জিয়ার কবর সরালে পাকিস্তানের পতাকা হবে: ফখরুল

লুই আই কানের নকশা অনুসরণের মধ‌্য দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার কার্যত সংসদ ভবন এলাকায় পাকিস্তানের পতাকার আদল ফিরিয়ে আনতে চাইছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2016, 02:29 PM
Updated : 7 Dec 2016, 02:53 PM

তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, “আজকে আপনারা কার নকশা পুনঃস্থাপিত করতে চাচ্ছেন? সেই পাকিস্তানি পতাকাকে রক্ষা করার জন্য অন্যান্য স্থাপনা ভেঙে ফেলতে চান? এই প্রশ্নের অবশ্যই জবাব জনগণকে দিতে হবে।”

আওয়ামী লীগের চোখে ‘পাকিস্তানপ্রেমী’ দলটির মহাসচিব বুধবার ঢাকায় এক আলোচনা সভায় উল্টো ক্ষমতাসীন দলটির বিরুদ্ধে ‘পাকিস্তানের পতাকাপ্রেমের’ অভিযোগ তুললেন।

১৯৬১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খানের আমলে বাংলাদেশের বর্তমান সংসদ ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্থপতি লুই কান এর নকশা করেন। এই নকশায় লেক ও সংসদ ভবন মিলিয়ে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার চাঁদ-তারার আদল খুঁজে পান অনেকে।

ওই নকশা ভেঙে বিভিন্ন সময়ে নির্মিত স্থাপনা সরানোর উদ‌্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। এতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরও পড়েছে বলে দলটি তীব্র আপত্তি জানিয়ে আসছে।

ফখরুল বলেন, “আইয়ুব খান, যাকে সবচেয়ে বড় ডিক্টেটর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, তিনি যখন এই ঢাকায় পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাজধানী নির্মাণ করবেন বলে ঘোষণা করলেন, তখন এগ্রিকালচারাল ফার্মের জায়গাকে বেছে নিয়ে আইয়ুব নগর নাম দিয়ে এখানে পার্লামেন্ট ভবন, সেক্রেটারিয়েট এবং কেন্দ্রীয় সরকারের স্থাপনাগুলো নির্মানের সিদ্ধান্ত নিলেন।

“সেই নকশা তৈরি করতে সিলেক্ট করা হল পৃথিবী বিখ্যাত লুই আই কানকে। ওই নকশার ভিত্তি হল, পাকিস্তানের পতাকার উপর ভিত্তি করে এই আইয়ুব নগর তৈরি হবে।”

লুই কানের মূল নকশাটি যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে সম্প্রতি আনার পর কবর সরানোর কথাটি ব‌্যাপক আলোচনায় রয়েছে।

ফখরুল বলেন, “আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা, সেটা বড় কথা নয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার মাজার। আজকে সেই শহীদ জিয়ার মাজারকে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলতে চান?

“তাহলে জনগণকে বলতে হবে, গণভবনের নকশা আছে কি না আমরা জানি না। তুলতে হবে বঙ্গবন্ধু কনভেনশন সেন্টার, সেই নকশায় আছে কি না আমরা জানি না। মানিক মিয়া এভিনিউ, যা ছিলো বিশাল একটা রাস্তা, যার ওপর দিয়ে জরুরি অবস্থাকালে বিমান অবতরণের ব্যবস্থা ছিল, সেটাকে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পর আইল্যান্ড বানিয়ে দ্বিখণ্ডিত করে দিয়েছিল। আজকে এই স্থাপনাগুলো আপনাদেরকে সরাতে হবে।”

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে যদি হাত দেন, তাহলে হাত আগুনে দেওয়া হবে, আগুন আপনাদের হাতকে পুড়িয়ে ছার-খার করে দেবে।”

নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, “এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দেওয়া প্রস্তাবের এক নম্বর দাবি রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করে তার একটা সূচনা করতে যাচ্ছেন।

“আমাদের নেত্রীর প্রস্তাবের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বললেন, ওই প্রস্তাব না কি অন্তঃসারশূন‌্য। অন্তঃসারশূন‌্য যদি হবে, তাহলে রাষ্ট্রপতি কেন ম্যাডাম খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের প্রথম অনুচ্ছেদ গ্রহণ করে সকল নিবন্ধিত দলের সঙ্গে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।”

ফখরুল বলেন, “আমি মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই।

“আমরা সত্যিকার অর্থে সকল দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমার ভোট আমি দেব, তোমার ভোটও আমি দেব- সেরকম নির্বাচন আমরা চাই না।”

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘স্বৈরাচারের পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ উপলক্ষে আলোচনা সভায় বিএনপির নেতারা

‘স্বৈরাচারের পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়। গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ।

‘নব্বইয়ের স্বৈরাচার ও বর্তমান স্বৈরাচার’ এক হয়ে দেশকে আজ ‘গণতন্ত্রহীন’ করে রেখেছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহসচিব।

বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “গণতন্ত্র লুণ্ঠিত হয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে। জনগণের ভোটের ক্ষমতা নেই। সারাদেশকে সরকার কারাগারে পরিণত করেছে। দেশের মানুষ এটা মেনে নেবে না।

“তাই আবারও সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, দাম্ভিকতা নয়, সহনশীলতার মধ্য দিয়ে জনগনের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য এগিয়ে আসুন, একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।”

ফখরুলের সভাপতিত্বে সহ-সম্পাদক মুনির হোসেন ও আমিরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিমউদ্দিন আলম বক্তব্য রাখেন।