জিয়ার স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহার হবে আত্মঘাতী: বিএনপি

জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহার করে নেওয়া হলে তা ‘আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত হবে বলে সরকারকে সতর্ক করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 August 2016, 02:51 PM
Updated : 26 August 2016, 03:06 PM

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “তারা (সরকার) এ রকম একটি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এই সংবাদে আমরা এবং গোটা জাতি বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন হয়েছি।”

জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে শুক্রবার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে দুটি পত্রিকায়, যা নিয়ে বিএনপির এই প্রতিক্রিয়া।   

দৈনিক যুগান্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থিত এক সদস্য ‘নাম প্রকাশ না করার শর্তে’ তাদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কমিটির সুপারিশে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসন অবৈধ ঘোষণা করে উচ্চ আদালতের রায়ের বিষয়টি উল্লেখ করে গত জুলাই মাসে ‘সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে একটি নথি কমিটিতে পাঠানো হয়। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই মন্ত্রিসভা কমিটি পদক প্রত‌্যাহারের সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, “যিনি পদক প্রবর্তন করলেন, তিনি বাদ। কিন্তু পদক থাকবে, তার কীর্তিও থাকবে। এটা যে কত বড় সংকীর্ণতা, আত্মঘাতী ও নোংরা কাজ, সেটা আওয়ামী লীগ যেদিন বুঝবে, সেদিন আর শোধরাবারও সুযোগ হয়ত থাকবে না।”

খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় ২০০৩ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়। সেই পদক ও তার নথি সংরক্ষণ করা হয় জাতীয় জাদুঘরে।

ফখরুলের ভাষায়, পুরস্কারের সেই ঘোষণা ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘ঔদার্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।”

“আজকে হতাশার সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি, তারা (আওয়ামী লীগ) ঐক্যের রাজনীতিকে সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে গোটা জাতিকে বিভাজনের দিকে নিয়ে এসে বিভক্ত করে ফেলেছে। তারা সচেতনভাবে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এই জাতিকে বিভাজনের রাজনীতিতে পুরোপুরি ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।”

সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “যারা গায়ের জোরে নোংরাভাবে জিয়াউর রহমানকে মুছতে চাইছে, তাতে তিনি ফিরলে হয়ত একইভাবে তারাও মুছে যেতে পারেন।”

জিয়াউর রহমান

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর খন্দকার মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। ১৫ অগাস্ট থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

মোশতাক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান নিয়োগ করে যান। ৭ নভেম্বর সামরিক অভ্যুত্থানের পর তিনি শাসন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। তখন বিচারপতি সায়েমকে দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

সায়েম ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর জিয়ার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন; জিয়া হন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। ১৯৭৭ এর ২১ এপ্রিল স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে সায়েম রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ালে জিয়া ওই দায়িত্বও নেন।

তার আগে ৩০ মে জিয়ার সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টায় একটি গণভোটের আয়োজন করা হয়, যাতে ৯৮.৯ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়ে।

পরে ১৯৭৮ সালের ৩ জুন নির্বাচন দিয়ে রাষ্ট্রপতি হন জিয়াউর রহমান। ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় ছিলেন।

জিয়া ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়, যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা।

২০১০ সালে সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী বাতিল করে হাই কোর্টের এক রায়ে বলা হয়, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আবু সা'দাত মোহাম্মদ সায়েম এবং জিয়াউর রহমানের মতো এইচএম এরশাদও অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী।

পত্রিকার খবরের বাইরে জিয়ার পদক বাতিলের উদ‌্যোগ নিয়ে আর কোনো তথ্য বিএনপির কাছে আছে কি না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা এ ব্যাপারে মোটামোটিভাবে জেনেছি, মন্ত্রিসভা যে কমিটি হয়েছে, সেই কমিটি সিদ্ধান্তই হয়েছে।”

তিনি বলেন, “একটি কথা আমি খুব স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ যে রাজনীতি করছে, বাংলাদেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আজ গণতন্ত্রকে ধবংস করে দিয়ে মানুষের বাক স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা সব কিছুই হরণ করে নেওয়া হয়েছে।”

দেশে গণতন্ত্র ‘ফিরিয়ে আনাই’ জঙ্গিবাদের সঙ্কট থেকে মুক্তির ‘একমাত্র পথ’ বলে মন্তব‌্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এই ভয়াবহ পথ থেকে সরে এসে আপনারা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য, মানুষের হৃদয়কে ভালোবাসবার জন্য, আপনারা অবশ্যই গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসুন। স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিন, অধিকারগুলোকে ফিরিয়ে দিন এবং ঔদার্যের পথে ফিরে এসে আরও বেশি করে গণতন্ত্র দিয়ে বাংলাদেশকে সঙ্কট মোকাবিলা করে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করবার সুযোগ করে দিন।”

তা না হলে জাতির কাছে একদিন ‘জবাবদিহি করতে হবে’ বলে মন্তব‌্য করেন মির্জা ফখরুল।

অন‌্যদের মধ‌্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, আমিনুল হক, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।