প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সত্যতা নেই: বিএনপি

বাংলাদেশে রাজনীতি করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ‘সত্যতার লেশ মাত্র নেই’ বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2016, 08:24 AM
Updated : 25 Sept 2016, 10:12 AM

ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া শেখ হাসিনার এক সাক্ষাৎকারের প্রতিক্রিয়ায় রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এ অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, “এখানে (বাংলাদেশ) স্বাভাবিক পরিস্থিতি একেবারেই নাই। সভা-সমাবেশ-মিছিল-এটা একেবারেই আমরা করতে পারি না। কখনো কখনো এটা একেবারে সীমাবদ্ধ সময়ের মধ্যে করা যায়। বাইরে তো সমাবেশ করার কোনো সুযোগ নেই। একটা ঘরের মধ্যে, একটা সীমাবদ্ধ জায়গার মধ্যে এটা চব্বিশ ঘণ্টা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১২ ঘণ্টা আগে আমরা অনুমতি পাই।

“স্বভাবগতভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্য তার মতো করে দিয়েছেন, যার মধ্যে সত্যতার কোনো লেশমাত্র নেই।”

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন শেষে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারটি ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের ওয়েবসাইটে অডিও আকারে প্রকাশ করা হয়েছে শনিবার।

সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, “কথা তো কারও কাছ থেকে আমরা কেড়ে নিচ্ছি না। যার যার ইচ্ছামতো কথা বলেই যাচ্ছে। তারা মিটিং করছে, র‌্যালি করছে, সবই তারা করছে। রাজনীতির যথেষ্ট সুযোগ আছে, এর মধ্যে কোনো সন্দেহ নাই।”

এছাড়াও সেখানে বাংলাদেশের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ও সাফল্যের কথা তুলে ধরেছেন এবং জনগণকে সচেতন করে জঙ্গিবাদ দমনে সম্পৃক্ত করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা শামসুজ্জামান দুদু ওই সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ টেনে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ভয়েস অব আমেরিকা একটি আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যম। তারা জেনেবুঝে প্রধানমন্ত্রীকে ‘দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ আছে কিনা’ এরকম প্রশ্নটা করেছেন।

“… এখানে যেহেতু সংগঠনের অধিকার নেই, মত প্রকাশের অধিকার নেই, সভা-সমাবেশ করার অধিকার নেই, গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির ছিঁটেফোটাও নেই, এটা জানে বলে তারা এ ধরণের প্রশ্ন করেছেন।”

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়েও কথা বলেন এই বিএনপি নেতা।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “সুন্দরবনের পাশে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে ইউনেসকো। এই প্রকল্প হলে তাতে সুন্দরবনের অপূরণীয় ক্ষতি হবে উল্লেখ করে প্রকল্পটি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু সরকার গায়ের জোরে এবং জনস্বার্থ ও সুন্দরবনের ঝুঁকিকে পাত্তা না দিয়ে রামপালে বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে অনঢ় অবস্থান দেখাচ্ছে, যা গোটা জাতিকে বিস্মিত করেছে।

“ইউনেসকো বলেছে, তাদের কাছে যতটুকু তথ্য ও প্রতিবেদন এসেছে তার ভিত্তিতেই তারা নিশ্চিত যে, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।

“আমি বিএনপির পক্ষ থেকে সুন্দরবন রক্ষার্থে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সরকারের একগুঁয়েমি মনোভাবের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”

নির্বাচন প্রশ্নে সংলাপ জরুরি

দুদু বলেন, “আমরা নির্বাচন নিয়ে সংলাপ চেয়েছি। গণতন্ত্র মানে আলোচনা, গণতন্ত্র মানে সংলাপ, গণতন্ত্র মানে আপোষ। আমরা একটা নির্বাচন চাই, আমরা ভোট দিতে চাই, সেই পরিবেশটা চাই। ২০১৪ সালের নির্বাচনে পরে এই সরকারের মনোনীত নির্বাচন কমিশন বা এই সরকারের অধীনে নির্বাচন কী হবে- নতুন করে বলার অবকাশ নাই।

সেজন্য আমরা চাইছি, সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, সবাই যাতে ভোট দিতে পারে। আমার নেত্রী বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নাম নিয়ে যদি আপত্তি থাকে, আমাদের কোনো অসুবিধা নাই, অন্য কোনো নামে হতে পারে। এটা সরকার, বিরোধী দল, পেশাজীবী, সাংবাদিক নানা পেশার মানুষকে মিলে উদ্যোগ নিলে একটা কিছু হতে পারে। তড়িঘড়ি করে নির্বাচন করার পরিস্থিতি থেকে আমরা বেরুতে চাই।”

এই বিএনপি নেতা বলেন, “আমরা নির্বাচন চাই, মধ্যবর্তী না, এই সরকারের অধীনে না। একটি গ্রহণযোগ্য সরকারের অধীনে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে এবং একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচন চাই।”  

গাজীপুরের নির্বাচিত মেয়র ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এমএ মান্নানকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মামলায় আটক দেখিয়ে বন্দি করে রাখার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানান দুদু।

একসঙ্গে ‘বিএনপিকে জড়িয়ে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদের ‘কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের’ও নিন্দা জানান তিনি।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সারোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, তকদির হোসেন মো. জসিম ও মোস্তফা শরীফ টিটু সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।