জামায়াত প্রশ্নে জাফরুল্লাহকে নিরাশ করলেন খালেদা

যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে চাপের মুখে থাকা জামায়াতে ইসলামীকে জোট থেকে বাদ দিতে খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে নিরাশ হতে হয়েছে বিএনপি-ঘনিষ্ঠ পেশাজীবী নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2016, 05:18 PM
Updated : 30 June 2016, 06:36 PM

বৃহস্পতিবার মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপস্থিতিতে বক্তব্যে এই আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

জাফরুল্লাহ বলেন, “সবাইকে নিয়ে ১৯৯১ সালের মতো আপনাকে (খালেদা জিয়া) আন্দোলনে নামতে হবে। জামায়াত ... অপরাধ করেছে তার বাপ-দাদারা। তারা যদি আপনার সাথে থাকতে চায়, আবার তারা ঘোষণা দিক, আমাদের পিতা-মাতারা ভুল করেছিল, তাদের ভুলের জন্য শাস্তি পেয়েছে।

“কিন্তু আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী করি, মুক্তিযোদ্ধাদের কবর জিয়ারত করব, তাদেরকে সঙ্গে নেন। কামাল হোসেনকে নেন, কাদের সিদ্দিকীকে নেন। আমাদের অলি আহমদরা এখনও পুরোপুরি, বদরুদ্দোজা চৌধুরী আপনাদের সাথে নাই .... জামায়াতকে ছেড়ে দেন।”

মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহর এই বক্তব্যের পর খালেদা জিয়া বলেন, “উনি (জাফরুল্লাহ) অসুস্থ। তারপরও উনি ভালো কথা বলেন, সত্য কথা বলেন, অনেক উপদেশও দেন। উনার উপদেশ কিছু শুনি, কিছু শুনতে পারি না আমাদের রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে।

“আমরা চাই, আপনার মতো আরও যারা আছেন, আপনি তাদেরকে নিয়ে আসুন। আমি সকলের সঙ্গে কথা বলব বা যেখানে বসতে চায়, আমি বসব। আমি কথা বলতে রাজি আছি। আমি কারও সাথে এখন ইয়ে করতে চাই না। এখন দেশটাকে রক্ষা করা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দেশটাকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে আমাদের এক হতে হবে।”

দুই যুগ ধরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে রয়েছে জামায়াত। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে এই দলটির শীর্ষনেতাদের অধিকাংশই দণ্ডিত। কয়েকজনের বিচার এখনও চলছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দলটির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলা বিএনপিকে ‘পাকিস্তানপন্থি’ বলে সমালোচনা করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।

বক্তব্যে জাফরুল্লাহ বিএনপির নতুন কমিটি গঠন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় করতেও খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান।

“আপনার দলে গণতন্ত্র প্রয়োজন। গণতন্ত্রের জন্য বলছি, দলের স্থায়ী কমিটিতে ১৮ জনের স্থলে ২০ জন করেন। এর মধ্যে ১৫ জন নির্বাচিত হবেন, আর ৫ জন আপনি মনোনয়ন দেবেন। আর জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ৬৫টা জেলা আছে, তাতে ৬০০ নির্বাচিত করেন। আপনি প্রধান হিসেবে আপনার হাতে ২০/২৫ জন থাকবে।”

এভাবে দলকে সংগঠিত করে রাজপথে নামলে বিএনপির সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন জাফরুল্লাহ।

কথিত বন্দুকযুদ্ধে ‘জঙ্গি’ গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিমের নিহত হওয়া নিয়ে খালেদা জিয়ার প্রতিক্রিয়ার প্রশংসা করেন তিনি।

“গত কয়েকদিনে হঠাৎ যেন আমার মনে হল, আপনার (খালেদা জিয়া) একটু নাড়াচড়া আছে। সামান্য নড়াচড়াতে আমাদের সংসদে কম্পমান সৃষ্টি হয়েছে। আপনি সাহস করে বলেছেন, খুনি হতে পারে, অপরাধ করতে পারে, তাকে পুলিশের হাজতে থেকে হাতে হাতকড়া পরা অবস্থায় হত্যা করা যায় না। সরকারের এই হত্যা অমানবিক ও অন্যায়। আপনি সাহস করে অনেকদিন পরে এই সত্য কথা বলেছেন।”

“আপনি বলেছেন যে, সরকারের বাহিনী পুলিশ ও র‌্যাব মানুষ হত্যা করার জন্য নয়। তারা যারা মানুষকে হত্যা করছেন তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধ ও ক্রসফায়ারে, তাদের কখনও ক্ষমা করা হবে না, এজন্য আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।”

‘গ্রেপ্তার বাণিজ্যে’ যেসব পুলিশ সদস্য জড়িত, তাদের তালিকাও তৈরি করার পরামর্শও বিএনপিকে দেন জাফরুল্লাহ।

সংবিধানে পরিবর্তন আনা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং সংবিধানে গণভোট প্রথা পুনঃপ্রবর্তনের কথা বেশি করে জনগণের সামনে তুলে ধরতে খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান অলি আহমদ বলেন, “খায়রুল হকের মতো প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন, যার কারণে এত লোক মারা যাচ্ছে।

“আগামীতে যদি আমাদের জোট ক্ষমতায় যায়, তাহলে কয়েকটা লোকের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে। এরমধ্যে একজন হচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও দুই জন কমিশনার। কারণ তাদের কারণে ১৪৫ জন লোক মারা গেছে। আরেকজন হল এ বি এম খায়রুল হক সাহেব। তিনি বিতর্কিত রায় দিয়ে আজকে সমগ্র মানুষকে বিপদে ফেলেছেন।”