হত্যাকারীর চোখে অশ্রু মানায় না: ফখরুলকে হানিফ

বিএনপিকে ‘খুনিদের ফোরাম ও হত্যাকারীর দল’ আখ‌্যায়িত করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, হত্যাকারীদের চোখে অশ্রু ‘মানায় না’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 August 2016, 10:51 AM
Updated : 26 August 2016, 02:01 PM

শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে হানিফ বলেন, “উনার কর্মী মামলার কারণে ঢাকায় পালিয়ে এসে রিকশা চালাচ্ছে বা হকারি করছে দেখে আজ মির্জা ফখরুল সাহেব চোখের অশ্রু দমন করতে পারেননি, উনি কেঁদে ফেলেছেন।”

এই আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুলের সমালোচনায় বলেন, “তার কর্মী ঢাকায় এসে রিকশা চালাচ্ছে… রিকশা চালায় যারা তারা মানুষ না? ঢাকা শহরে যারা রিকশা চালাচ্ছে তারা কী সব জীবজন্তু? তাদের জন্য মির্জা ফখরুলের কান্না? তাদের জন্য তিনি আকুল?”

গত ২৩ অগাস্ট এক আলোচনা সভায় সরকারের ‘দমন-পীড়নের নজির’ তুলে ধরতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “প্রতিদিন গাড়িতে আসি, যানজটে গাড়ি থামলে দেখি সব ইয়াং ছেলে-পেলে ছুটে আসে। বলে, ‘স্যার আমি তো বিএনপি করতাম লক্ষ্মীপুরে। এতো মামলার ভারে পালিয়ে চলে এসেছি ঢাকায়, এখন এখানে হকারি করছি।”

‘রিকশা চালায় আমাদের ছেলেরা’ বলেই সেদিন কেঁদে ফেলেন ফখরুল। বলেন, “আমি দুঃখিত, আবেগ ধরে রাখতে পারছি না।”

বিএনপি মহাসচিব ফখরুলকে উদ্দেশ‌্য করে হানিফ বলেন, “আপনাদের যেসব কর্মী ঢাকায় পালিয়ে আছেন, তারা পেট্রোল বোমা মেরেছিল। আপনার উচিত ছিল একজন দায়িত্ববান রাজনীতিবিদ হিসেবে তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করা, তা আপনারা করেননি।

নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসে বিএনপি-জামায়াতের টানা তিন মাসের অবরোধ-হরতালের মধ‌্যে ব‌্যাপক নাশকতার ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হানিফ প্রশ্ন করেন, সে সময় পেট্রোল বোমায় মানুষের মৃত‌্যুর ঘটনায় বিএনপি নেতাদের মধ‌্যে কোনো অনুভূতি কী কাজ করেছিল?

“মির্জা ফখরুলরা শুধু একবারই নয়, বাঙালি জাতিকে বার বার কাঁদিয়েছেন। বিএনপি খুনি ফোরাম, হত্যাকারীর দল, হত্যাকারীদের চোখে অশ্রু মানায় না মির্জা ফখরুল সাহেব।”

২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সংখ‌্যালঘু ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে সে সময় ধর্ষণের শিকার পূর্ণিমা, মাহিমা আর ফাহিমাদের কথা ফখরুলকে স্মরণ করতে বলে হানিফ।

“বৃহস্পতিবার পূর্ণিমা ফোন করেছিল। আমাকে বলল- দাদা, মির্জা ফখরুল সাহেব কাঁদছেন উনার কর্মী ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছেন বলে। উনাকে একটু স্মরণ করিয়ে দিয়েন আমাদের সেই দিনগুলোর কথা।

“২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় সারা দেশে সস্ত্রাস করেছেন, নির্বিচারে ধ্বংসযজ্ঞ করেছেন, কত মানুষকে হত্যা করেছিলেন, কোথায় ছিল তখন আপনাদের বিবেক? এখন একজন কর্মীকে রিকশা চালাতে দেখে আপনার দরদ উথলে উঠছে।”

বিএনপির সেই আন্দোলনের মধ্যে নাশকতার আগুনে দগ্ধ নয় বছরের শিশু মরিয়মের একটি ছবি নিজের মোবাইল ফোন থেকে দেখিয়ে হানিফ বলেন, “নয় দিন পর সে মারা গেছে। এ রকম অসংখ্য মরিয়ম খালেদা জিয়ার ৯৩ দিনের কর্মসূচির সময় আগুন সন্ত্রাসে নিহত হয়েছে।

“খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করেছিলাম, পেট্রোল দিয়ে মানুষ হত্যা বন্ধ করুন, কারও কথা শোনেননি। ক্ষমতার লোভে তিনি স্বপ্নে বিভোর ছিলেন।”

শোকের মাস অগাস্ট উপলক্ষে আয়োজিত এই স্মরণ সভায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, “আজ অনেকেই খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দেন… জামায়াত যাতে ত্যাগ করেন। কিন্তু বিএনপি কখনও জামায়াত ত্যাগ করতে পারবে না, খালেদা জিয়া কখনও জামায়াত ত্যাগ করতে পারবেন না।”

বিএনপি জঙ্গিদের ‘পৃষ্ঠপোষকতা করছে, মদদ যোগাচ্ছে ও দলের মধ্যে ঠাঁই দিচ্ছে’ বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সহ-সভাপতি আবদুল বাসেত মজুমদারের সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু গবেষণা ও শিক্ষা পরিষদ আয়োজিত এই সভায় অন‌্যদের মধ‌্যে সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য অধ্যাপক এস এম আনোয়ারা বেগম, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শাহিনুর রহমান বক্তব্য দেন।