‘মার্কিন সহায়তায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার’ আশায় বিএনপি

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছেন।

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2016, 11:27 AM
Updated : 29 August 2016, 04:25 PM

বৈঠকের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, “তারা (যুক্তরাষ্ট্র) আশাবাদী, আমরাও (বিএনপি) আশাবাদী যে মার্কিন সহযোগিতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নও হবে, একই সঙ্গে এখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।”

বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আলোচনায় কেরি বহু দলীয় গণতন্ত্রের উপর জোর দিয়েছেন, যেখানে সবার মত প্রকাশের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে।

সোমবার আট ঘণ্টার সফরে ঢাকায় আসা কেরির সঙ্গে বারিধারার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা।  

দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে এই বৈঠকে থাকা মহাসচিব ফখরুল বলেন, “বৈঠকে জন কেরির সঙ্গে আগামী নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

“বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য, আইনের শাসনকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব সহকারে কাজ করতে চান, আগ্রহী।”

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ‌্য দিয়ে গঠিত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের বৈধতা নেই বলে বিএনপি দাবি করে আসছে।

২০১৪ সালে বাংলাদেশের ওই জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ওয়াশিংটনও অসন্তোষ জানিয়েছিল। তারা সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচনের প্রত‌্যাশাও জানিয়েছিল।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে কী ধরনের আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি বিএনপির মহাসচিব।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে। আগামী নির্বাচন সম্পর্কে, গণতন্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।”

বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এলেও তা নাকচ করে আসছে আওয়ামী লীগ। মধ‌্যবর্তী নির্বাচনের দাবিও নাকচ করছেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা।   

বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফখরুল ছাড়াও ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ও অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক সাবিহ উদ্দিন।

সকালে ঢাকায় নামার পর ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে গিয়ে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান জন কেরি। এরপর তিনি যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে।

বিকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করে কেরি বারিধারায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস কমপ্লেক্সে যাওয়ার ১৫ মিনিট পরই সেখানে ঢোকেন খালেদা। প্রায় এক ঘণ্টা সেখানে ছিলেন তিনি।

সেখান থেকে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের বাড়ি ‘ফিরোজা’য় ফিরে সাংবাদিকদের কাছে আলোচনার বিষয়বস্তু জানান ফখরুল। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের ৩৫ মিনিট বৈঠক হয়েছে।

“বৈঠকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অবস্থা, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা, মানবাধিকারের বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে। আইনের শাসন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশে যেটা এখন অত্যন্ত সঙ্কটময় বিষয়, যে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস, এ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা হয়েছে।”

আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে বলে বিএনপি দাবি করে আসছে। দলটি বলছে, এখন বাংলাদেশে আইনের শাসন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা পুরোপুরিই অনুপস্থিত।

জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় ‘জাতীয় ঐক‌্য’ গড়ে তুলতে খালেদা জিয়ার আহ্বান প্রত‌্যাখ‌্যান করে সরকার উল্টো জঙ্গি তৎপরতায় মদদ দেওয়ার জন‌্য বিএনপিকেই দুষছে।

জঙ্গিবাদের মতো হুমকি মোকাবেলায় কেরি বাংলাদেশের সব মহলের ঐক‌্যবদ্ধ প্রয়াসের উপর জোর দিয়েছেন বলে সে দেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

এতে বলা হয়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিষয়ে কেরির আলোচনা হয়েছে।

এই ‘সঙ্কটময়’ পরিস্থিতিতে কেরির সঙ্গে বৈঠকের পর ফখরুল বলেন, “একটা স্থিতিপূর্ণ অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের সঙ্গে তারা সহযোগিতা করছেন, আমাদের দেশের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন।”

বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার দেশের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটও ছিলেন।

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর বিএনপি সংসদ থেকে ছিটকে পড়লেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়াকে গুরুত্বের সঙ্গেই দেখেন বিদেশিরা।

২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন।

নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় যুক্তরাষ্ট্রের আগামী নির্বাচনে হিলারি বর্তমানে ক্ষমতাসীন ডেমক্রেট দলের হয়ে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।