নারায়ণগঞ্জের অভিযান নিয়েও সন্দিহান হান্নান শাহ

নারায়ণগঞ্জে জঙ্গিবিরোধী অভিযান নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করে বিএনপি নেতা আ স ম হান্নান শাহ বলেছেন, জনগণকে ‘বিভ্রান্ত করতে’ সরকার যেসব তথ্য দিচ্ছে তাতে তারা ‘বিভ্রান্ত’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2016, 12:10 PM
Updated : 28 August 2016, 12:10 PM

রোববার ঢাকায় এক আলোচনা সভায় জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সরকার জাতীয় ঐক্য চায় না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

শনিবার সকালে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে তামিম চৌধুরীসহ তিনজন নিহত হন; যাকে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি এবং শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের কাছের হামলাসহ কয়েকটি জঙ্গি হামলার মূল হোতা দাবি করছে পুলিশ।

অভিযান নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে সরকার বিভিন্ন তথ্য দিচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি নেতা হান্নান শাহ বলেন, “জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য যেসব তথ্য দেওয়া হচ্ছে, এটা নিয়ে আমরা সত্যিকার অর্থে বিভ্রান্ত হচ্ছি। এই যে যিনি নারায়ণগঞ্জে নিহত হলেন, বলা হলো উনার সঙ্গে আরও দুইজন নিহত হয়েছেন। অথচ কয়েকদিন আগে পত্র-পত্রিকায় দেখেছিলাম যে উনি (তামীম চৌধুরী) ভারতে আছেন।

“তাহলে এটা তো আমি বুঝি না, ভারতের ওই লোক ওইখান থেকে নারায়ণগঞ্জে চলে আসলো। অ্যাকশন হইছে ... উনি মারা গেলেন। আর আমাদের সালাহউদ্দিন আহমেদ (বর্তমানে স্থায়ী কমিটির সদস্য), উনি হিন্দুস্থানে গিয়ে উপস্থিত হয়ে গেলেন। এই যে মজমা, এটার রহস্য ভাই আমরা বিরোধেী দলে আছি, বুঝি না।”

‘এই রহস্য সৃষ্টির পেছনে গোয়েন্দাদের হাত’ থাকার সন্দেহ প্রকাশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “এটা একমাত্র যারা পারেন, যারা সরকারে আছেন, তাদের গোয়েন্দা বাহিনী অথবা আমাদের প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা বাহিনীকে আমাদের দেশের সরকার বা গোয়েন্দারা সহযোগিতা করলে এই অপকর্মগুলো হইতে পারে। এছাড়া এগুলো হওয়া সম্ভব না।”

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম ‘৭১ ফোরামের উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সন্ত্রাস ও জাতীয় ঐক্য’ শীর্ষক সভায় কথিত জঙ্গিদের জীবিত না ধরার সমালোচনাও করেন সেনাবাহিনী সাবেক কর্মকর্তা হান্নান শাহ।

“কয়েকদিন আগে যখন আমাদের পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে বলা হলো মেজর জিয়াউর রহমান এবং যে ভদ্রলোক মারা গেল তামীম সাহেব কোথায় আছেন- তারা জানেন। এখন ধরার অপেক্ষা মাত্র।

“আমি সিভিল ডিফেন্স করেছি, আর্মি ইন্টিলিজেন্স করেছি, অনেক কিছু করেছি জীবনে। মরা মানুষ তো কথা বলে না। মানুষকে আমরা জীবিত ধরি কেন, যাতে তার কাছ থেকে কথা বের করতে পারি “

সরকার চাইলে তাদের জীবিত ধরতে পারত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমি কল্যাণপুর (জঙ্গি আস্তানা) সন্ধন্ধে বলেছিলাম, অনেকে হা হা করে বলেছিলেন, আরে কী বললেন। পরে দেখা গেল, আমার বক্তব্য বোধহয় ঠিক। কারণ এখন পর্যন্ত সঠিক ব্যাখ্যা জনগণের সামনে আসে নাই।”

জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সরকার জাতীয় ঐক্য চায় না অভিযোগ করে হান্নান শাহ বলেন, “আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য চাই, সরকার চায় না। কারণটা কী? আমরা চাই, এদেশে থেকে সন্ত্রাস নির্মূল হউক।

“কিন্তু দেখা যায়, হান্নান শাহর বাড়িতে তো এই জঙ্গিদের পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় মান্নান সাহেবের বাড়িতে। এই মান্নান সাহেব কে, আওয়ামী লীগের নেতা।”

নারায়ণগঞ্জের যে বাসায় জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানো হয় সেই বাড়িটি এক আওয়ামী লীগ নেতার দাবি করে তিনি বলেন, “নারায়ণগঞ্জে যে বাসায় জঙ্গি হত্যা হলো, সেই বাড়িটিও আওয়ামী লীগের নেতার।

“গুলশানের হলি আর্টিজানে যারা মারা গেল, বেশ কয়েকজনের সাথে আওয়ামী লীগের, সরকারি দলের সম্পৃক্ততার প্রমাণ রয়েছে। তাই সরকারকে বলব, সর্বদলীয় মিটিং ডেকে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করুন এবং যতদ্রুত সম্ভব সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন।”

‘রামপাল বাতিলে জনগণ ঐক্যবদ্ধ’

সুন্দরবনের কাছে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে জনগণ এখন ঐক্যবদ্ধ দাবি করে হান্নান শাহ বলেন, “আপনারা (সরকার) যত রাম-ধাম ঝপ করেন না কেন, কিছুই হবে না। বাংলাদেশে মানুষ এই প্রকল্প হতে দেবে না।

“আপনারা বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, যেদিন নেত্রী (খালেদা জিয়া) বা যে কেউ ডাক দেবে, রামপালকে বন্ধ করতে হবে, দেইখেন ঢাকা শহরে কত মানুষ নামে, মানুষ রাস্তায় নামবেই। জনগণের বিজয় হবেই হবে।”

রামপালে ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা কাজে দুর্নীতির অভিযোগ করে তিনি বলেন, “রামপাল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে স্ট্যান্ড নিয়েছেন, রামপাল নিয়ে যদি ওপেন ইনক্যয়ারি হয়, তাহলে দেখা যাবে যে, এই সরকারের যারা কর্তা ব্যক্তি আছেন, তারা কে কে এখানে কনট্রাক্টরি করে, ৬ টাকার কিউবিক ফিটের বালু ১৪/১৭ টাকা করে সরবারহ করছেন।

“তারা অর্থনৈতিকভাবে সুবিধা পাচ্ছেন বলে দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে আজকে তারা রামপালকে ইস্যু করে ছেড়েছেন, এখন তারা বলছেন, তারা এটা করবেনই।”

এসময় রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন বাম দল, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘ভূমিকার’ প্রশংসা করেন তিনি।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে ‘ভারতপ্রীতির’ অভিযোগ তুলে হান্নান শাহ বলেন, “১/১১ সময়ের কথা ভুল গেছেন। এ দেশের জেনারেল সাহেবদের জন্য দিল্লি থেকে ঘোড়া পাঠানো হয়েছিল।

“ঘোড়া তো নাচে খুঁটির জোরে। সেই ঘোড়া তো এখনো আছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নাচেন ওই খুঁটির জোরে, অন্যকিছুর জোরে না।”

সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব, সহ সম্পাদক শাম্মী আখতার, কেন্দ্রীয় নেতা রফিক শিকদার বক্তব্য রাখেন।