প্রধানমন্ত্রীর বক্তব‌্য গণতন্ত্রের জন‌্য বিপজ্জনক: ফখরুল

দলকে আরেকবার ক্ষমতায় আনতে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে নেতাকর্মীদের দেওয়া দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনামূলক বক্তব‌্যকে গণতন্ত্রের জন‌্য বিপজ্জনক মনে করছে বিএনপি।

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2016, 10:19 AM
Updated : 24 Oct 2016, 10:19 AM

সোমবার ঢাকায় আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “কাউন্সিলের শেষ অধিবেশনে তিনি (শেখ হাসিনা) পরিষ্কার বলেছেন, বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না। তিনি এটাও বলেছেন আগামীবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতেই হবে যেকোনো মূল্যে।”

ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনমিলনায়তনে রোববার দলের কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনা দলকে তৃতীয় দফা নির্বাচনে জয়ী হতে হবে মন্তব্য করে নেতাকর্মীদের সেজন‌্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশনা দেন।

২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। পাঁচ বছর শাসনের পর ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়।

পরবর্তীতে দেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে পুনরায় সরকার গঠন করে। আর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতাসীন হয়।

কাউন্সিল অধিবেশনে ২০১৯ সালের পরবর্তী নির্বাচনের জন্য দলকে প্রস্তুত করার ওপর গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আর সেজন্য গত সাত বছরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশে উন্নয়নের চিত্র মানুষের কাছে তুলে ধরার ওপর জোর দেন। 

বিগত সময়ে সরকারে থাকা বিএনপির কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সতর্ক করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “যারা মানি লন্ডারিং করে, পুড়িয়ে মানুষ মারে, যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেয়, তারা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব‌্যের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, “গতকাল (আওয়ামী লীগ) সভানেত্রী যে কথাগুলো বলেছেন, এটা গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক কথা। এ থেকে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে তাদের লক্ষ্য কী এবং তারা কী করতে চান?”

১৯৭২-১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “ওই সময়ে তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। তাদের দুঃশাসনের কারণে একটা ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়েছে, যা আমরা অনেকেই ভুলে গেছি। এখন গণতন্ত্রের ব্যাখ্যাও পাল্টে গেছে, সেই জায়গায় আসছে উন্নয়ন না গণতন্ত্র।তারা বলছে উন্নয়ন আগে পরে গণতন্ত্র।

“আরেকটি কথা আসছে- অ্যাফেক্টিভ গর্ভমেন্ট। অর্থাৎ যারা অত্যাচার-নির্যাতন করে, দমননীতি চালিয়ে বিরোধীদলকে নিশ্চুপ করে রাখতে পারে, সেই সরকার হচ্ছে অ্যাফেক্টিভ গর্ভমেন্ট। এই অ্যাফেক্টিভ সরকারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করে যে স্বাধীনতা অর্জনের মূল চেতনা ছিল, সেই চেতনাকে তারা হরণ করে নিয়েছে। এখন স্বপ্ন দেখছে, ৪১ সাল পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় থাকবে।”

তিনি সব দল ও মহলের মতামত নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে বলেন, “দেশে এমন একজন মানুষ নেই যে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন ভালো কাজ করেছে বলবে। প্রত্যেকটা নির্বাচনে তারা শুধু ব্যর্থই হয়নি, তারা সরকারের নীলনকশাবাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছে।

“এদেরতো বিচার হওয়া উচিৎ। সময় যদি আসে কোনোদিন, জনগণের সরকার যদি কখনও গঠন হয়, এদের অবশ্যই বিচার হবে।”

সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আফসার আহমেদ সিদ্দিকীর ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে আফসার আহমেদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন।

সংগঠনের সভাপতি প্রয়াত নেতার স্ত্রী বিএনপির সহ-সম্পাদক জাহানারা সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমুখ বক্তব্য দেন।