কাউন্সিলে উপস্থিত জয়কে নেতৃত্বে আনার দাবি

বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে পেয়ে উচ্ছ্বসিত আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা তাকে দলের আগামী কমিটিতে রাখার দাবি তুলেছেন।

সুমন মাহবুব জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2016, 01:31 PM
Updated : 22 Oct 2016, 03:17 PM

শনিবার সকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ‌্যানে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর শুরু হওয়া কাউন্সিল অধিবেশনে বিকালে যোগ দেন শেখ হাসিনার ছেলে জয়।

মা শেখ হাসিনার তথ‌্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকা জয় পিতৃভূমি রংপুর থেকে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে কাউন্সিল অধিবেশন চলার মধ‌্যে বিকাল সাড়ে ৩টায় উপস্থিত হন জয়। 

জয়ের উপস্থিতির কথা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ মাইকে ঘোষণা করলে প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকরা সচকিত হয়ে ওঠেন তাকে দেখার জন‌্য।

বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন

এসময় জয় মঞ্চের সামনে বসে ছিলেন। তাকে মঞ্চে ওঠার অনুরোধ জানানো হয়। তখন তাকে মঞ্চে নিয়ে যান আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ।

মঞ্চে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মাঝের আসনে বসেন জয়।

প্রধানমন্ত্রীপুত্র বসার পর সৈয়দ আশরাফ মাইকে বলেন, “জয়, তুমি একটু উঠে দাঁড়াও। সবাই তোমাকে দেখতে চায়।”

তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা আমাদের শেষ ভরসা। আর এখানে আছেন আরেকজন শেষ ভরসা। তিনিই নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নেবেন।”

দুই বারের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ বলেন, “জয় এসেছে। তার বন্ধুরা আসবে। সহপাঠীরা আসবে। দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

“আমাদের বয়স হয়েছে। খুব বেশি কিছু দেওয়ারও নাই, শক্তিও নাই।”

“নতুনদের আসার সুযোগ করে দিতে হবে। তারা যেন এই এই আওয়ামী লীগকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে,” বলেন শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিত আশরাফ।

কাউন্সিলে এসময় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রতিনিধিরা আলোচনা করছিলেন। জয় আসার পর তার কথাই প্রাধান‌্য পায় আলোচনায়।

সিলেটের নেতা শফিকুর রহমান চৌধুরী

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, “জয়কে আমরা ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে দেখতে চাই।”

শেখ হাসিনার ছেলেকে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার দাবি জানিয়ে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন বলেন, “তাকে সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আনতে হবে।”

চট্টগ্রাম (উত্তর) জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম বলেন, “আমরা সজীব ওয়াজেদ জয়কে কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেখতে চাই।”

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক বলেন, “আগামী দিনের নেতৃত্বে থাকবেন জয়।”

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জয়কে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ দেওয়ার দাবি জানান আওয়ামী লীগের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানও।

বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্রকে নেতৃত্বে আনার কথা বললেও শেখ হাসিনাকে তার নির্ধারিত কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিদায় না নেওয়ার আহ্বান জানান।

“নেত্রী আপনি আমাদের মা। ১৬ কোটি জনতার মা। জয়ের দিকে তাকিয়ে আছে ১৬ কোটি মানুষ। যে আপনার অবর্তমানে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবেন। তবে, যে যুদ্ধ আপনি শুরু করেছেন, সে যুদ্ধ শেষ করে আপনাকে বিদায় নিতে হবে।”

খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনার রশীদ শেখ হাসিনার তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টার পক্ষে সকলকে হাত উঁচু করতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “দেখেন সকলে হাত উঁচু করেছে। জয়কে সম্মানজনক পদ দেওয়া হোক।”

নৌকা আকৃতির বিশাল মঞ্চ

এই পুরোটা সময় জয় মঞ্চেই ছিলেন। তিনি কিছুক্ষণ আশরাফের সঙ্গে এবং মতিয়া চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। 

প্রথম দিনের অধিবেশন শেষে সন্ধ‌্যায় জয় তার মায়ের সঙ্গে কাউন্সিলস্থল ত্যাগ করেন।

দুপুরের পর কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী লীগের জোট শরিক ১৪ দলের পক্ষ থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া এবং কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অসিত বরণ রায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। 

এর আগে সকালে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথিরা বক্তব‌্য রাখেন।

বিকাল ৫টার পর ২০তম সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন মুলতবি করেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে কাউন্সিল অধিবেশন পুনরায় শুরু হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, রোববার কাউন্সিলর এবং তৃণমূল নেতাদের কেউ আলোচনার জন‌্য তিন মিনিটের বেশি সময় পাবেন না।

তিনি জানান, রোববার গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রের সংশোধন অনুমোদন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড গঠনের পর বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করা হবে।