সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্য গড়ার ডাক খালেদার

গুলশানের ক্যাফেতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দল-মত নির্বিশেষে সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2016, 11:21 AM
Updated : 3 July 2016, 11:21 AM

রোববার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “কে ক্ষমতায় থাকবে, কে ক্ষমতায় যাবে, সেটা আজ বড় কথা নয়। আজ আমরা যারা আছি, আগামীতে তারা কেউ হয়তো কেউ থাকবে না। দেশ ও জাতি থাকবে। আজ দেশ ও জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যত বিপন্ন।

“তাই কালবিলম্ব না করে আসুন, আমরা সব ভেদাভেদ ভুলে দল-মত নির্বিশেষে সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্যগড়ে তুলে শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলি।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলেন খালেদা জিয়া।

গত শুক্রবার রাতে গুলশান ২ নম্বরের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় একদল অস্ত্রধারী জঙ্গি, জিম্মি হন দেশি বিদেশি অন্তত ৩৩ জন।

প্রায় ১২ ঘণ্টা পর কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ওই রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয় সশস্ত্রবাহিনী। ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও ২০ জনের লাশ পাওয়া যায় জবাই করা অবস্থায়।

নিহতদের মধ্যে সাত জাপানি ছাড়া নয়জন ইতালির ও একজন ভারতের নাগরিক রয়েছে। বাকি তিনজন বাংলাদেশি, যাদের মধ্যে একজনের যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিকত্ব ছিল।

এর আগে রাতে রেস্তোরাঁয় হামলার পরপরই সেখানে আটকেপড়াদের উদ্ধারে গিয়ে হামলাকারীদের বোমা-গুলিতে নিহত হন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ওসি সালাউদ্দীন।

খালেদা জিয়া বলেন, “এই পৈশাচিক সন্ত্রাসী হামলা ও নারীসহ দেশি-বিদেশি নির্দোষ নাগরিকদের এভাবে হত্যার ঘটনার নিন্দা করার কোনো ভাষা নেই। আমরা গভীর বেদনাহত ও ক্ষুব্ধ।”

এ হামলার ঘটনায় ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা, ক্রটি ও সন্ত্রাসীদের সামর্থ্য প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাস্তবতাকে অস্বীকার করে পরিস্থিতিকে আরো অবনতির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। দৃশ্যমান শক্রর তুলনায় অদৃশ্য শক্রর হামলা মোকাবিলা এবং তাদের দমন করা অনেক কঠিন। এই কথা জানি বলেই আমরা এতোটা উৎকণ্ঠিত।”

গুলশানের হামলার ঘটনায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ কমান্ডো অভিযানে ভূমিকার জন্য নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও অগ্নিনির্বাপক দলের প্রশংসা করে তাদের ধন্যবাদ জানান খালেদা জিয়া।

সাহসিকতার সঙ্গে ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহের জন্য গণমাধ্যমের কর্মীদেরকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।

সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত দেশি-বিদেশিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন; ওই ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুস্থতাও কামনা করেন তিনি।

বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদের এই সঙ্কট মোকাবেলায় যেসব বন্ধু দেশ সহানুভুতি ও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন, তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি আশা করি, আমাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখে তারা সন্ত্রাস মোকাবেলায় সম্ভাব্য সকল ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।”

দেশের উগ্রবাদীদের সন্ত্রাস মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, “বর্তমানে আমরা সন্ত্রাসের যে চিত্র দেখছি, সেটা নিছক আইনশৃঙ্খলাজনিত মামুলি কোনো সমস্যা নয়। কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান দিয়ে এই সন্ত্রাস মোকাবেলা করা যাবে না।

“এই সংঙ্কটের শেকড় আরো অনেক গভীরে। সন্ত্রাস দমন কার্য্ক্রমকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে গেলে এই সঙ্কট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে।”

তিনি বলেন, সারা দেশে সন্ত্রাসের থাবায় ক্ষতবিক্ষত। মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিন, মন্দিরের পুরোহিত, ধর্মগুরু ও যাজক, ভিন্নমতের লেখক-প্রকাশক-ব্লগার, খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে, ধর্মীয় সংখ্যালগুরা আক্রান্ত হচ্ছে। কোথাও কেউ নিরাপদ নয়।

“এই আতঙ্ক ও হত্যালীলা থামাতে হবে, বন্ধ করতে হবে রক্তপাত। আমাদেরকে একতাবদ্ধ হতে হবে, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

খালেদা জিয়া বলেন, “গণতন্ত্রহীন দেশে স্বৈরাচারী শাসন, অসহিষ্ণু রাজনীতি, দমন-পীড়নের রাষ্ট্রব্যবস্থা, অধিকারহীন সমাজ, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য-বঞ্চনা ও সুশিক্ষার অভাব ক্রমাগত চলতে থাকলে সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।”

“আমি মনে করি, জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া এই সঙ্কট মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। কেবলমাত্র গণতান্ত্রিক পরিবেশই জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে।”

ঈদের প্রাক্কালে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, আসম হান্নান শাহ, জমিরউদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।