বিএনপির বড় দুঃসময়: ফখরুল

সরকার মূলধারার রাজনীতি থেকে বিএনপিকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2016, 01:40 PM
Updated : 20 August 2016, 01:40 PM

শনিবার বিকালে এক মিলাদ মাহফিলে বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজ দলের বড় দুঃসময়। আজকে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার জন্য, এই ষড়যন্ত্র বসে বসে হচ্ছে না, প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা হুমকি দিচ্ছেন যে, বিএনপিকে নির্মূল করে দেওয়া হবে।”

এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “একটি গণতান্ত্রিক শক্তি যারা দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্রের পক্ষে সংগ্রাম করেছে, লড়াই করেছে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, সব রকম ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে, সেই দলটিকে আজকে নির্মূল করে দেওয়া, তাকে একেবারে শেষ করে দেওয়ার যে ঘোষণা আওয়ামী লীগের কিছু কিছু নেতা দিচ্ছেন- এটা থেকে কিন্তু একটি ষড়যন্ত্রের আভাস পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, তারা আসলে বিএনপিকে মূল রাজনৈতিক ধারা থেকে সরিয়ে দিতে চায়।”

বিষয়টি নিয়ে শুধু বিএনপি নেতা-কর্মীরাই নন, অন্যান্য গণতান্ত্রিক শক্তি ও সচেতন মানুষ উদ্বিগ্ন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“সরকারের উদ্দেশ্য, আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য তারা বাংলাদেশে বহুদলীয় রাজনীতি, সেই রাজনীতিকে ধ্বংস করে দিয়ে তারা আগের যে স্বপ্ন একদলীয় শাসনব্যবস্থা, সেটাকে তারা প্রতিষ্ঠিত করতে চায় এবং সেটাই তারা ধীরে ধীরে প্রমাণ করছে।”

বিএনপির সাবেক মহাসচিব ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী ও সদ্যপ্রয়াত দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটলের আত্মার শান্তি কামনায় এই মিলাদ মাহফিল হয়।

গত ১১ অগাস্ট কলকাতার রবীন্দ্র সদন হাসপাতালে ফজলুর রহমান পটল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পটল।

সালাম তালুকদারের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কথা স্মরণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমাদের প্রয়াত নেতা সালাম তালুকদারকে শুধু স্মরণ করব না, অনুসরণ করব। তিনি সঠিকভাবে উপলব্ধি করেছিলেন, তখন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে স্বৈরাচারকে পরাভুত করা সম্ভব হয়েছিল। এটাই বাস্তবতা।

“আজকেও সময় উপস্থিত হয়েছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য, বাংলাদেশের মানুষের অধিকার রক্ষা করার জন্য, তার ভোট দেবার অধিকার রক্ষা করার জন্য, তার লেখা ও কথা বলার স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য আজকে সমগ্র জাতির ঐকবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

বর্তমান সরকারকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে ফখরুল বলেন, “আজকে ফ্যাসিস্ট শক্তি জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করছে। তারা জঙ্গিবাদের কথা বলছে, তাদের নির্মূল করবার জন্য নয়। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, তারা নিজেদের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।

“যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাদের কোনো রকম তদন্ত ছাড়াই, কোনো রকম আদালতে প্রেরণ ছাড়াই, বিচার ছাড়াই ক্রসফায়ারের নাম করে হত্যা করা হচ্ছে। এগুলো হালকা করে দেখার কোনো অবকাশ নেই।”

সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করলেও একটি ঘটনায়ও তার প্রমাণ মেলেনি বলে দাবি করেন তিনি।

“প্রমাণিত হয়েছে যে যারা এই ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের পিতা আওয়ামী লীগের নেতা। তাদের বাড়িতে আওয়ামী লীগের নেতা। তারা আওয়ামী লীগের ঘরনার পুত্র ও সন্তান।”

ভেদাভেদ ভুলে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

“আজকে যে বিপদ সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, তাকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে। বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর সেই জন্য জঙ্গিবাদকে প্রতিহত করবার জন্য দেশনেত্রী যে জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছেন, সেটাকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির আহ্বান আবারও জানাচ্ছি।”

মিলাদে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সানাউল্লাহ মিয়া, ব্যারিস্টার কাওসার কামাল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, হাবিবুল ইসলাম, আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল আউয়াল খান, তাইফুল ইসলাম টিপু, শহীদুল ইসলাম বাবুল, বেলাল আহমেদ, সাইফুল ইসলাম পটু, সালাহউদ্দিন ভুঁইয়া শিশির, খান রবিউল ইসলাম রবিসহ সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।