আমি আওয়ামী লীগের সন্তান: আশরাফ

সাধারণ সম্পাদক পদে আর না থাকার গুঞ্জনের মধ‌্যে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বক্তব‌্যে দল ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার প্রতি নিজের আনুগত‌্যের কথা জানালেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2016, 06:20 AM
Updated : 24 Oct 2016, 11:23 AM

শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ‌্যানে সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাধারণ সম্পাদকের লিখিত বক্তব‌্য নির্দিষ্ট থাকলেও তা সবাইকে পড়ে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আবেগময় ভাষায় কিছু কথা বলেন দুই বারের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ।

তিনি বলেন, “প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আওয়ামী লীগের আমি সন্তান। আওয়ামী লীগের ঘরেই আমার জন্ম। আওয়ামী লীগ যখন ব্যথা পায়, আমারও কিন্তু হৃদয়ে ব্যথা লাগে। আওয়ামী লীগের একটা কর্মী যদি ব্যথা পায় সেই ব্যথা আমিও পাই।”

আশরাফ বলেন, “আমি দুই দুই বার সম্পাদক ছিলাম। শেখ হাসিনার উপদেশে দলকে পরিচালনা করেছি। আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো ভাঙন ধরেনি, কোনো সিজম তৈরি হয়নি।

“আমরা সবাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমি এবং আওয়ামী লীগের লাখ লাখ নেতা-কর্মী শেখ হাসিনার পক্ষে কাজ করেছি। আজকে আমাদের দল যে কোনো সময়ের থেকে শক্তিশালী।”

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে আশরাফ দুই বার বঙ্গবন্ধুকন‌্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক থাকার পর এবারের কাউন্সিলে আর ওই পদে থাকছেন না বলে গুঞ্জন চলছে।

তবে এই বিষয়ে আশরাফ একদিন আগে বলেন, নতুন নেতৃত্বে কারা আসছেন, তা দলীয় সভানেত্রীর বাইরে আর শুধু তিনিই জানেন।

গত বছর মন্ত্রিত্ব হারানোর পরও আশরাফ বলেছিলেন, তার রক্ত কখনও বেঈমানি করে না। এক সপ্তাহের মাথায় আশরাফকে মন্ত্রিত্বে ফিরিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

সোহরাওয়ার্দী উদ‌্যানে সম্মেলনে এই নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব‌্য রাখেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম

সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম

দলীয় কর্মীদের ঐক‌্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে সম্মেলনে আশরাফ বলেন, “আওয়ামী লীগ শুধু একটা রাজনৈতিক দল নয়। হাজারো শহীদের রক্ত, জাতির পিতার রক্ত, জাতীয় চার নেতার রক্ত, হাজার হাজার নেতাকর্মীর আত্মত্যাগ।

“আওয়ামী লীগ শুধু একটা রাজনৈতিক দল নয়, এটা অনুভূতি। এই হাজারো বন্ধুর রক্ত, চার নেতার রক্ত, ভাষা আন্দোলনের রক্ত, সেই অনুভূতি। এই অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে- নাম আওয়ামী লীগ।”

“আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য এদেশে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে…. এরপরেও কিন্তু আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করতে পারে নাই এবং কোনো দিনই পারবে না, কোনো দিনই পারবে না। জননেত্রী যতদিন আছেন উনিই নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু এই জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি না থাকেন, আওয়ামী লীগ কিন্তু মরবে না। আওয়ামী লীগ অজেয় রাজনৈতিক সংগঠন।”

“আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি পৃথিবীর কোনো শক্তি নাই এই আওয়ামী লীগকে স্তব্ধ করে দিতে পারে,” নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন আশরাফ।

এই বক্তব‌্য দেওয়ার আগে তিনি বলেন, “সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট বই আকারে প্রকাশ করা হয়েছে, এটা পড়তে অনেক সময় লাগবে। তাই আপনাদের অনুরোধ করব যাওয়ার সময় এটা আপনারা নিয়ে যাবেন।”

লিখিত বক্তব‌্যে আশরাফ দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসরণ করে জনগণকে আস্থায় নিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

“ব্যক্তি ও দলের চেয়ে দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে দলীয় সকল স্তরের কর্মকাণ্ড পরিচালিত করতে হবে। দলীয় ঐক্য ও সংহতিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।”

দ্বন্দ্ব-সংঘাত পরিহার করে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার আহ্বান জানিয়ে আশরাফ বলেন, “কারও ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডে দল যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।”

দলে অশুভ শক্তির চর, সন্ত্রাসী, মাদকসেবী, অসৎ ও বিতর্কিত ব্যক্তির অনুপ্রবেশ যেন না ঘটে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন আশরাফ।

গত সম্মেলনে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর শেখ হাসিনার সঙ্গে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম (ফাইল ছবি)

বিরোধী দলের ‘অপপ্রচারের’ জবাব দেওয়া, জঙ্গি গোষ্ঠীর অপতৎপরতা নিয়ে জনগণকে সচেতন করা, ১৪ দল ও মহাজোটের ঐক্যকে তৃণমূলে সম্প্রসারণ এবং আগামী নির্বাচনে জয়ের জন্য জনগণকে সংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান আশরাফ।

আওয়ামী লীগের জনসমর্থনের শক্তির জায়গাটির দিকে সবাইকে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “কাউন্সিলে হাজার হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের অংশগ্রহণই প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ জনগণের দল।

“আজকে এমন একটি দিনে কাউন্সিল হচ্ছে যখন দেশ নিয়ে আবার নতুন করে শুরু হয়েছে ষড়যন্ত্র। উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীর মাধ্যমে জনমনে ভীতির সঞ্চার করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে এই অশুভ শক্তি। চক্রান্ত চলছে একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনার, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার।”

কাউন্সিল আয়োজনে কোনো ক্রটি-বিচ্যুতি থাকলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সে জন‌্য দুঃখও প্রকাশ করে আশরাফ বলেন, “আগামীতে বাংলাদেশ কোন দিকে যাবে সেজন্য এই কাউন্সিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

“আসুন আমরা নিজেদের প্রশ্ন করি- এদেশে গণতন্ত্র থাকবে না কি অনির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনা করবে? এদেশে কি আবার উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীর বিচরণ ভূমি হবে না কি উদার গণতান্ত্রিক দেশ হবে? এদেশে কি আবার বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হবে না কি আইনের শাসন চলবে? এদেশ কি সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন যুদ্ধবিধস্ত দেশে পরিণত হবে না কি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে যাবে?”

সরকারের সাফল্য ও অর্জন জনগণের সামনে তুলে ধরার তাগাদা দিয়ে আশরাফ বলেন, মনে রাখতে হবে প্রতিটি নেতা-কর্মীই দলের একেকজন প্রচারক।