রামপালে বেরিয়েছে খালেদার ‘থলের বিড়াল’: হাসিনা

উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করার প্রয়াসেই খালেদা জিয়া রামপাল বিদ‌্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতায় নেমেছেন বলে মন্তব‌্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2016, 01:42 PM
Updated : 27 August 2016, 08:02 PM

এই বিদ‌্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতা করে একদল পরিবেশবাদী এবং বাম দলের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের প্রেক্ষাপটে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন সরকার প্রধান।

গণভবনে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই শেখ হাসিনা বলেন, “অবশেষে থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে। এতদিন অন্তরালে থেকে ইন্ধন জোগালেও ওই দিন বিএনপি চেয়ারপারসন প্রেস কনফারেন্স করে এই অপপ্রচারে প্রকাশ্যে সামিল হয়েছেন।

“আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, হঠাৎ করে বিএনপির এই অপপ্রচারে প্রকাশ্যে যোগ দেওয়ার পেছনে গভীর কোনো ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে যদি কোনো নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই থাকত, তাহলে তারা অনেক আগেই তা জনসম্মুখে প্রকাশ করত।”

গত ২৪ অগাস্ট সংবাদ সম্মেলন করে সুন্দরবনের কাছে ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ‌্যোগে বাস্তবায়নাধীন রামপাল বিদ‌্যুৎ কেন্দ্র সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান খালেদা।

গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে দৃশ‌্যত সে দাবি নাকচ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করার জন্য এই আন্দোলন? আমরা কেন পারি? উন্নয়নের গতি শ্লথ করে দেওয়াই উদ্দেশ‌্য।”

রামপাল বিদ‌্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতার সঙ্গে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার তুলনাও করেন সরকার প্রধান।

“যারা এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশ্যটা কী? উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করা। হলি আর্টিজান বেকারিতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় ঢাকার মেট্রোরেল প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, এমন বেশ কয়েকজন জাপানি নাগরিক।”

“ওই হামলা করা হয়েছিল বাংলাদেশের উন্নয়ন ও বিনিয়োগ থামাতে। দুটি তুলনা করলে বেশি তফাৎ দেখে যায় না। যে গতিতে উন্নয়ন করছি, তাতে বাধা সৃষ্টি করা।”

‘রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়াদের’ অপপ্রচারে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বানও জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

রামপালে বিদ‌্যুৎ কেন্দ্র হলে তা সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ হুমকির মুখে ঠেলে দেবে দাবি করে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল বাম দলগুলো।

সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া

এত দিনকার ওই আন্দোলনের পেছনে বিএনপির ‘খোঁটার জোর’ ছিল বলেও মনে করেন শেখ হাসিনা।

“এই যে শত শত মানুষ জড়ো করে রোডমার্চ করে। বিদ‌্যুৎ কেন্দ্রের জন‌্য ফুয়েল লাগে, উনারা ফুয়েল কোথা থেকে পাচ্ছেন?”

রামপাল নিয়ে আন্দোলনকারীদের ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “এরা কারা? এরা নিজেরা ভালো কিছু করতে পারে না, আবার কেউ ভালো কিছু করতে গেলে তাতে বাধা দেয়।”

“বেশি কথা বললে, যদি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেই, কেউ বিদ্যুৎ পাবে না। অন্ধকারে থাকতে হবে। সব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেই.. তাহলে কুপি বাতি জালিয়ে থাকতে হবে,” হুমকির সুর শেখ হাসিনার কণ্ঠে।

এক প্রশ্নের জবাবে এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধীতাকারীদের রামপালে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “যারা আন্দোলন করছেন, তারা রামপালে যান নাই। রোডমার্চ করে খুলনা পর্যন্ত গেছেন।

“ওই অঞ্চলের লোকদের বোঝাতে যাক .. আমাদের কিছু বলতে হবে না। ওই অঞ্চলের লোকরাই বুঝিয়ে দেবে।”

আন্দালনকারীদের দাবিতে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা যায় কি না- এক সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা এই আন্দোলন করছে, তাদের ডেকে বলে বোঝালেও তাদের কানে পানি যাবে না। কার মুখ থেকে কী কথা বের হয়, তা জানি।

“তাদের সঙ্গে যে বসা হয়নি, তা নয়। তাদের বসে বসাও হয়েছিল।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “দেশে বসে ভারত বিরোধিতা। আর, ওদিকে গিয়ে পায়ে ধরা।”

খালেদা জিয়া রামপাল বিদ‌্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ‘উদ্ভট, বানোয়াট এবং অসত্য’ উপাত্ত পরিবেশন করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ধ্বংস করবে বলে খালেদার দাবির জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “এ কথা মোটেই সত্য নয়। বরং, এটি নির্মিত হলে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।”

প্রকল্পের জমি নিয়ে খালেদার বক্তব‌্যের (১ হাজার ৮৩৪ একর) জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আসলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জায়গা নেওয়া হয়েছে ৯১৫ একর। এর মধ্যে ৪৬৫ একরে মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকবে। বাদবাকি জায়গায় সোলার প্যানেল বসবে এবং সবুজায়ন করা হবে।

প্রস্তাবিত নকশা

আট হাজারের বেশি মানুষকে উচ্ছেদ করা হয়েছে খালেদার দাবি উড়িয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রকৃতপক্ষে এলাকাটিতে মানুষের কোনো স্থায়ী বসতি ছিল না। কোনো বসতি উচ্ছেদ করা হয়নি। নিচু, পতিত জমি মাটিভরাট করে উঁচু করা হয়েছে।

পশুর নদী থেকে প্রতি ঘণ্টায় ১৪৪ কিউসেক পানি নেওয়ার তথ‌্যটিও সঠিক নয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “পানি শোধন করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে। ব্যবহৃত পানি শীতল করে পুনরায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে। কোনো দূষিত বা গরম পানি পশুর নদীতে ফেলা হবে না।

“যে পরিমাণ পানি উত্তোলন করা হবে তা অত্যন্ত নগণ্য। শুষ্ক মওসুমে পশুর নদীর প্রবাহের মাত্র দশমিক শূন‌্য ৫ শতাংশ অর্থাৎ ২ হাজার ভাগের এক ভাগ পানির প্রয়োজন হবে। এই পশুর নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত ড্রেজিং করা হবে।”

কয়লা পরিবহনের সময় সুন্দরবন এলাকায় শব্দ দূষণ এবং আলো দূষণের আশঙ্কা উড়িয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “শব্দ ও আলো দূষণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার জন্য আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। গভীর সমুদ্র হতে কভার্ড বার্জে কয়লা পরিবহন করা হবে। বার্জে ব্যবহৃত হবে ঢাকনাযুক্ত কম শব্দযুক্ত ইঞ্জিন। ফলে পরিবেশ দূষণের কোনো সম্ভাবনা নেই।

“বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা থাকবে। ১৪ কিলোমিটার দূরে শব্দ যাবে না। ২০০ মিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে একটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধের কথাও বলেছিলেন খালেদা জিয়া, যার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “কিন্তু কত সংখ্যক কয়লাভিত্তিক প্ল‌্যান্ট চালু আছে, তা কি তার জানা আছে?

“যুক্তরাষ্ট্রের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশ আসে কয়লা থেকে। সেখানে ৭ হাজারের বেশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু আছে।”

রামপালে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম আট দশমিক ৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে ‘সম্পূর্ণ অসত্য কথন’ আখ‌্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, এ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম নির্ধারিত হবে কয়লার দামের উপর ভিত্তি করে।