জীবিত ধরলে তাদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যেত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
শনিবার সকালে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে তামিমসহ তিন জঙ্গি নিহত হন।
পরে রাতে গুলশানের কার্যালয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, “যে কথাটা তারা (সরকার) বলতে চায়, আমরা জঙ্গি নির্মূল করার জন্য তাদের হত্যা করেছি। আমরা বলব, আজকে কেন সত্যিকারের জঙ্গি ধরে, তাদের জীবিত কেন ধরা হল না? জীবিত ধরা হলে সত্যিকারের তথ্য পাওয়া যেত তাদের কাছ থেকে।”
বিভিন্ন জনকে জঙ্গি দেখিয়ে ‘ক্রসফায়ারে’ মেরে সরকার জঙ্গি দমনের বাহবা নিচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার আজ পর্যন্ত সত্যিকারের কোনো জঙ্গি ধরেনি। সবাইকে বলেছে এই জঙ্গি, অমুক জঙ্গি, অমুক সন্ত্রাসী, কাউকে ক্রসফায়ার করে মেরে ফেলা হয়েছে। এসব করে তারা খুব বাহবা নেয়।
“কিন্তু এসব কী আসলে সত্যি জিনিস, এসব কি আসলে বিশ্বাসযোগ্য জিনিস? আমাদের প্রশ্ন- কেন আমাদের পুলিশ বাহিনী ধরতে পারবে না? জঙ্গিরা মারা যাচ্ছে ভালো। কিন্তু কেন তাদের জীবিত ধরা হচ্ছে না? এখান থেকে সব কিছু বোঝা যায়।”
রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সন্দেহভাজন নয় জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনাকে ‘সাজানো নাটক’ দাবি করে তিনি বলেন, “এটা (গুলশান হামলার ঘটনা) যেতে না যেতে কিছুদিন পরে দেখা গেল আরেকটা ঘটনা কল্যাণপুরে। সেটার ছবি পত্রপত্রিকায় দেখেছেন। সবাই মারা গেল, এরা অল্প বয়সী শিক্ষিত ইয়াং ছেলেপেলে। বোঝাই যায় যে, এটা সাজানো ঘটনা।”
গুলশান ও শোলাকিয়া হামলায় জড়িতদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত সন্দেহভাজন জঙ্গিদের কয়েকজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী বলে প্রকাশিত হওয়ার পর এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে নড়েচড়ে বসে সরকার।
বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে অনুমোদন ছাড়া তাদের আউটার ক্যাম্পাসের কার্যক্রম চালিয়ে এলে জঙ্গিবাদে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরুণদের জড়িয়ে পড়ার খবরের মধ্যে সেগুলো বন্ধ করে দেয় সরকার।
এ বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জঙ্গি হচ্ছে বলে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেবে? মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলতে হবে? এটা হতে পারে না।
“অথচ আওয়ামী লীগের লোকজন- সন্ত্রাসী যারা ধরা পড়ছে, তাদের লোকজন পুলিশ অফিসারকে মারে, তাদের ধরা হয় না। তাদের একজনেরও কোনো বিচার হয়নি, শাস্তি দেওয়া হয়নি। এটা কেন হচ্ছে? আইনের দুইভাবে প্রয়োগ হচ্ছে।”
দেশে কোনো ধর্মের মানুষ নিরাপদ নয় বলে মন্তব্য করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উদ্যোগে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের এ অনুষ্ঠান হয়।
এতে ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন), গৌরীয়া মঠ, গুলশান পূজা মন্দিরসহ বিভিন্ন মঠ-মন্দিরের পুরোহিত ও নেতারা অংশ নেন।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সভাপতি গৌতম চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক সঞ্জিব চৌধুরী, বিজন কান্তি সরকার, রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী মৃদুল মহারাজ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত কুমার কুণ্ড, নিতাই চন্দ্র ঘোষ, নুকুল চন্দ্র সাহা, অমেন্দু দাশ অপু, রমেশ দত্ত, দেবাশীষ রায় মধু, নিপুন রায় চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, রুহুল আলম চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক বদরুজ্জামান খসরুসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।