ঢাবির হল ছাত্রলীগে পদ প্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ প্রত্যাশী অনেকের ‍বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে।

তপন কান্তি রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2016, 01:21 PM
Updated : 26 Nov 2016, 01:21 PM

নেতাকর্মীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা কয়েকজনের নামে আছে ইয়াবা ব্যবসা, চাঁদাবাজি, মারধর ও হলের রুম থেকে ছাত্রদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ; কেউ কেউ আবার বিভিন্ন মামলার আসামি।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ‌্যালয় শাখার শীর্ষ নেতাদের ‘স্নেহভাজন’ এসব নেতারাই শেষ পর্যন্ত হলগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে আসবেন বলে শঙ্কা তৃণমূলর কর্মীদের।

তবে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্ব বলছে, হলগুলোতে ‘স্বচ্ছ নেতৃত্ব’ নির্বাচনে কোনো ধরনের আপস করবেন না তারা।

“যাদের নামে অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাদের কাউকে কমিটিতে রাখা হবে না,” বলেন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স।

তিনি বলেন, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত বিভিন্ন হলে যারা সক্রিয় ছিল, দলীয় নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে যারা অবিচল, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে কাজ করবে, হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা জনপ্রিয় তারাই নেতৃত্বে আসবে।

তিন বছর আগে ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর কমিটি ঘোষণা হয়েছিল।

এক বছর মেয়াদের ওই কমিটি তিন বছর পার করে রোববার হচ্ছে সম্মেলনে।

ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ‌্যালয় শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসান শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাল অপরাজেয় বাংলায় হলগুলোর সম্মেলনের উদ্বোধন হবে। এরপর কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ‌্যালয় শাখার নেতারা বসে হলগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে।”

ছাত্রলীগের হল সম্মেলন ঘিরে ছাত্র রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র খ্যাত মধুর ক্যান্টিনের পাশাপাশি ক‌্যাম্পাস ও হলগুলোতে নেতাকর্মীদের খণ্ড খণ্ড জমায়েত দেখা যাচ্ছে।

কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ

বিজয় একাত্তর হলের পদ প্রত্যাশী আরিফুল ইসলাম শেখের বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ করেছেন তার সংগঠনেরই কয়েকজন নেতাকর্মী। গত ১৩ অক্টোবর ইয়াবা বিক্রির সময় তার কক্ষ থেকে আমিনুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে পদ প্রত্যাশী মিজানুর রহমান পিকুলর বিরুদ্ধে আছে চাঁদাবাজির অভিযোগ। বর্তমান কমিটির এ সাংগঠনিক সম্পাদক বিভিন্ন সময় হলের সামনে অটোরিক্সা আটকে চাঁদা নেন বলে গণম্যাধ্যমের খবর।

ফজলুল হক মুসলিম হলের শীর্ষ পদ প্রত্যাশী রাশেদ মাহমুদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মাদকের মামলা রয়েছে।

২০১৫ সালে ২৫ জানুয়ারি বর্তমান হল কমিটির এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে মদ ও বিয়ার উদ্ধার করা হয়। পরে পুলিশ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করে।

সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সহ-সভাপতি সোহানুর রহমান খানের বিরুদ্ধে আছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এক নেতাকে মারধরের মামলা।

নীলক্ষেতের কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের সামনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় উপ-গ্রন্থাগার সম্পাদক সাগর হোসেনকে মারধরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সোহান ১ নম্বর আসামি।

মামলার ২ নম্বর আসামি মাস্টারদা সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার হোসেন এবার হল কমিটির শীর্ষ পদ চাইছেন। তার বিরুদ্ধে এ মাসের শুরুর দিকে হলের ছয়টি কক্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষের ৩০ জন ছাত্রকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

ওই ছাত্রদের রুমগুলোতে উঠিয়েছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক হোসেন, যিনি এক সময় হল ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।

সূর্যসেন হলের আরেক পদ প্রত্যাশী বেনজির আহমেদের বিরুদ্ধে আছে মাদক ব্যবসার অভিযোগ। হলের বর্তমান কমিটির এ রক্তদান ও কর্মসূচি বিষয়ক সম্পাদককে একবার মাদকসহ আটক করে মামলা দেয় তেঁজগাও থানা পুলিশ।

জহরুল হক হলের সহ-সহাপতি বুলবুল শেখের বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জ থানায় মামলা আছে। নতুন কমিটিতে সভাপতি পদ প্রত্যাশী বুলবুল ২০১০ সালের ৩ মে শেখ ‍কুদ্দুস নামে এক ব্যক্তিকে দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করেন বলে মামলায় অভিযোগ। বুলবুল ওই মামলার ১ নম্বর আসামি।

মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের উপ-পরিকল্পনা ও কর্মসূচি বিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদ লিমনের বিরুদ্ধে আছে মারধরের অভিযোগ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমারজেন্সি গেইটে গত ৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মোখলেছুর রহমানকে তিনি বেধড়ক পিটিয়েছিলেন বলে সংগঠনের কয়েকজন নেতাকর্মী জানান।