ভোট না ছাড়ায় এলডিপি ও কল‌্যাণ পার্টির প্রার্থীকে বহিষ্কার

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর সমর্থনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করায় ২০ দলীয় জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) কামাল প্রধান ও কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌসকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2016, 01:09 PM
Updated : 5 Dec 2016, 04:30 PM

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ও এলডিপির সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ান আহমেদ সোমবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

কামাল প্রধান ‘ছাতা’ এবং রাশেদ ফেরদৌস ‘হাতঘড়ি’ প্রতীক নিয়ে নারায়ণগঞ্জের মেয়র হওয়ার লড়াইয়ে আছেন। সোমবার সকালে প্রতীক পাওয়ার পর তারা দুজনেই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দুষেছেন। 

এ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান লড়বেন দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে। দল ও জোটের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা করেই প্রার্থী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করেছিল বিএনপি। কিন্তু কামাল ও রাশেদ প্রার্থিতা প্রত‌্যাহার না করায় নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী এখন তিনজন।  

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটেও সমস‌্যা ছিল। জোটের শরিক জাসদ থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন মোসলেম উদ্দিন। তবে রোববার তিনি মনোনয়ন প্রত‌্যাহার করে নেন।   

সোমবার বিকালে কারওয়ান বাজারে এলডিপি কার্যালয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান ইবরাহিম বলেন, “দেশবাসী ও নারায়ণগঞ্জবাসীকে আমরা জানাতে চাই, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে আমাদের সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদ ফেরদৌসকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, এ নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। জোটের সবাই তার পক্ষেই মাঠে নামবে। এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির ‘কোনো অবকাশ নেই’।

এলডিপির সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ান আহমেদ বলেন, “বার বার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও আমাদের দলের মেয়র প্রার্থী কামাল প্রধান প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। এখন তিনি প্রতীকও বরাদ্দ নিয়েছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

দুই নেতাই বলেছেন, বহিষ্কারের বিষয়টি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেবেন তারা।

মনোনয়নপত্র প্রত‌্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ায় এখন দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও ওই দুজনের প্রতীক নিয়ে প্রচারে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দলীয় প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় প্রত‌্যয়নের বাধ‌্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু প্রত‌্যাহার করতে হলে প্রার্থীকেই রিটার্নিং অফিসারের কাছে আবেদন করতে হবে।

“এখন সবাই আমার কাছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী; তাদের প্রতীক ব‌্যালটে থাকবে। দল বহিষ্কার করলেও প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়টি এখন প্রযোজ‌্য নয়। দলীয় কোনো বিষয় এখন আর আমলে নেওয়ার সুযোগ নেই।”

কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এমএম আমিনুর রহমান, এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব সাহাদাত হোসেন সেলিম ও তমিজউদ্দিন টিটোও উপস্থিত ছিলেন এই সংবাদ সম্মেলনে।

মেয়র প্রার্থী নিয়ে জোটের এই জটিলতার কারণ জানতে চাইলে সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, “একটা সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে এই নির্বাচন নিয়ে। আমাদের প্রার্থী দল থেকে প্রার্থী হন। পরে জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক হলে আমরা জোটের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির সাখাওয়াত হোসেন খানকে সমর্থন দিই।

“কিন্তু যোগাযোগ করার পরও আমাদের প্রার্থী রাশেদ ফেরদৌস নির্দেশ অমান্য করে প্রার্থী হিসেবে রয়ে গেছেন। সেজন্য তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

অবশ‌্য দুপুরে প্রতীক পাওয়ার পর কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিকদের বলেন, ২০ দলীয় জোট বিএনপির প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব যাদের ওপর ছিল তাদের ‘গাফিলতির’ কারণে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। 

“তারা আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি। বিএনপির প্রার্থী এখন পর্যন্ত আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করেননি,” বলেন তিনি।

এ জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়ী করে রাশেদ ফেরদৌস বলেন, “মহাসচিব আমাকে এ বিষয়ে কিছু জানাননি। তিনি জোট ও দলের ক্ষতি করতে চান, আমারও ক্ষতি করতে চান।”

একই ধরনের অভিযোগ করে এলডিপির কামাল প্রধান বলেন, তারা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে গেলেও ২০ দলের পক্ষ থেকে কেউ কোনো যোগাযোগ করেনি।

“উনারা ব্যক্তিগতভাবে আমাদের সাথে সমঝোতা না করলে আমরা তো যেতে পারি না।”

তার ভাষায়, নারায়ণগঞ্জে এলডিপির অবস্থান কী, দলের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমেদের অবস্থান কী আর কামাল প্রধানের অবস্থান কী- তা জানে নারায়ণগঞ্জবাসী। কেন্দ্রে যারা থাকে, তারা ‘জানে না’।

“মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা না করে যদি দল আমাকে বহিষ্কার করে, তাহলে বিনয়ের সঙ্গে বলব, দলের চেয়ারম‌্যান ভুল করেছেন।”