৭০ বছরে শেখ হাসিনা

ঊনসত্তর বছর পেরিয়ে সত্তরের কোটায় পা রাখলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2016, 06:42 PM
Updated : 27 Sept 2016, 06:42 PM

আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ৬৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হলেও লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুতে মূল কর্মসূচিগুলো স্থগিত করা হয়েছে।

গত কয়েক বছরের মতো এবারও জন্মদিনে দেশের বাইরে থাকছেন শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে জন্মদিন কাটাবেন তিনি।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান শেষে প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিবারের সঙ্গে আছেন।

কানাডায় গ্লোবাল ফান্ড সম্মেলন এবং জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী। সফর শেষে তার ২৬ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরার কথা থাকলেও পরে তা পেছানো হয়। তিনি ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থেকে রওনা হয়ে পরদিন ঢাকা পৌঁছাবেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের প্রথম সন্তান শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায়।

১৯৬৮ সালে বিজ্ঞানী এম ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি এক ছেলে (সজীব আহমেদ ওয়াজেদ) ও এক মেয়ের (সায়মা ওয়াজেদ পুতুল) জননী।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে দলটি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠিত হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুযারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

ষাটের দশকে ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের কর্মী হিসাবে হাসিনার রাজনৈতিক জীবনের শুরু। ১৯৬৬-৬৭ সালে ছাত্রলীগ থেকে ইডেন কলেজের ছাত্রী সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকাকালে ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়ই শেখ হাসিনা মা, বোন শেখ রেহানা ও ছোট ভাই শেখ রাসেলের সঙ্গে ঢাকায় বন্দি ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর একদল সদস্য সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করার সময় হাসিনা দেশে ছিলেন না। সেসময় তিনি স্বামী এম ওয়াজেদ মিয়ার জার্মানির কর্মসূত্রে বেলজিয়ামে অবস্থান করছিলেন।

এরপর দীর্ঘ সময় দেশে ফিরতে পারেননি শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাসিনার অনুপস্থিতিতেই আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তাকে দলীয় প্রধান নির্বাচিত করা হয়। ওই বছরের ১৭ মে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেন তিনি।

শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এবং অন্য রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী তীব্র গণআন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে জয়ী হয়। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বেই তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতন এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিজয় অর্জন করে আওয়ামী লীগ।

বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় প্রধান বিরোধী দলের নেতা হিসাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে প্রথমে ১৪ দলীয় জোট এবং পরে মহা ঐক্যজোট গড়ে ওঠে। ১৪ দল ও মহা ঐক্যজোটের আন্দোলনের মুখে চারদলীয় জোট সরকার আমলের রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দীন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের দায়িত্ব ছেড়ে দিলে ড. ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে। এর ছয় মাসের মাথায় (১৬ জুলাই) চাঁদাবাজিসহ দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় শেখ হাসিনাকে। সংসদ ভবনে স্থাপিত বিশেষ কারাগারে প্রায় ১১ মাস বন্দি ছিলেন তিনি।

দলীয় সভানেত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি নিলেও মঙ্গলবার বিকালে লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুতে সেগুলো বাতিল করা হয়।

তবে সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আলোচনা সভা করবে যুবলীগ।

এছাড়া সকাল ১০টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এবং প্যাগোডা, গির্জাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা হবে। বিভিন্ন এতিমখানাসহ দুঃস্থদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করবে আওয়ামী লীগ।