আশরাফের আমার নাম প্রস্তাবই চমক: কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদপ্রাপ্তিকে নিজের ‘পরিশ্রমের পুরস্কার’ এবং রাজনীতিবিদ হিসেবে ‘জীবনের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি’ হিসেবে দেখছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2016, 11:04 AM
Updated : 24 Oct 2016, 07:39 PM

তিনি বলেছেন, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কাছ থেকে তার নামের প্রস্তাব আসাই ছিল এবারের সম্মেলনের বড় চমক।  

দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরদিন সোমবার ধানমন্ডির একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন কাদের। 

দলের নতুন কমিটির চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান ছিলেন তার দুই পাশে। আরও ছিলেন সদ্য সাবেক কমিটির নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, হাছান মাহমুদ, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক।

দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রত‌্যাশা অনুযায়ী কীভাবে দলকে গতিশীল করে এগিয়ে নিতে চান, তার একটি রূপরেখা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন কাদের।

তিনি বলেন, সদ‌্যবিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সাত বছরের অভিজ্ঞতা ও সুচিন্তিত দায়িত্ব পালন তাকে এই দায়িত্বে ‘অনুপ্রেরণা যোগাবে’।

কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব‌্য চমক নিয়ে যে গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল, সে বিষয়েও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন কাদের।

তিনি বলেন, “চমক এটাই ছিল, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আমার নাম প্রস্তাব করেছে। এটাই হল শেখ হাসিনা।”

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত‌্যাকাণ্ডের পর বিরূপ সময়ে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমি আমার পরিশ্রমের পুরস্কার পেয়েছি। আমি আমার রাজনীতির জীবনের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি পেয়েছি।... শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ স্বীকৃতি আমাকে দিয়েছেন।”

‘মতান্তর হতে পারে, মনান্তর নয়’

শেখ হাসিনার দলে কোনো অনৈক‌্য, বিভেদ কখনো প্রশ্রয় পাবে না মন্তব‌্য করে নতুন সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে ‘পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতেই’ তিনি দলকে এগিয়ে নিতে চান।

“আজকেও কেবিনেট মিটিংয়ে তার সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। আমার অবাক লাগল। তার সব কিছুই ইজি। হি ইজ ডেফিনিটলি ইজি। বিচলিত হওয়া বা কোনো প্রকার হতাশার ছবি আমি তার মুখমণ্ডলে দেখিনি। আগের কয়েকটি কেবিনেট মিটিং থেকে আজকে তাকে আরও প্রাণবন্ত মনে হয়েছে।”

এর কৃতিত্ব দল ও দলীয় সভাপতিকে দিয়ে তিনি কাদের বলেন, “এটাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির মোটিভ। আমাদের মধ‌্যে কোনো বিষয়ে মতান্তর হতে পারে, তবে মনান্তর হবে না।”

‘ডিম ভেঙেও যেতে পারে’

ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে আগামী দিনে তিনটি এজেন্ডা নিয়ে আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেন।

প্রথম এজেন্ডা: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জঙ্গিবাদকে পরাজিত করা, পরাভূত করা, পরাহত করা।

দ্বিতীয় এজেন্ডা: আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পরবর্তী নির্বাচনের জন‌্য প্রস্তুত হওয়ার যে ডাক দিয়েছেন, সে অনুযায়ী শক্তিশালী ‘টিমওয়ার্ক’ গড়ে তোলা, তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত গণসংযোগ দৃঢ় করা। জনগণের কাছে আরও ‘গ্রহণযোগ‌্য’ হওয়ার জন‌্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ‘আচরণ পরিবর্তন’ করার কথাও বলেন নতুন সাধারণ সম্পাদক।

তৃতীয় এজেন্ডা: আওয়ামী লীগের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০৪১ সালের যে লক্ষ‌্যের কথা বলা হচ্ছিল, তা দলের এবারের ঘোষণাপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, কারণ সেই সময় আসতে এখনও ‘অনেক দিন বাকি’।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “বেশি এজেন্ডা আমরা হাতে নেব না।... এবার আমরা সীমিত রাখব। বেশি এজেন্ডা হাতে নেওয়া উচিৎ নয়।

“বেশি এজেন্ডা নিয়ে অনেক ডিম এক ঝুড়িতে রাখলে সেই ডিম আবার ভেঙেও যেতে পারে।”

যে এজেন্ডা নেওয়া হবে তা অনুধাবন করে বাস্তবায়নের জন‌্য দলীয় কর্মকাণ্ডকে এগিয়েই নেওয়াই এখন ক্ষমতাসীন দলটির লক্ষ‌্য হবে বলে জানান তিনি।

‘কাজে এখন সুবিধা হবে’

সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মন্ত্রণালয়ের কাজের কারণেই এখন তার তৃণমূলে পৌঁছে সরকারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দলের সমস‌্যা মেটানো সহজ হবে।

“আমি আগে রাস্তায় যেতাম, রাস্তার কাজ করতাম। আমার পার্টির লোকেরা কিছু কিছু সমস‌্যা নিয়ে কথা বলত। যখন যাই, তারা তাদের সমস‌্যার কথা বলে, অভিযোগের কথা বলে, নালিশও করে। এতো বড় পার্টি, ছোটখাট সমস‌্যা থাকবেই।

“এখন আমার সুবিধা হবে। আমি এখন রাস্তায় যাব, তৃণমূলে যাব। আমি এখন একদিকে রাস্তা দেখব, অন‌্যদিকে... আগে যেহেতু আমার অথরিটি ছিল না, সেজন‌্য আমি সমাধান দিতে পারতাম না, শুধু শুনতাম। এখন আমি সামাধান দিতে পারব, প্রয়োজনে মোবাইলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দলীয় সভাপতির সঙ্গে কথা বলে বা অন‌্য কারও সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে স্পটেই সিদ্ধান্ত দিতে পারব।”

কাদের বলেন, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি ‘ঘাম-শ্রম-মেধা-শক্তি-সামর্থ্য’ সবকিছু ‘উজার’ করে দেবেন। নেতৃত্বের আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবেন।

“আওয়ামী লীগ একটি বিশাল দল। এই দায়িত্ব সুবিশাল। আমি একটি অঞ্চলের হলেও আমার মধ্যে কোনও আঞ্চলিকতা থাকবে না। আমি যখন এখানে আসি, তখন একটি অঞ্চলের স্লোগান শুনেছি। তবে এখন আমি আঞ্চলিকতার ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করব। সবার ওপরে দেশ।”

সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় বিএনপি অভিনন্দন জানালেও তারা ‘কথা দিয়েও’ সম্মেলনে না আসায় সেই অভিনন্দন ‘মনে প্রাণে’ গ্রহণ করতে পারছেন না বলে জানান ওবায়দুল কাদের।  

বিএনপির মতো ‘জাম্বোজেট সাইজের’ কমিটি আওয়ামী লীগ করছে না জানিয়ে কাদের বলেন, “আজ-কালের মধ্যে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর নেতাদের নাম ও তিন থেকে চার দিনের মধ্যে সদস্যদের নাম প্রেসে জানিয়ে দেয়া হবে। সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।”