আ. লীগ: সহ-সম্পাদকের পদ কমছে, বেড়েছে দৌড়-ঝাপ

পুরাতন দল আওয়ামী লীগে ‘বড়দের’ ভিড়ে মূল কমিটিতে ঠাঁই না পাওয়া সাবেক ছাত্রনেতাদের উপ কমিটিতে যে সহ-সম্পাদকের পদ দেওয়া হয় তার সংখ্যা এবার কমছে বলে নেতারা জানিয়েছেন।

কাজী মোবারক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2016, 05:21 PM
Updated : 19 Oct 2016, 08:08 PM

এ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে গঠনতন্ত্রে একশ পদের বিপরীতে থাকা সাড়ে চারশ’র বেশি সহ-সম্পাদকের সঙ্গে নতুন করে এ পদ প্রত্যাশীদের মাঝে।

আগামী ২২-২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে নিয়মিত ভিড় হচ্ছে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় ঘিরে।

কার্যালয়ের সামনের রাস্তা, অফিসের বাইরে বসার জায়গা ও সভাকক্ষে যাদের দেখা যায়, তারা অধিকাংশই উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ও এ পদ প্রত্যাশী সাবেক ছাত্রনেতা।

সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই এই কার্যালয়ে নিয়মিত সময় দিচ্ছেন তারা।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে উপ-কমিটির নেতা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা।

বর্তমান উপ-কমিটিতে সহ-সম্পাদক হিসেবে ৪৬৭ জনের তালিকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রয়েছে বলে দলের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ জানিয়েছেন।

২০১২ সালে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিলের পর কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে উপ-কমিটির নেতাদের নাম প্রকাশ হয়। সে সময় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক হিসেবে ৬৬ জনের নাম এসেছিল। এরপর কয়েক ধাপে এই সংখ্যা বেড়ে ৪৬৭ জন হয়।

উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের।

গত মাসের শেষদিকে আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি দপ্তর উপ-পরিষদের এক সভায় তিনি বলেন, “উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ব্যাঙের ছাতার মতো বেড়েছে। পার্টি অফিসের সামনে যার সাথে ধাক্কা লাগে সেই বলে আমি আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক। কিন্তু তারা যে উপ কমিটির সহ-সম্পাদক এটা তারা বলে না।”

উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক এবার একশ’র মধ্যে রাখার ঘোষণা দেন তিনি।

তার ওই ঘোষণা এবার বাস্তবায়ন হতে চলেছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।

ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই ভিড়ে রয়েছেন উপ-কমিটির নেতারা।

তিনি সম্প্রতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা আমাদের আগেরই সিদ্ধান্ত। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সহ-সম্পাদক করা হবে। আর সেটা একশ’র মধ্যেই রাখা হবে।”

কেন্দ্রীয় নেতাদের এই মনোভাবে উৎকণ্ঠায় পড়েছেন বর্তমানের সহ-সম্পাদকরা।

আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডি কার্যালয়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের অধিকাংশই এই পদ ধরে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা চাচ্ছেন উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকের তালিকায় নিজের নাম লেখাতে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সহ-সম্পাদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শেষ পর্যন্ত যেহেতু কমিয়েই ফেলা হবে তবে কেন এত লোককে এই পদ দেওয়া হয়েছিল। আমরা পদ না পেলেও দলের জন্য কাজ করে যাব।

“আর এখন যারা বাদ পড়বে তারা পরে কী পরিচয় দেবেন সেটা নিয়েও ভাবার দরকার আছে।”

ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা বলেন, “যারা দীর্ঘ দিন ধরে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের যোগ্যতা, দক্ষতা, পরিশ্রম, বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের মাধ‌্যমে বিভাগভিক্তিক মূল্যায়ন চাই আমরা।”

বর্তমান উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের কয়েকজনের যৌক্তিক মূল্যায়ন প্রত্যাশা করেছেন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছাত্রলীগ করে আসা অনেকে।

নেতাকর্মীদের ভিড়ের এই চিত্র আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডি কার্যালয়ের সামনের বসার জায়গায়, এখানে নিয়মিত দেখা মেলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের।

এদের মধ‌্যে ঢাকা অঞ্চলের নজরুল ইসলাম বাবু, ব‌্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন, ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম ও আবুল কালাম আজাদ (কালাম); ফরিদপুর অঞ্চলের বাহাদুর বেপারী, লিয়াকত শিকদার, ইকবাল হোসেন অপু ও দেলোয়ার হোসেন; ময়মনসিংহ অঞ্চলের অজয় কর খোকন, মারুফা আক্তার পপি, মোরশেদুজ্জামান সেলিম, শাহ মোস্তফা আলমগীর ও রাশেদুল মাহমুদ রাসেলের কথা বলছেন তারা।

এছাড়া রাজশাহী অঞ্চলের শাখাওয়াত হোসেন শফিক, মাজহারুল ইসলাম মানিক, আরিফুজ্জামান টুটুল ও খ ম হাসান কবির আরিফ; রংপুর অঞ্চলের ইকবালুর রহিম ও মাহমুদুল হাসান রিপন; বরিশাল অঞ্চলের ইসহাক আলী খান পান্না, শাহ আলম, এ কে এম আজিম ও বলরাম পোদ্দার; খুলনা অঞ্চলের সাইফুজ্জামান শিখর, অশিত বরুন বিশ্বাস ও বদিউজ্জামান সোহাগ; চট্রগ্রাম অঞ্চলের মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, শাহজাদা মহিউদ্দিন, মাহফুজুল হায়দার রোটন ও সালাউদ্দিন মাহমুদ চৌধুরীর কথা উঠছে।