সবাইকে ‘ধন্যবাদ’ কাদেরের, আশরাফ চুপ

ক্ষমতাসীন দলে সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়ার পর মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে অংশ নিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বেরিয়ে এসে সবাইকে জানিয়েছেন শুভেচ্ছা।

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2016, 08:03 AM
Updated : 24 Oct 2016, 09:44 AM

তবে আওয়ামী লীগের গত দুই মেয়াদের সাধারণ সম্পাদক জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে মুখ খোলেননি।

সাংবাদিকদের হাজারও প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে গেছেন ‘পরে একদিন’ কথা বলবেন জানিয়ে।

শনি ও রোববার ২০তম জাতীয় সম্মেলনের মধ‌্য দিয়ে আগামী তিন বছরের জন‌্য পরবর্তী নেতৃত্ব বেছে নেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। গত ৩৫ বছর ধরে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে আসা হাসিনা আবারও সভাপতি নির্বাচিত হন এই কাউন্সিলে।       

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে যে পরিবর্তন আসছে না, সে বিষয়ে সম্মেলনের আগে কোনো সংশয় ছিল না কারও। আলোচনা ছিল সাধারণ সম্পাদক পদের সম্ভাব‌্য পরির্তন নিয়ে, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে চলছিল গুঞ্জন।

এরইমধ‌্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস‌্য ওবায়দুল কাদের নেত্রীর সবুজ সংকেত পেয়েছেন বলে খবর দেন তার ঘনিষ্ঠজনরা। অন‌্যদিকে সৈয়দ আশরাফ বলেন, নেতৃত্বে কে আসবে, তা কেবল শেখ হাসিনা ও তিনিই জানেন।

গুঞ্জন সত‌্যি করে রোববার কাউন্সিল শেষে নির্বাচনী অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের। ওই পদে সৈয়দ আশরাফই তার নাম প্রস্তাব করেন। বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক আশরাফ সভাপতিমণ্ডলিতে স্থান পান।

রোববার সন্ধ‌্যার ওই নাটকীয়তার পর কাদের বা আশরাফ কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদমাধ‌্যমের সামনে আসেননি। ফলে সোমবার সকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে তাদের দুজনকে নিয়ে সাংবাদিকদের আগ্রহ ছিল তুঙ্গে।

বৈঠক শেষে বেরিয়ে কাদের কেবল বলেন, “সবাইকে ধন‌্যবাদ, শুভেচ্ছা।”

এরপর কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, “ধানমন্ডি পার্টি অফিসে সবাই বসে আছে। ওখানে গিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলব।”

কাদেরের পর আশরাফ বৈঠক থেকে বেরিয়ে এলে সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ধরে একের পর এক প্রশ্ন ছুড়তে থাকেন। কিন্তু এই আওয়ামী লীগ নেতা কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এগিয়ে যান গাড়ির দিকে।

যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের তিনি বলে যান, “আজ কিছু বলব না, সময় হলে অন‌্য একদিন বলব।”

২০০৭ সালের জরুরি অবস্থার পর দুঃসময়ে দলের হাল ধরতে এগিয়ে আসা আশরাফ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে আশরাফের উপর ভরসা রেখে তাকে মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদে আনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দলের নেতা-কর্মীরা আশরাফকে সহজে পান না বলে অভিযোগের পরও বিএনপির আন্দোলন পেরিয়ে তার নির্বাচন করার দক্ষতার ওপর ভরসা রেখে যান বঙ্গবন্ধুকন‌্যা।

তবে গত বছর মন্ত্রিসভায় আশরাফকে আকস্মিকভাবে দপ্তরছাড়া করা হলে সেই ভরসায় চিড় ধরার ইঙ্গিত মেলে। অবশ‌্য সপ্তাহের ব‌্যবধানে ফের তাকে মন্ত্রিসভায় আনেন শেখ হাসিনা।

অন‌্যদিকে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত‌্যাকাণ্ডের পর বিরূপ সময়ে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী ওবায়দুল কাদের ডাকসুতে সংগঠনের হয়ে ভিপি প্রার্থী হয়েছিলেন। ছাত্রজীবন শেষে তিনি দৈনিক বাংলার বাণীতে কাজ করতেন।

আওয়ামী লীগের গত কাউন্সিলে সভাপতিমণ্ডলীতে আসার আগে তিনি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদেও ছিলেন। ২০০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার থাকাকালে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও নিয়ে তার সমালোচনা হয় সে সময়।

বিগত মহাজোট সরকারের (২০০৯-১৪) প্রথম ভাগে মন্ত্রিসভায় স্থান না পেলেও শেষ দিকে এসে কাদেরকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে বসান প্রধানমন্ত্রী।

সড়ক দেখভালের জন‌্য ছুটোছুটি করে শুরু থেকেই আলোচনায় আসেন নোয়াখালীর সাংসদ কাদের। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করলে সড়কের দায়িত্ব তার হাতেই রাখেন শেখ হাসিনা।

সম্মেলন নিয়ে মন্ত্রীরা চুপ

নতুন কমিটি গঠনের পরের দিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে বৈঠকে উপস্থিত একজন মন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মন্ত্রিসভার বৈঠকে কাউন্সিল নিয়ে কোনো কথা হয়নি, প্রধানমন্ত্রীও এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি।

“বৈঠক শুরুর বেশ কিছুক্ষণ আগেই হাসিমুখে মন্ত্রিসভা কক্ষে প্রবেশ করেন ওবায়দুল কাদের। ফুরফুরে মেজাজে সবার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। মন্ত্রিসভার সদ্যসরাও আওয়ামী লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদককে অভিনন্দন জানিয়েছেন।”

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন মন্ত্রিসভার সদস্যদের মিষ্টিমুখ করান বলেও জানান ওই মন্ত্রী। 

মন্ত্রিসভার আরেকজন সদস‌্য জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভা কক্ষে প্রবেশের পর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান নিজের লেখা পদ্যের একটি সঙ্কলন প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় ইয়াফেস ওসমান ও তার বাবা কবি শওকত ওসমানকে নিয়ে কথা বলেন। এরপর বৈঠকের কার্যক্রম শুরু হয়।