অন্য দিনগুলোর মতো রোববার সকাল থেকেই প্রচারে নামেন মেয়র প্রার্থীরা, নগরীর সর্বোচ্চ আসনে বসতে নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন তারা।
ভোটের তিন দিন আগে নিজের জয়ের বিষয়ে আশাবাদী প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী। সুষ্ঠু ভোট হলে নৌকার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না বলে মন্তব্য করলেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। আর সাখাওয়াত হোসেন খান বললেন, ধানের শীষের পক্ষে ‘আবেগ-উচ্ছ্বাস’ তৈরি হয়েছে ভোটারদের মধ্যে।
সকালে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় প্রচারের শুরুতে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ওই থানার ওসি সরাফত উল্লাহকে বদলির দাবি জানান ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থী।
এ সময় আইভী বলেন, “তিনি বেশি রকমের ‘কনট্রাডিক্টরি’ কাজ করাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগই নয়, ওই এলাকার জনগণেরও দাবি ওসিকে পরিবর্তন করা হোক।”
তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার বলেছেন, কমিশনের কাছে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি, করলে তা ‘খতিয়ে দেখা হবে’।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “নারায়ণগঞ্জে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে নৌকার বিজয় নিশ্চিত। ইসি যদি শক্ত ভূমিকা পালন করে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি তৎপর থাকে তাহলে কারও কোনো ক্ষমতা নেই এখানে কলকাঠি নাড়ায়।”
পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে ‘দলমত নির্বিশেষে’ কাজ করার কারণে নৌকার জোয়ার তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সদ্য সাবেক এই মেয়র।
এদিন সকালে শীতলক্ষ্যার ওপারে বন্দর থানার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের চৌরাপাড়া, নবীগঞ্জ, কাইতাখালী প্রভৃতি এলাকায় গণসংযোগ করেন বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান।
এরপর একই এলাকার ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করেন নির্বাচন ঘিরে রাজনীতির মাঠে আসা আলোচিত সাত খুন মামলায় বাদিপক্ষের এই আইনজীবী।
“উনি (আইভী) যে এলাকায় যাচ্ছেন, সেখানে একই লোকের সমাবেশ ঘটাচ্ছেন। আমরা ২৭টি ওয়ার্ডেই টিম ভাগ করে দিয়েছি। এক ওয়ার্ডের লোক আরেক ওয়ার্ডে যেতে পারবে না, সে হিসাবে প্রত্যেক ওয়ার্ডে কাজ হচ্ছে।”
তার পক্ষে ‘আবেগ-উচ্ছ্বাস’ সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে বিএনপির প্রার্থী বলেন, “২২ তারিখে (নির্বাচনে) এর প্রতিফলন ঘটবে, যদি ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।”
আইভীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন এবং প্রচারে সিটি করপোরেশনের ঠিকাদার আবু সুফিয়ানের গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগও তোলেন সাখাওয়াত।
তবে আইভী বলেছেন, পেশায় ঠিকাদার হলেও সুফিয়ান যুবলীগের কর্মী। নিজের গাড়ি না থাকায় আত্মীয়-স্বজনের গাড়ির পাশাপাশি মাঝেমধ্যে তার গাড়িও তিনি প্রচারের সময় ব্যবহার করছেন।
গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী এদিন
সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী পলি রানী সরকারের পক্ষে গণসংযোগ চালান।
পুলিশের বিশেষ অভিযান
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ।
একজন পরিদর্শকের নেতৃত্বে ৩০ জন পুলিশের একটি দল শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত নগরীর সিরাজদৌল্লাহ সড়কে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালায়।
অভিযানের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মঈনুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশের অভিযান সব সময়ই চলছে। তবে নির্বাচন সামনে রেখে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে অভিযান বিশেষভাবে জোরদার করা হয়েছে।”
তল্লাশির পাশাপাশি গোপন সংবাদ পেলে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারে এ অভিযান নির্বাচনের সময় পর্যন্ত চলবে বলে জানান তিনি।
“সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যাতে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সে লক্ষ্যে এই ‘রবাস্ট’ অভিযান চলছে। তা পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন এলাকায় চালানো হবে।”