‘জাতীয় ঐক্য’ হয়ে গেলে কল্যাণপুরে অভিযান কেন: মোশাররফ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবিরোধী জাতীয় ঐক্য হওয়ার কথা বলার পরেও কল্যাণপুরে কেন জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়েছে সে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2016, 04:48 PM
Updated : 28 July 2016, 05:57 PM

প্রধানমন্ত্রীর কথা ঠিক হলে ভবিষ্যতে আর এ ধরনের জঙ্গিবিরোধী অভিযান হবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

গুলশান হামলার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জঙ্গি মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানালে তা নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে জঙ্গিবিরোধী ঐক্য এরইমধ্যে সৃষ্টি হয়ে গেছে।

তবে জঙ্গিবাদকে রাজনৈতিক সংকট আখ্যা দিয়ে তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার জন্য সব দল-মতের অংশগ্রহণে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে আসছেন বিএনপি নেতারা।

এরমধ্যে গত সোমবার রাতে কল্যাণপুরে একটি জঙ্গি আস্তানায় পুলিশ অভিযানে গেলে হামলার মুখে পড়ে। পরে ভোরে সোয়াটের নেতৃত্বে সেখানে অভিযানে নয় জঙ্গি নিহত হওয়ার কথা জানায় পুলিশ।

তবে এ ঘটনা নিয়ে সন্দিহান বিএনপি নেতা মোশাররফ হোসেন বৃহস্পতিবার এক আলোচনা সভায় বলেন, “কল্যাণপুরে কী ঘটনা হয়েছে, আমরা ভালো করে জানি না। যদি জঙ্গি হয়, সামনা-সামনি যুদ্ধ করে তারা মরার কথা। আজকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বলছে, পেছন দিয়ে সবার গুলি। আমরা জানি না কী ঘটনা হয়েছে।”

জাতীয় ঐক্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “তাহলে তো সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। তাহলে কেন কল্যাণপুরে এই অভিযান?

“যদি প্রধানমন্ত্রীর কথা ঠিক হয়, জাতীয় ঐক্য হয়েছে, আমরা আশা করব ভবিষ্যতে হয়তবা এহেন ঘটনা ঘটবে না।”

দেশে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে’ বিএনপির আন্দোলন কোনো ‘ষড়যন্ত্রে’ আটকাবে না বলে মন্তব্য করেন দলটির স্থায়ী কমিটির নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

তিনি বলেন, “আমাদের মূল আন্দোলন হচ্ছে, দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। তারেক রহমানের সাজার বিরুদ্ধে যেসব কর্মকাণ্ড চলছে-এটাও মূল আন্দোলনের অংশ।

“আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তারেক রহমানের সাজা, এমনকি যদি দেশনেত্রীর সাজা হয়, আমাদের সাজা হয়, মূল আন্দোলন কখনও থামবে না। এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে, সরকার যতই চেষ্টা করুক না কেন দৃষ্টি অন্য দিকে ফিরিয়ে নিতে।”

এ বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারেআহ্বান জানান খন্দকার মোশাররফ।

জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘ব্যারিস্টারস ফর চেইঞ্জ’ নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে ‘সাপলিমেন্টারি ক্রেডিট কার্ড: বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাম্প্রতিক মামলার ক্ষেত্রে প্রভাব’ শিরোনামে এই আলোচনা সভা হয়।

গুলশান হামলার পর বিদেশি সংবাদমাধ্যমের খবরের বরাত দিয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “সারা বিশ্বের পত্র-পত্রিকায় একটা কথারই প্রতিধ্বনি করেছে যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রহীনতা এবং কর্তৃত্বাবাদী শাসনের কারণে এই জঙ্গির উত্থান হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকার এটা মানতে রাজি নয়।”

সরকার খালেদা জিয়ার আহ্বান নাকচ করলেও বিএনপির জঙ্গিবিরোধী জাতীয় ঐক্যের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।

“আমরা তারপরও জাতীয় ঐক্যের জন্য গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করছি। সেখানে আমরা দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানাব সময় আসলে। তখন যদি আওয়ামী লীগ বা তার ঘরানার কেউ না আসে, তাতে জনগণের ঐক্য সেখানে অপেক্ষা করবে না।

“জনগণের ঐক্য ইনশাল্লাহ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সৃষ্টি হবে। আওয়ামী লীগ বা সরকার আসল না, তাতে জাতীয় ঐক্য হবে না- এটা হতে পারে না।”

‘জঙ্গি সাফির বাবাকে পুরস্কৃত করে আ. লীগ’

গুলশান হামলাকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশে আরও হামলার হুমকি দিয়ে আসা কথিত আইএসের ভিডিওতে দেখা যাওয়া তিন তরুণের একজন তাহমিদ রহমান সাফি সাবেক নির্বাচন কমিশনার সফিউর রহমানের ছেলে।

১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ভূমিকা রাখায় প্রয়াত এই আমলাকে আওয়ামী লীগ সরকার পুরস্কৃত করেছিল বলে দাবি করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

তিনি বলেন, “১৯৯৬ সালে যখন বিএনপির ক্ষমতার শেষ দিকে তখন সচিবালয় থেকে বিদ্রোহ করা হয়েছিল ম খা আলমগীর (মহিউদ্দিন খান আলমগীর) ও সফিউর রহমানের নেতৃত্বে জনতার মঞ্চ করে।

“সেই সফিউর রহমানকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে পুরস্কার হিসেবে স্বরাষ্ট্র সচিব করেছিল, তারপরে সংস্থাপন সচিব করেছিল। রিটায়ারমেন্টের পরে তাকে আরও পুরস্কার বাবদ নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করেছিল।

“আজকে সফিউর রহমানের ছেলে বাংলাদেশকে ধমক দিচ্ছে বাংলাদেশে আরও বড় ধরনের আক্রমণ করতে আসছি। সে আওয়ামী লীগের থেকেও বড় আওয়ামী লীগ।”

সংগঠনের সভাপতি ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, সানাউল্লাহ মিয়া, আইনজীবী শেখ জাকির হোসেন, আনোয়ারুল ইসলাম শাহিন, খন্দকার মারুফ হোসেন, আবদুস সালাম খান, এসআর হাসান মামুন, ইমরুল হায়দার, গোলাম মোস্তফা তাজ, জুয়েল মণ্ডল, মিজানুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।