সেখানে মাজারের খাদেমসহ কয়েকজনের কাছে নৌকার পক্ষে ভোট চান।
এরপর কাপড়ের জন্য বিখ্যাত সোহরাওয়ার্দী মার্কেটে গিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে ভোট চান নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত আলী আহমেদ চুনকার মেয়ে আইভী। ব্যবসায়ীরাও তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
মেসার্স মুজাহিদ গার্মেন্টেসের সামনে বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে নিজের আত্মবিশ্বাসের কথা জানিয়ে আইভী বলেন, “আমি কেন আপনাদের কাছে ভোট চাইব! আপনারা অতীতে আমার বাবাকে যেভাবে সমর্থন দিয়েছেন, আমাকেও দিয়েছেন। আমার বাবা আপনাদের জন্য কী না করেছেন, আপনাদের সবাই সেটা জানেন,”
বিক্রমপুর এলাকা থেকে এসে নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায় প্রসার ঘটানো এই বণিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আমাদের এই এলাকাকে সমৃদ্ধ করেছেন। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়, আমি নাকি বিক্রমপুরের মানুষদের ভাড়াটে বলেছি। আমি ভাড়াটে বলব কেন? আমার আপন খালাসহ তিন চারজন আত্মীয় স্বজনেরতো বিয়ে হয়েছে সেখানে।”
সোহরাওয়ার্দী মার্কেট উচ্ছেদ করা হবে বলে যে শঙ্কা ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছে তা উড়িয়ে দিয়ে আইভী বলেন, “আপনাদের এখান থেকে সরানোর কোনো উদ্যোগ আমার নাই। সরকার যদি কোনো উদ্যোগ নেয় সেটা আমি দেখব।”
এরপর নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটে গিয়ে জিমখানা বস্তিবাসী নারীদের কাছে ভোট চান আইভী। সিটি করপোরেশন এই বস্তি উচ্ছেদ করে পার্ক বানানোর পরিকল্পনা করায় আইভীবিরোধী মনোভাব রয়েছে এর বাসিন্দাদের মধ্যে।
নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী তাদের প্রতিশ্রুতি দেন, বস্তি সরিয়ে পার্ক হলেও তার আগে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই বস্তির অনেক নারী প্রকাশ্যে আইভীকে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তাদের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মুখে এক মনে আরেক। কেউ ভোট দিব না। আমাদের এখান থেকে সরাই দিবে, আর ভোট দিব?”
মধ্যাহ্ন বিরতির পর নিতাইগঞ্জ এলাকা থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ শুরু করেন আইভী। নিতাইগঞ্জ থেকে শীতলক্ষ্যা এলাকা হয়ে রিকশায় চেপে ভোট চাইতে যান তিনি।
সেখানে আল আমিন বাজার, কদমতলী ব্রিজ, সৈয়দপুর, কড়ইতলা, জিয়ারা, শহীদনগর এলাকার বিভিন্ন জনাকীর্ণ এলাকায় গেলে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান সমর্থকরা।
বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতির কারণে দূর থেকে ‘নৌকা নৌকা’ স্লোগানে আইভীকে সমর্থন জানাতে দেখা যায় অনেককে। হাত নেড়ে তাদের শুভেচ্ছার জবাব দেওয়ার পাশাপাশি স্লোগানে কণ্ঠে মেলান আইভী। কোথাও কোথাও সমর্থকদের কাছ থেকে পাওয়া মালা মানুষের উদ্দেশ্যে ছুড়ে দিতে দেখা যায় আইভীকে।
আইভীর গণসংযোগের নেতাকর্মীরা ফিরে যাওয়ার পথে শীতলক্ষ্যার মুদি দোকানী সজল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই প্রার্থীর অবস্থাই ভাল। দেখা যাক কে জিতে। আইভীতো তার জনপ্রিয়তার কারণে দীর্ঘদিন এই এলাকার মেয়র ছিল।”
সুকুমপট্টি এলাকায় সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবউদ্দিন এবং জিয়ারা এলাকায় শহীদনগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সদস্যরা আইভীকে শুভেচ্ছা জানান।
ওই এলাকায় শহীদনগর মসজিদের সামনে সত্তোর্ধ্ব মজিদ মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইভী সবার আইভী। হেইত জিতব।”
নারায়ণগঞ্জে প্রথমবারের মত দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে মেয়র পদের প্রার্থী আইভীকে লড়তে হবে বিভিন্ন দলের আরও ছয় প্রার্থীর সঙ্গে। ঢাকার লাগোয়া এই সিটি করপোরেশনের পৌনে পাঁচ লাখ ভোটার কাকে বেছে নেবেন, তা জানা যাবে বৃহস্পতিবার ভোটের পর।