নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনে ব‌্যবসায়ীরাই বেশি

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থীর সংখ‌্যা মোট ২০১ জন, এর মধ‌্যে ১৭৬ জনেরই পেশা ব‌্যবসা।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2016, 03:55 PM
Updated : 7 Dec 2016, 03:55 PM

শিল্পপ্রধান এই নগরীতে আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় অংশ নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে দেওয়া প্রার্থীদের হলফনামা পর্যবেক্ষণ করে প্রার্থীদের মধ‌্যে ৮৭ শতাংশ ব‌্যবসায়ীর সন্ধান পাওয়া যায়।

মোট প্রার্থীর বাকি ২৬ জনের কেউ চিকিৎসক, কেউ আইনজীবী, কেউ শিক্ষক, কেউ কৃষিজীবী, কেউ গৃহিনী। দলিল লেখা ও টিউশনি পেশায় থাকা ব‌্যক্তিরাও প্রার্থী হয়েছেন এই নির্বাচনে।

মেয়র পদে দুই প্রধান প্রার্থীর মধ‌্যে আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী হলফনামায় নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে দেখিয়েছেন। বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান লিখেছেন আইন ব‌্যবসা।

আইনজীবী হিসেবে সাখাওয়াত সক্রিয় থাকলেও এমবিবিএস ডিগ্রিধারী আইভীকে চিকিৎসার কাজে দেখা যায় না। প্রবাস থেকে ফিরে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম‌্যান নির্বাচিত হওয়ার পর নতুন সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র হন তিনি।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী

বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান

মেয়র পদে সাত প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৫৬ জনের মধ্যে ১৪৪ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৮ জনের মধ্যে ২৬ জন নিজেদের পেশা ব্যবসা উল্লেখ করেছেন।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর একটি মোর্চা ‘ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ-ইডব্লিউজি’র পরিচালক আব্দুল আলীমের মতে, নির্বাচনে অর্থের ছড়াছড়ির সঙ্গে ব‌্যবসায়ীদের প্রার্থী হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।   

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্বাচন করতে গিয়ে প্রচুর টাকার দরকার পড়ে। নির্বাচন কমিশন ব্যয়সীমা বেঁধে দিয়েও তা তদারকি না করায় অর্থের ছড়াছড়িও বন্ধ হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে রাজনীতিকদের পেছনে ফেলে ব্যবসায়ীরাই এখন ভোটের দৌড়ে বেশি।”

জাতীয় নির্বাচনের চিত্রও একই বলে নিজেদের পর্যবেক্ষণের কথা তুলে ধরেন ইডব্লিউজি’র পরিচালক আলীম। জাতীয় সংসদে নির্বাচিতদের ৬০ শতাংশের পেশা ব্যবসা বলে তিনি জানান।

রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও প্রার্থিতার দৌড়ে এগিয়ে ছিল ব্যবসায়ীরা।

হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, ওই চারটি সিটি নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলরসহ মোট ৭৪৭ প্রার্থীর মধ‌্যে ৪০৯ জনের পেশা ছিল ব্যবসা।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর একটি মোর্চা ইডব্লিউজি

ব‌্যবসায়ীদের আধিপত‌্যের কারণে পেশাদার রাজনীতিকরা কোনঠাসা হয়ে পড়ছে বলে মনে করেন আলীম।  

“অনেক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে যারা ভোটে দাঁড়াতে চান; কিন্তু অর্থের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ভোটে নিরুৎসাহিত হয়। ব্যবসায়ীদের ভোটে আসাটা প্রমাণ করে তৃণমূলেও রাজনৈতিক শূন্যতা বাড়ছে।”

নির্বাচন কমিশন ব্যয়সীমা বেঁধে দিলেও মাঠের পরিস্থিতি তদারকির কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রার্থীদের দেওয়া প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রবল সন্দেহ থাকে।

‘অনেকে সঠিক তথ‌্য দেয় না’ স্বীকার করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ প্রার্থীদের ব্যয় যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও তার বাস্তব প্রতিফলন ঘটে না।

দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা টিআইবি সম্প্রতি দাবি করে, গত বছরের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে প্রার্থীরা তাদের সীমার চেয়ে সাত থেকে ২১ গুণ পর্যন্ত বেশি ব্যয় করেছে।