সরকারের ইচ্ছা পূরণের রায়: বিএনপি

সরকারের ‘ইচ্ছা পূরণ’ করতেই মুদ্রা পাচার মামলায় নিম্ন আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2016, 08:10 AM
Updated : 21 July 2016, 08:10 AM

বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের ওই রায়ের পর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রতিক্রিয়ায় জানাতে এসে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন।

মুদ্রা পাচারের ঘটনার সঙ্গে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের ‘কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না’ দাবি করে রিজভী বলেন, কোনো সাক্ষীর বক্তব্যেও মামলা বাতিলের মত কোনো ‘তথ্য প্রমাণ আসেনি’।

“নিম্ন আদালতে তার (তারেক রহমান) খালাস পাওয়াটা সরকারের সহ্য হয়নি। তাই তারা দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে আপিল করে তাদের ইচ্ছা পূরণের জন্য, তাদের প্রতিহিংসা বাস্তবায়নের জন্য এই কর্মকাণ্ড করেছেন।

“এটা অত্যন্ত গভীর চক্রান্ত। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এই কর্মকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

 জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ‘দুর্বল করতে’ এবং জিয়া পরিবারকে ‘ধ্বংস করতেই’ সরকারের এই ‘ষড়যন্ত্র’ বলে মন্তব্য করেন রিজভী।

আদালতের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমরা উচ্চ আদালতের কাছে আশা করব- তারা যেন ন্যায়বিচারের জায়গাটি প্রশস্ত করেন এবং মানুষের শেষ আশ্রয় বিচারিক প্রতিষ্ঠান আদালতের ওপর আস্থার জায়গাটা স্থির করতে পারেন।”

ঘুষ হিসেবে আদায়ের পর ২০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে করা এ মামলার রায়ে জজআদালত ২০১৩ সালে তারেককে খালাস এবং তার বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের রায়ে হাই কোর্ট বৃহস্পতিবার মামুনের সাজা বহাল রেখে তারেকের খালাসের রায় বাতিল করেছে। বিএনপির এই সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানকে সাত বছরের কারাদণ্ডের সঙ্গে করা হয়েছে ২০ কোটি টাকা জরিমানা।

এই রায়ের প্রেক্ষিতে বিএনপি কোনো কর্মসূচি দেবে কিনা জানতে চাইলে রিজভী বলেন, দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।

হাই কোর্টের রায়ের পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রুহুল কবির রিজভী যখন দলীয় কার্যালয়ে আসেন, সে সময় পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা কার্যালয় ঘিরে থাকায় হাতে গোণা কয়েকজন নেতাকর্মী সেখানে ছিলেন। 

রায় ঘোষণার আগে সকালে কার্যালয়ের সামনে থেকে দলের সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুসহ ১১ জনকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়।

খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টাসহ দুর্নীতি, রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানীর অভিযোগে কয়েক ডজন মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোও মুদ্রা পাচারের আরেকটি মামলায় দণ্ডিত হয়েছিলেন। কারাদণ্ডাদেশ মাথায় নিয়ে বিদেশে অবস্থানরত অবস্থায় গতবছর তার মৃত্যুহয়।

রিজভী বলেন, “সরকার যে বিচার্ ব্যবস্থাকে করায়াত্ত করে নিজেদের ইচ্ছা পূরণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, তার প্রমাণ হচ্ছে, যে বিচারক তারেক রহমানকে খালাস দিয়েছিলেন, তিনিও বাংলাদেশে টিকতে পারেননি, বাংলাদেশে থাকতে পারেননি।”

যেসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে নিম্ন আদালত তারেক রহমানকে খালাস দিয়েছিল, সেগুলো হাই কোর্টে  আমলে নেয়নি এবং ‘বিচারিক মন প্রয়োগ করা হয়নি’ বলেও মন্তব্য করেন এই বিএনপি নেতা।

সকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে নেতা-কর্মীদের আটকের নিন্দা জানিয়ে রিজভী বলেন, “এই রায় যে সরকারের ষড়যন্ত্র, তার নমুনা আমরা দেখলাম পার্টি অফিস সকাল থেকে অবরুদ্ধ। চারদিকে সাদা পোশাকধারী আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন ঘিরে রেখে তাণ্ডব চালিয়েছে।

“... অর্থাৎ, সরকার দুদককে দিয়ে যে অন্যায় করেছে, তারা যে অবৈধ কাজ করাচ্ছে, সেই কারণেই ভয় পেয়ে তারা আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে ক্র্যাক ডাউন চালাচ্ছে, গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে।” 

বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের মধ্যে আবদুস সালাম আজাদ, বেলাল আহমেদ, আমিনুল ইসলাম, ইউনুস মৃধা, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি এ সময় রিজভীর পাশে ছিলেন।