রাজনৈতিক নয়, সামাজিক অস্থিরতা আছে: রওশন

দেশে এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা নয়, সামাজিক অস্থিরতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2016, 07:35 AM
Updated : 29 June 2016, 07:35 AM

এই সামাজিক সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে সব রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন বলেন, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে রাস্তায় মেরে ফেললো। কী করে হল? গুম, শিশু-নারী হত্যা- এগুলো চলছে। কর্মসংস্থানের অভাবে এগুলো হচ্ছে। এর শেষ দেখতে চাই। দেশে শান্তি দেখতে চাই। দেশে এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই, সামজিক অস্থিরতা আছে।

“পুলিশ দিয়ে এগুলো বন্ধ করা যাবে না। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বন্ধ করতে হবে। দল-মত নির্বিশেষে সবাই আলোচনায় বসলে উপায় খুঁজতে পারব। এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। মিলে-মিশে সমাধান করতে হবে।”

২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে নানা নাটকের জন্ম দিলেও শেষ পর্যন্ত বিএনপিহীন সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে এইচ এম এরশাদের দল জাতীয় পার্টি। সাবেক এই সামরিক শাসক বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত।

বাজেট আলোচনায় দেশে শুধু অর্থনৈতিক ঘাটতি নয়, আর্থ-সামাজিক খাতে, মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ঘাটতি আছে মন্তব্য করে রওশন বলেন, “মিটিং-মিছিল-ইফতার-বিয়েতে আমরা অন্য দলের লোকদের সঙ্গে কথা বলি না; এড়িয়ে যাই। এর থেকে বের হয়ে আসতে হবে।”

‘কৃষককে আবার কেন কর দিতে হবে’

কৃষকদের করের আওতায় আনার যে প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দিয়েছেন তার বিরোধিতা করে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, “কৃষক জমির মালিক না। কৃষকের ওপর অর্থমন্ত্রী কর ধরার চিন্তা করছেন।

“কৃষক লুঙ্গি পরে। নেংটির ওপর কাপড় নেই। ভর্তার ওপর তরকারি নেই। এত নিচু তলার লোক কীভাবে কর দিবে। তারা তো এমনিতেই কর দিচ্ছে, পরোক্ষ কর দিচ্ছে। আবার কেন কর দিতে হবে?”

দেশের ১৬ কোটি লোকের মধ্যে এক কোটি লোক কর দিতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তাদেরকে কেন ধরছেন না? মোটর মালিক সমিতি, এফবিসিআই-বিজিএমই অনেক আছে। তাদের আয়-ব্যয় কী? হিসাব নেন।

“গরীবের ওপর কর দিয়ে ঘাটতি মেটাতে পারবেন না। কৃষক ন্যায্য মূল্য পায় না। সামান্য ঋণ নিয়ে মামলা হয়। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি ঋণ নিয়ে মামলা হয় না। এই কৃষকদের মামলা প্রত্যাহার করা হোক আর এই টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পরিশোধ করা হোক।”

এসময় রিজার্ভ চুরির দায় কার- সে জবাবও অর্থমন্ত্রীর কাছে চান জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন।

“কী করে চুরি হল। কে, কীভাবে করল? ক্যাসিনোতে টাকা পাওয়া গেছে। সেটা আনার এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেই।

“তদন্ত হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট সম্পর্কে কিছুই জানতে পারিনি। অর্থমন্ত্রী নিজেই আক্ষেপ করেছেন সাগর চুরি হয়েছে। এর দায়-দায়িত্ব কার? এর উত্তর কি তিনি দয়া করে দেবেন?

‘আমরা অধম হলে আপনি উত্তম হবেন না কেন’

বক্তৃতার এক পর্যায়ে বিরোধী দলীয় নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেন, “আমরা ছিলাম ২৫ বছর আগের সরকার। এখন আমরা দেখতে পারছি আপনাদের সরকারের কর্মকাণ্ড।

“আপনি বলতে পারেন- আমাদের সময় কী ছিল? আমাদের সময় কী করেছি, সেগুলো হয়তো ২৫ বছর আগে ঠিক ছিলে। ২৫ বছর পরে হয়তো ঠিক নাও হতে পারে। আমরা যদি অধম হই আপনি উত্তম হবেন না কেন?” 

অর্থমন্ত্রী গত জুন সংসদের সামনে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি রয়েছে ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা।

এই ঘাটতির প্রসঙ্গ তুলে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, “এত ঘাটতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী কীভাবে স্বপ্ন দেখলেন। গত বাজেটে সমৃদ্ধির সোপানে উঠতে চেয়েছিলেন। সেটা কতটুকু উঠতে পেরেছিলেন?

“স্বপ্ন দেখতে ভালো লাগে। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে তো আর স্বপ্ন দেখি না। অর্থমন্ত্রী অনেক কিছু গোপন করলেও উচ্চাভিলাষ গোপন করতে পারেনি। সমস্যা হচ্ছে স্বপ্ন বাস্তবায়ন কীভাবে হবে?”

রূপপুর নিয়ে উদ্বিগ্ন রওশন

বাজেট আলোচনায় পাবনার রূপপুরে রাশিয়ার সহযোগিতায় পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন রওশন এরশাদ।

“পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিশেষজ্ঞ ছাড়া হ্যান্ডেল করা যাবে না। কে করবে? রাশিয়াতে ১০০ ভাগ লোক শিক্ষিত। সেখানকার চেরনোবিল এখন মরুভূমি। কিছু যদি লিকেজ হয় হাজার হাজার মানুষ মরে যাবে। অনেক চিন্তা-ভাবনা করে করতে হবে।

“এর বর্জ্য কে নেবে? তার জন্য কি চুক্তি করা হয়েছে- হয়নি। জাপানে কিন্তু লিকেজ হয়েছে সুনামিতে। তারা বন্ধ করে দিয়েছে। চিন্তা-ভাবনা করে করতে হবে।”

এসময় শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপশি এর মান উন্নয়নে শিক্ষামন্ত্রীকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

একইসঙ্গে মেডিটেশন, পাউরুটি ও বিস্কুটের ওপর থেকে প্রস্তাবিত কর তুলে নেওয়ার দাবি জানান রওশন।