আগে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার জন্য ক্ষমা চান: প্রধানমন্ত্রী

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রস্তাব দেওয়ার আগে ‘পুড়িয়ে মানুষ হত্যার জন্য’ খালেদা জিয়াকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2016, 01:40 PM
Updated : 3 Dec 2016, 02:39 PM

হাঙ্গেরি সফর থেকে ফেরার পর শনিবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসনকে তিনি এ পরামর্শ দেন।

খালেদা জিয়ার তুলে ধরা ১৩ দফা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার বিষয়ে মতামত চাইলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “তিনি নির্বাচন করেননি, একটা দল হিসেবে বা দলের প্রধান হিসেবে একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন থেকে বিরত থেকেছিল। এখন এতদিন পর উনার টনক নড়ল।

“এরপর উনি মানুষ খুন করে আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত করার আন্দোলন করল। যে কোনো প্রস্তাব দেওয়ার আগে তার তো জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ ছিল যে, সে যে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে তার জন্য।”

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিল এবং নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা তিন মাসের হরতাল-অবরোধে বাসে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে শতাধিক মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

নৃশংস সেসব হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “একটু হিসেব করে দেখেন যে, কত মানুষকে সে পুড়িয়ে মেরেছে। তার তো আগে প্রথমে একথাই বলা উচিৎ ছিল, তার ক্ষমা চাওয়া উচিৎ ছিল।

“এতগুলি সাধারণ মানুষ, বাসের ড্রাইভার, হেল্পার, রেল, লঞ্চ, কোথায় না আঘাত করছে? রাষ্ট্রীয় সম্পদ তো ধ্বংস করেইছে, বিদ্যুৎকেন্দ্র পুড়িয়েছে, ইঞ্জিনিয়ারকে ফেলে দিয়ে মেরেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার ২০ জন সদস্যকে হত্যা করেছে। আগে সেই জবাবটা জাতির কাছে দিক। তারপর তার প্রস্তাব নিয়ে কথা বলব।

“তিনি একটি বাড়িতে বসে থাকবেন, সরকার উৎখাত না করে বাড়ি ফিরবেন না। আর মানুষ পোড়াবে। তার কাছ থেকে আর কী আশা করবেন?”

২০১৫ সালের জানুয়ারিতে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানাতে গেলে তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেননি বিএনপি নেত্রী।

এই প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, “এই ধরনের অভদ্র যারা, তারা কি প্রস্তাব দিল না দিল ওটা নিয়ে আমার মতামত চান কেন আপনারা? এ ধরনের ছোটলোকি যারা করে, অভদ্রতা যারা করে তাদের কোনো মতামতের ওপর মতামত দেওয়ার অভিপ্রায় আমার নেই।

“যারা খুনি, খুনিদের কথার আবার কিসের জবাব দেব?”

নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বিএনপির দোলাচলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “তারা আজকে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তো কালকে ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। তাদেরও তো সিদ্ধান্তের কোনো মিল নেই।

“পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তারা জিতেছিল। তখন নির্বাচন কমিশন নিয়ে অভিযোগ উঠাল না কেন? তখন কিন্তু কথা বলেনি। আজকে একটা অংশগ্রহণ করবে, জিতলে ভালো, হারলে সব খারাপ।”

‘বিএনপি নেতৃত্বের কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতাই নেই’ মন্তব্য করে খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, “সাজুগুজু করে বসে থাকলেই সব হয় না।”

নির্বাচন কমিশন গঠনে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের সঙ্গে আলোচনার যে প্রস্তাব খালেদা জিয়া দিয়েছেন তার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “কারণ এটা তো বাস্তব, তিনি একেবারে সেই ’৭২ এর পর থেকে যত পার্টি; ফ্রিডম পার্টি থেকে শুরু করে খুনিদের দল, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামী সবাইকে নিয়েই উনি কথা বলতে চায়। উনার ভাব তো বুঝাই গেল উনি কী চাচ্ছে।”

বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধীদের মন্ত্রী এবং ‘ভোট কারচুপির’ নির্বাচন করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সংসদে বসিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

খালেদা জিয়ার প্রস্তাব নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “তার প্রস্তাব নিয়ে এত তোলপাড় করার কি আছে আমি তো বুঝি না, যে দেশের স্বাধীনতায়ই বিশ্বাস করে না।” 

তবে খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের বিষয়ে সিদ্ধান্তের ভার রাষ্ট্রপতির উপর ছেড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা রাষ্ট্রপতি ভালো বুঝবেন। তিনি পদক্ষেপ নেবেন। যে পদক্ষেপ নেবেন সেটাই হবে। এখানে আমাদের বলার কোনো কিছু নেই।”

বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এখানে প্রশ্ন একটাই আসে যে, তারা যখন ক্ষমতায়, তারা যে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিল সেগুলি কি তাদের স্মরণে আছে? সে কথাগুলি তো তাদের একটু স্মরণ করিয়ে দেওয়া উচিৎ যে, নির্বাচন নিয়ে কি খেলা তারা খেলেছে।”

এর আগে সার্চ কমিটি করে যেভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছিল এবারও সেই পদ্ধতিই অনুসরণ করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।