আওয়ামী লীগে ফিরছেন মনজুর আলম?

পাঁচ বছর আগে খালেদা জিয়ার হাতে ফুল দিয়ে তার উপদেষ্টার পদ পেয়েছিলেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম; পদ হারিয়ে এখন আবার তিনি পুরনো দল আওয়ামী লীগে ফিরতে চান বলে ইংগিত মিলেছে।

মিঠুন চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2016, 08:33 AM
Updated : 17 August 2016, 08:33 AM

আর চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীও তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক শিষ্য মনজুরকে দলে ফেরাতে আগ্রহী।

সোমবার মনজুর আলমের প্রতিষ্ঠিত ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের’ উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনের পর থেকেই তার আওয়ামী লীগে ফেরা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

বুধবার সকালে টেলিফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনজুর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন তো আমি সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়েই আছি। অনেকদিন ধরেই বঙ্গমাতা ফাউন্ডেশনের কাজ করছি।”

শোক দিবস পালনের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক এই মেয়র বলেন, “মেয়র থাকাকালেও শোক দিবস পালন করেছি। তার আগেও ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শোক দিবস পালন করতাম। বঙ্গবন্ধুর নামে আমি একটি স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেছি। এগুলো নিয়েই আছি।”

চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন- মহিউদ্দিন চৌধুরী এখন মনজুরকে ফেরাতে চান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনজুর বলেন, “তিনি আমাদের সবার মুরুব্বি। তিনি আমার নেতা। উনার আগ্রহের যে কথাটা আপনি বললেন, সেটা তো আমার জন্য বড় ব্যাপার।”

আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন কি না- এই প্রশ্নে প্রাণখোলা হাসি দিয়ে মনজুর বলেন, “এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আমি তো বঙ্গমাতা-বঙ্গবন্ধুকে নিয়েই আছি।”

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক এই উপদেষ্টা। 

“আমি মেয়র থাকাকালে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য নিবেদিতপ্রাণ এবং আমার প্রতি উদার ছিলেন। সবসময় তিনি উদার হস্তে আমাকে দিয়েছেন। এটা বাস্তব সত্য কথা।”

মনজুর বলেন, তার পাঁচ বছরের মেয়াদে জাইকার মাধ্যমে এবং বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মনজুরের আওয়ামী লীগে ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে জানতে চাইলে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তো চাই বাংলাদেশের সবাই আওয়ামী লীগে থাক। এটা বঙ্গবন্ধুর দেশ। সবাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে থাকবে এটাই আমার চাওয়া। সে (মনজুর) চাইলেই হবে।”

মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “আমার সাথে সবাই থাকবে। হয়ত মাঝে মাঝে রাগারাগি করি। কিন্তু যারা আমাকে জানে, তারা বোঝে। আমার কোনো শত্রু নেই। কেউ আমাকে শত্রু মনেও করে না।... আসবে, একটু সোহাগ করলেই চলে আসবে।”

২০১০ সালের ১৭ জুন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) নির্বাচনে প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে বিএনপি সমর্থিত মনজুরের কাছে হেরে যান নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মহিউদ্দিন।

এর আগে ১৯৯৪ সাল থেকে টানা তিনবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৬ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সে সময় মনজুর ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর।

মনজুর আলমের বাবা আবদুল হাকিম কন্ট্রাক্টর ছিলেন পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি নগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্যও ছিলেন।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মহিউদ্দিন গ্রেপ্তার হলে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান মনজুর। পরে নির্বাচিত মেয়র হয়ে মহিউদ্দিনের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখাও করেন ।

২০১০ সালের ১৮ জুলাই মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার দিনই মনজুরের বিরুদ্ধে হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলা করেন মহিউদ্দিন। তবে দুজনের ব্যক্তিগত সম্পর্কে তাতে চিড় ধরেনি।

বিগত মহাজোট সরকারের সময় ওই নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী না দিলেও মনজুর আলমকে সমর্থন দেয়। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর মনজুর ঢাকায় এসে খালেদা জিয়ার হাতে ফুল দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানান; পেয়ে যান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ।      

মেয়র থাকাকালে মনজুরের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা হলেও তাতে কখনো যোগ দেননি মহিউদ্দিন। আর ‘গুরু’ মহিউদ্দিন প্রসঙ্গে মনজুরের কণ্ঠও শ্রদ্ধা-ভালবাসায় আপ্লুত শোনা গেছে সব সময়।

তাদের দুজনের পারিবারিক সখ্যতার কথাও চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে সবার জানা। মেয়র থাকাকালে মহিউদ্দিনের নামে নগরীর একটি সড়কের নামকরণেরও ঘোষণা দেন মনজুর।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল বিএনপির প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলেও মনজুর আলম ভোট গ্রহণ শুরুর তিন ঘণ্টার মাথায় ‘কারচুপির’ অভিযোগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। সেইসঙ্গে রাজনীতি ছাড়ারও ঘোষণা দেন তিনি।

সম্প্রতি ঘোষিত বিএনপির নতুন কমিটিতে আর ঠাঁই হয়নি মনজুরের।

কমিটি ঘোষণার দুই দিন পর এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তো অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলাম। এখন সমাজসেবা করছি। আমাকে রাখবে কেন?” 

গত সিটি নির্বাচনে মনজুরকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ জ ম নাছির ‍উদ্দিন। নগরীরি রাজনীতিতে তিনি ‘মহিউদ্দিনবিরোধী’ হিসেবে পরিচিত।