দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে দলের সক্রিয়তা চাইলেন শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন উদ্বোধন করে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দলের নেতা-কর্মীদের সক্রিয়তা প্রত‌্যাশা করেছেন শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2016, 08:06 AM
Updated : 22 Oct 2016, 03:53 PM

সিকি শতকের মধ‌্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ‌্য নিয়ে সরকার কী কী করছে, শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ‌্যানে দলের সম্মেলনে তা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

ক্ষমতাসীন দলটির এবারের সম্মেলনের স্লোগানই ছিল- ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’।

আওয়াম বা জনগণের দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে তুলে ধরে তা নেতা-কর্মীদের মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “জনগণের দায়িত্ব আমাদের।”

২০৪১ সালের মধ‌্যে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার যে কাজ করছে, তা এগিয়ে নিতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর দারিদ্র্য থাকবে না। দরিদ্র্ বলে আর কিছু বাংলাদেশে থাকবে না।

তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতা, সংসদ সদস্যসহ দলের নেতা-কর্মীদের হতদরিদ্রদের তালিকা করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “স্ব স্ব এলাকায় কতজন দরিদ্র্, গৃহহারা মানুষ আছে, যাদের ধন নাই, বাড়ি নাই, নিঃস্ব-রিক্ত, প্রতিবন্ধী ও বয়োবৃদ্ধ আছে, তাদের তালিকা করেন, আমরা তাদের বাড়ি করে দেব।”

আওয়ামী লীগের সম্মেলনে শেখ হাসিনা

দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার প্রত্যয় জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত দেশ। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ কোনো বৈষম্য থাকবে না। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবস্থা নেব। শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাবে, বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে।

২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ‌্যম আয়ের দেশে উন্নীতের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রতিটি সেক্টরে যেন উন্নয়ন হয় সেজন্য ব্যাপক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। মাইক্রো ক্রেডিটের পরিবর্তে মাইক্রো সেভিং করে দারিদ্র্য দূর করতে সফল হচ্ছি।”

সমৃদ্ধ বাংলাদেশের লক্ষ‌্য নিয়ে ২০তম সম্মেলন করছে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া দলটি। সকালে বর্ণাঢ‌্য আয়োজনে সম্মেলন উদ্বোধন করেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু হত‌্যাকাণ্ডের ছয় বছর পর ৩৫ বছর আগে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। তারপর থেকে টানা দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।

বিদেশে থেকে স্বজন হারানোর বেদনা তুলে ধরার সঙ্গে তার দেশে ফেরায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আত্মত‌্যাগও উঠে আসে বঙ্গবন্ধুকন‌্যার বক্তব‌্যে।

সম্মেলন উদ্বোধন করছেন শেখ হাসিনা

“আওয়ামী লীগের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। সে সময় যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা আমাকে দেশে আসার অনুমতি দেয়নি। কিন্তু তারা শত চেষ্টা করেও পারেনি। আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি করে দেশে নিয়ে এসেছিল।”

“আমাদের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আত্মত্যাগ, শত আঘাত ও শত ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এই সংগঠনকে ধরে রেখেছে। আওয়ামী লীগ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশে সকল অর্জন এনে দিয়েছে। আজকের বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।”

প্রতিবেশী দেশগুলোসহ বিদেশি অতিথিদের সামনে বক্তব‌্যে শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের কঠোর অবস্থানের বিষয়টিও তুলে ধরেন।

“আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। জিরো টলারেন্স এগেইনস্ট টেররিজম। আমরা জঙ্গিবাদকে কখনোই প্রশ্রয় দেব না। এ দেশের ভূ-খণ্ড কেউ কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে পারবে না।”

বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ‘প্রাচ্য-পাশ্চাত‌্যের সেতুবন্ধন’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনাও জানান তিনি।

নৌকা আকৃতির বিশাল মঞ্চে বক্তব‌্য রাখেন শেখ হাসিনা

সভাপতির ভাষণের পর সম্মেলন মুলতবি করেন শেখ হাসিনা। দুপুরে খাবারের বিরতির পর সোহরাওয়ার্দী উদ‌্যানে কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়।॥ এই অধিবেশনেই দলের ভবিষ‌্যৎ কর্মপন্থা ও নতুন নেতৃত্ব গঠিত হবে।

গত ৩৫ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসা শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেন, অবসরে যাওয়ার সুযোগ পেলে তিনি ‘খুশি’ হবেন। তবে দলীয় নেতারা বলে আসছেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই।

আলোচনা চলছে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে। সভাপতির পর সাংগঠনিক দিক দিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই পদে গত দুই বারের সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামই থাকছেন, না নতুন কোনো মুখ দেখা যাবে- সে প্রশ্ন ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ‌্যমগুলোতেও।