স্বপ্ন পূরণের দল গোছাতে সম্মেলনে আওয়ামী লীগ

সিকি শতক পর বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার যে স্বপ্ন শেখ হাসিনা দেখছেন, সেই লক্ষ‌্য পূরণে ‘সহায়ক নেতৃত্ব’ বের করে আনার পরিকল্পনা নিয়ে সম্মেলনে বসছে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ।

সুমন মাহবুবও মোবারক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2016, 08:16 PM
Updated : 21 Oct 2016, 09:25 PM

দেশের অন‌্যতম প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলের সারা দেশের নেতাকর্মীরা নির্ধারিত সময়ের এক বছর পর শনিবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের বিংশতম জাতীয় সম্মেলনে মিলিত হচ্ছেন।

দিন বদলের স্বপ্ন দেখিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় ফেরা আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আরও পাঁচ বছরের জন‌্য দেশ শাসনের দায়িত্ব পায়। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালে মধ‌্যে বাংলাদেশকে মধ‌্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ‌্যে উন্নত রাষ্ট্রের পর্যায়ে পৌঁছে দিতে তার সরকারের কর্মসূচি সাজিয়েছেন।      

সকাল ১০টায় তিনিই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুই দিনের এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। এরপর দুদিনের কাউন্সিলে গঠিত হবে আগামী নেতৃত্ব।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির বৈঠকে তিনি বলেন, “আমরা কাউন্সিল সফলভাবে করব। এর মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে। সরকার তো দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করবেই। দলের পক্ষ থেকেও সহযোগিতা করতে হবে, যাতে আমরা এই কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে করতে পারি।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দলকে গত ৩৫ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসা তার কন‌্যা শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছেন, অবসরে যাওয়ার সুযোগ পেলে তিনি ‘খুশি’ হবেন।

তবে দলীয় নেতারা বলে আসছেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। আর শেখ হাসিনা কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠনের কথা বললেও দলের নেতারা তার দিকেই তাকিয়ে আছেন।

সম্মেলনের আগে নেতাকর্মীদের মধ‌্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে। সভাপতির পর সাংগঠনিক দিক দিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই পদে গত দুইবারের সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামই থাকছেন, না নতুন কোনো মুখ দেখা যাবে- সে প্রশ্ন ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ‌্যমগুলোতেও।

এছাড়া জাতীয় কমিটি, সভাপতিমণ্ডলী ও কার্যনির্বাহী পরিষদের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় কারা বাদ পড়ছেন, নতুন কারা যোগ হচ্ছেন- সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টায় নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে ঘুরছে অনেকের নাম।  

তবে কাউন্সিলে খুব বেশি পরিবর্তন আসছে না বলেই ইংগিত মিলেছে সাধারণ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের কথায়।  

সম্মেলনের আগের রাতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব‌্যবস্থায় কাউন্সিলে খুব বেশি পরিবর্তন হয় না। এটা ইনক্রিমেন্টাল হয়। যারা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন, বা অসুস্থ আছেন, তাদেরকে বাদ দিয়ে নতুন ইনডাক্ট করা হয়। প্রবীণ-নবীণের সমন্বয়েই নতুন কমিটি করা হবে।”  

আর সাধারণ সম্পাদক পদে চমকের সম্ভাবনা নিয়ে বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের জবাব, “আমি জানি কী হবে, আমি আর সভানেত্রী ছাড়া কেউ জানে না হোয়াট উইল গোয়িং টু হ‌্যাপেন। আফটার দ‌্য‌ থ্রিল, আপনারা জানবেন হোয়াট হ‌্যাপেন্ড।”

২০তম সম্মেলন

>> স্লোগান: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার।

>> অংশ নেবেন যারা: ছয় হাজার ৫৭০ জন কাউন্সিলর এবং সম সংখ্যক ডেলিগেট। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা এবং বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ আহমেদ জয় থাকছেন কাউন্সিলর হিসেবে।

>> কাউন্সিল: সম্মেলনের উদ্বোধনের পর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে রুদ্ধদ্বার কাউন্সিল অধিবেশনটি হবে।

>> কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য দলের উপদেষ্টা পরিষদের তিন সদস্যদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অন্য দুই সদস্য হলেন, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও রাশেদুল আলম।

>> অতিথি: ভারত, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ ১১টি দেশের বিভিন্ন দলের ৫৫ জন রাজনীতিবিদ আসছেন সম্মেলনে অতিথি হিসেবে। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদেরও সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

>> আগের সম্মেলন: আওয়ামী লীগের ১৯তম জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর। গতবছর ডিসেম্বরে সেই কমিটির মেয়াদপূর্তির পর মার্চ ও জুলাইয়ে দুই দফা পিছিয়ে এবারের সম্মেলন হচ্ছে।

যা কিছু পরিবর্তন

দুই বছরের জরুরি অবস্থা কাটিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পরের বছর যে সম্মেলন আওয়ামী লীগ করেছিল, তাতে সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছাড়াও বেশ কিছু নতুন মুখ এসেছিল কেন্দ্রীয় কমিটিতে।

সেই মহাজোট সরকারের মাঝামাঝি সময়ে এসে ২০১২ সালের কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে খুব বেশি নড়চড় করেননি দলীয় সভানেত্রী। অনেকে টানা সাত বছর ধরে একই দায়িত্বে থাকায় সংগঠনে গতি আনতে পরিবর্তনের প্রত‌্যাশা রয়েছে তৃণমূলের নেতাদের মধ‌্যেও।

কাউন্সিলর হিসেবে ঢাকায় আসা খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহেদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগামী তিন বছরের জন‌্য এই সম্মেলনে একটি ‘শক্তিশালী কমিটি’ পাওয়ার আশা করছেন তারা, যে কমিটি ‘সক্রিয়ভাবে’ কাজ করবে।

আর নরসিংদী জেলার কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম খান বীরু বলেন, “এই সম্মেলন থেকে যোগ্য নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে, এটাই আশা করি।”

নতুন নেতৃত্বের স্থান সঙ্কুলানে এবারের সম্মেলনে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের আকার বাড়ানোর উদ‌্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে গঠনতন্ত্র উপ-কমিটির প্রস্তাব গত ১৯ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সম্মতিও পেয়েছে।

# ৭৩ সদস‌্যের কার্যনির্বাহী সংসদের আকার বেড়ে হবে ৮১ সদস‌্যের

# এর মধ‌্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যের সংখ্যা বাড়বে ৪ জন

# কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যের সংখ্যা বাড়বে ২ জন

# যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক বাড়বে একজন করে

আওয়ামী লীগের অঙ্গীকারের অনুচ্ছেদেও কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ ও সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতার বিলোপ সাধন’ এর জায়গায় সাম্প্রদায়িকতার পাশে যুক্ত হবে ‘মৌলবাদ’ শব্দটি।

আর ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ: সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন’ লাইনে

সন্ত্রাসের আগে ‘জঙ্গিবাদ’ শব্দটি বসবে।

ইউনিয়ন কাউন্সিল পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে ‘স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড’ গঠন করা হবে।

জেলা, মহানগর ওয়ার্ড, থানা, পৌর এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটির সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়েও গঠনতন্ত্র উপ-পরিষদ একটি প্রস্তাব দিয়েছে। সেই সঙ্গে জাতীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা ১০ জন বাড়িয়ে ১৮০ জন করার প্রস্তাব রয়েছে।

জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত ভেঙে প্রার্থী হলে সরাসরি দল থেকে বহিষ্কার করার কথা বলা হয়েছে একটি প্রস্তাবে।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রের সংশোধন ও সংযোজনগুলো কাউন্সিলে অনুমোদন করা হবে।

ব‌্যাপক আয়োজন

জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশাপাশি সাজানো হয়েছে পুরো রাজধানীকে।

ঢাকার প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ সড়কে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে তৈরি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত তোরণ। প্রধান সড়কগুলোর দুই পাশে বিভিন্ন রঙের পতাকা দিয়ে সাজানো হয়েছে।

ক্ষমতাসীন দলের এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় শনি ও রোববার যানবাহন চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে।

# সম্মেলস্থল সোওরাওয়ার্দী উদ্যানের দক্ষিণ পাশে মঞ্চ তৈরি হয়েছে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নৌকার আদলে।

# মঞ্চে থাকছে দুটি স্তর। উপরের স্তরে দলের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা বসবেন। নিচের স্তর রাখা হয়েছে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার জন্য।

# বিদেশি অতিথিদের বসার ব্যবস্থা হয়েছে মঞ্চের সামনে। তাদের পেছনে অতিথি, কাউন্সিলর ও পর্যবেক্ষক মিলিয়ে ২০ হাজার মানুষের বসার ব‌্যবস্থা থাকছে।

# মঞ্চের পেছনে দলীয় নেতৃবৃন্দসহ বিদেশি অতিথিদের বিশ্রামের জন্য আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

# মঞ্চের দুপাশে আওয়ামী লীগের ৭৮টি স্ট‌্যান্ডে উড়বে সাংগঠনিক জেলা কমিটির নেতাদের দলীয় পতাকা।

# উদ‌্যানের উত্তরের ফটকে তৈরি করা হয়েছে একটি তোরণ। অন্য পাঁচটি প্রবেশপথ রঙিন পতাকায় সাজানো হয়েছে। উদ্যানের প্রবেশের পথ থেকে মঞ্চ পর্যন্ত শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি।

# শিশু পার্কের পাশের ফটকটিতে রয়েছে একটি বড় তোরণ। ওই ফটক দিয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ঢুকবেন। বিদেশি অতিথিরাও ওই ফটক ব্যবহার করবেন। ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের ফটকটি রাখা হয়েছে ‘ভিআইপি’ অতিথিদের জন্য।

# মঞ্চ ও আশপাশের ২৮টি এলিডি পর্দায় দেখা যাবে পুরো অনুষ্ঠান। উদ্যান এলাকা থাকবে ওয়াইফাইয়ের আওতায়। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ফেইসবুক এবং ইউটিউবে লাইভ করা হবে।

# নিরাপত্তার জন্য শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া সর্বসাধারণের প্রবেশ সংরক্ষিত করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের পাশাপাশি যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সদস্যরা স্বোচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করবেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ‌্যানে সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের প্রস্তুতি শতভাগ সম্পন্ন।”

যা যা হবে

>> সকাল ১০টায় দলীয় সভানেত্রী আসবেন

>> পতাকা উত্তোলন

>> সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

>> ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠ

>> শোক প্রস্তাব পাঠ

>> দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন

>> অর্ভ্যথনা উপ-পরিষদের আহ্বায়কের বক্তব্য

>> সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন পেশ

>> সভাপতির বক্তব্য

>> মধ্যাহ্ন ভোজ

>> কাউন্সিল অধিবেশন

>> সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

>> ২৩ অক্টোবর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে কাউন্সিল অধিবেশন

কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের প্রতি নির্দেশনা

আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, “বিগত দিনে বিএনপি-জামায়াত জোট আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল। সম্প্রতি জঙ্গিবাদের ভয়াবহতা দেখা দিয়েছে, যা সরকার শক্ত হাতে দমন করতে সক্ষম হয়েছে। সরকারের দক্ষ নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এসেছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এবারের সম্মেলন থেকে দলীয় সভানেত্রী এ বিষয়গুলো জাতির কাছে তুলে ধরবেন।”

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম বলেন, “আওয়ামী লীগের সম্মেলন মানেই ভালো কিছু। আমাদের এই সম্মেলন থেকে দেশবাসীকে সুনির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য ও বার্তা দেওয়া হবে।”

উদ্বোধনী অধিবেশনেই দলের সাধারণ সম্পাদক কিছু নির্দেশনা দেবেন কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের উদ্দেশে।

সংগঠনে অসৎ ও বিতর্কিত ব্যক্তির অনুপ্রবেশ যেন না ঘটে, কারো ব্যক্তিগত কাজে যেন সংগঠনের ক্ষতি না হয়, দ্বন্দ্ব-সংঘাত পরিহার করে দলকে কীভাবে আরও সুসংহত করা যায়, সরকারের সাফল্য নাগরিকদের মাঝে তুলে ধরতে কী করণীয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের জন্য কীভাবে কাজ করতে হবে; তৃণমূল পর্যায়ে ১৪ দল ও মহাজোটকে আরও ঐক্যবদ্ধ করতে কী করতে হবে এবং জঙ্গী তৎপরতা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে করণীয় কী- সেসব বিষয়ে বক্তব‌্য থাকবে তার নির্দেশনায়।

৬৭ বছরের ইতিহাস

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরনো ঢাকার রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা। প্রতিষ্ঠাকালে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি এবং শামসুল হক সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।

১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরের বছর ঢাকার 'মুকুল' প্রেক্ষাগৃহে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।

আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যাত্রা শুরু করলেও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। নতুন নাম হয়-‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। স্বাধীনতার পর ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নাম নেয় দলটি।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনৈতিক সংগ্রাম, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়সহ বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ৫০ এর দশকেই আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। তবে প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি আব্দুল হামিদ খান ভাসানী রাজনৈতিক মতভিন্নতার জন্য ১৯৫৭ সালে দল ছেড়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন।

এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘসময় এই দলটি সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন করে জনগণের মধ্যে আস্থার স্থান তৈরি করে। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দেন বঙ্গবন্ধু, যাকে বাঙালির মুক্তির সনদ নামে অভিহিত করা হয়। ছয় দফার ভিত্তিতেই ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে।

এরপর পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ শুরু করলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যূদয় ঘটে বাংলাদেশের।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং ৩ নভেম্বর কারাগারের অভ্যন্তরে চার জাতীয় নেতাকে হত্যার পর সামরিক শাসনের নির্যাতন আর নিপীড়নের মধ্যে পড়ে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি। নেতাদের মধ্যেও দেখা দেয় বিভেদ।

১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলীয় সভাপতি হিসাবে দেশে ফিরে কয়েকভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করেন, আন্দোলন শুরু করেন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে।

২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। পাঁচ বছর শাসনের পর ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। কিন্তু, দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, কারচুপির মাধ্যমে তাদের হারানো হয়েছে।

পরবর্তীতে দেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে পুনরায় সরকার গঠন করে। আর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতাসীন হয়।