ওই মামলায় সাজার আদেশ পাওয়া এক আসামির আপিলের গ্রহণযোগ্যতার শুনানিতে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের বেঞ্চ মঙ্গলবার স্বপ্রণোদিত হয়ে এই রুল জারি করে।
আবেদনকারীর পক্ষে আদালতে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মো. সাজ্জাদ আলী। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম জহিরুল হক; তাকে সহযোগিতা করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. শহিদুল ইসলাম খান।
পরে শহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে রুলের জবাব দিতে বলেছে।”
আদেশের অনুলিপি হাতে পাওয়ার ছয় সপ্তাহের মধ্যে সাকাপত্নী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর রায় ফাঁসের এই মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যতম আসামি তার ম্যানেজার মাহবুবুল আহসান বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গত ৬ নভেম্বর হাই কোর্টে আপিল করেন।
রায় ফাঁসের ঘটনায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর সাকার স্ত্রী ও ছেলেকে খালাস দিয়ে তার আইনজীবীসহ পাঁচ জনকে কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম শামসুল আলম।
সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাকা চৌধুরীর আইনজীবী ফখরুল ইসলামকে ১০ বছরের কারাদণ্ড, সেই সঙ্গে এক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ওই অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে তাকে আরও ছয় মাসের সাজা ভোগ করতে হবে।
আর সাকার ম্যানেজার মাহবুবুল, আইনজীবী ফখরুলের সহকারী মেহেদী হাসান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মচারী নয়ন আলী ও ফারুক হোসেনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে দশ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। তা না দিলে আরও এক মাস জেলে কাটাতে হবে তাদের।
ওই সময় জামিনে থাকা ফারহাত কাদের আদালতে উপস্থিত থাকলেও তার ছেলে হুম্মামকে পলাতক দেখিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়।
তবে তার পরিবারের দাবি, তাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গত অগাস্টের শুরুতে তুলে নিয়ে গেছে।এর পর থেকে তার কোনো হদিস মেলেনি।
সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় গতবছর নভেম্বরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সালাউদ্দিন কাদেরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ মামলার রায় হয়েছিল ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর।
রায় ঘোষণার পরদিন ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন নিবন্ধক (রেজিস্ট্রার) এ কে এম নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাদী হয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে শাহবাগ থানায় একটি জিডি করেন। পরে ৪ অক্টোবর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান শাহবাগ থানায় মামলা করেন।
২০১৪ সালের ২৮ অগাস্ট ডিবির পরিদর্শক মো. শাহজাহান এ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন, যাতে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৫ জনকে সাক্ষী করা হয়।
সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সাইবার ট্রাইব্যুনালে এ মামলার বিচার শুরু হয়; সাক্ষ্য শুরু হয় ২৮ মার্চ; দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষ হয় ৪ অগাস্ট।
তদন্তের সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সালাউদ্দিন কাদেরের আইনজীবীর সহকারী মেহেদী বড় অঙ্কের অর্থের লোভ দেখিয়ে ট্রাইব্যুনালের দুই কর্মীর মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের খসড়ার অংশবিশেষ বের করেন। ওই অংশটি রায়ের দিনও আদালতে সাংবাদিকদের দেখানো হয়।