খুনিরা নিজেদের লোক বলে ধরছে না সরকার: খালেদা

সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যার জন্য আবারও সরকারকে দায়ী করে খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘নিজেদের লোক’ বলেই তাদের ধরা হচ্ছে না। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2016, 03:34 PM
Updated : 28 June 2016, 03:34 PM

ইতালীয় নাগরিক চেজারে তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডে বিএনপির এক নেতাকে আসামি করে পুলিশের অভিযোগপত্র দেওয়ার একদিন বাদে মঙ্গলবার রাজধানীর ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবে এক ইফতার অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এই অভিযোগ করেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “এই যে কতগুলো ঘটনা ঘটল, বিদেশি হত্যা হল, এগুলো যারা ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের একজন অপরাধীকেও তারা ধরতে পারে নাই।

“কেন ধরতে পারে নাই? এই লোকগুলো তাদের কিংবা তাদের সমর্থক কেউ ছিল, যার জন্য তাদের হয়ে কাজ করে, যার জন্য তাদের ধরা হয়নি।”

গত দেড় বছরে তাভেল্লা ছাড়াও আরও এক বিদেশি কুনিও হোসি বাংলাদেশে খুন হন। এছাড়া লেখক, প্রকাশক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টও জঙ্গি কায়দায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

এরমধ্যে তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডের আট মাস পর ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাইয়ুমসহ আটজনকে আসামি করে পুলিশ অভিযোগপত্র দিয়েছে। তবে বিএনপি বলছে, এটা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।   

ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে বক্তব্যে খালেদা জিয়া জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের দমনে পুলিশের সাম্প্রতিক সাঁড়াশি অভিযানের সমালোচনাও করেন।

“পবিত্র রমজান মাসে সাঁড়াশি অভিযান হল, এটি কাদের বিরুদ্ধে? ১৫/১৬ হাজার লোক গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে কোনো অপরাধী নাই। বিএনপির তিন হাজারের উপরে নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে।”

বিএনপি নেতা-কর্মীসহ নিরীহ মানুষদের ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে খালেদা বলেন, “সত্যিকার অপরাধী যারা তাদেরকে ধরুন, আমরা আপনাদের সহযোগিতা করতে চাই।”

বাংলাদেশে এখন আইনের শাসন নেই দাবি করে তিনি বলেন, “দেশের মানুষ ন্যায়বিচার চায়, জুলুম-অত্যাচার বন্ধ চায়। কিন্তু হাসিনার অধীনে জুলুম-অত্যাচার, লুটপাট বন্ধ হবে না।”

সম্পাদক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের সমালোচনা করে এই প্রসঙ্গ ধরে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি আবারও জানান খালেদা।

“হাসিনার ছেলে জয় (সজীব ওয়াজেদ জয়) যে ৩০০ মিলিয়ন, প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে এবং এটা নিয়ে তদন্ত চলছে আমেরিকায়, এই কাগজগুলো তার (শফিক রেহমান) কাছে ছিল। এই অপরাধে তাকে জেল খাটতে হচ্ছে। এই হল বিচার! আমরা মনে করি, জয়কে এখানে আনা উচিৎ, তারও বিচার করা উচিৎ। না হলে ন্যায়বিচার হয় না।”

খালেদা জিয়া এই অভিযোগ তোলার পর প্রধানমন্ত্রীপুত্র জয় তা প্রমাণের চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন। তার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি নেতারা জয়কেই নিজের সংশ্লিষ্টতা না থাকার বিষয়টি প্রমাণের আহ্বান জানান।  

‘আজানে বিধি-নিষেধ’

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে মসজিদের মাইকে আজান দেওয়ার ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া; তবে কোথায় তা হয়েছে, তা উল্লেখ করেননি তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। আজকে মসজিদের মাইকে আজান পর্যন্ত কাউকে দিতে দেওয়া হয় না। এর কী কারণ?

“মসজিদে আজান হবে, আমরা আজানের অপেক্ষায় বসে থাকি, আজান শুনে আমরা নামাজ পড়ব, মানুষ সেই অপেক্ষায় বসে থাকে। কিন্তু হাসিনার নিরাপত্তার ব্যাপারে না কি মসজিদে মাইকে আজান দেওয়া যাবে না। এ হল অবস্থা।”

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে খালেদা বলেন, “না কি এর পেছনে আরও কোনো উদ্দেশ্য আছে, কোনো নির্দেশ আছে যে বাংলাদেশে আজানটা মাইকে দেওয়া যাবে না, এখন শুধু মসজিদের মধ্যেই দেওয়া হবে।”

হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরও ক্ষমতাসীনরা দখল করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

“কয়েকদিন আগে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ প্রতিবাদ করেছে যে তাদের বাড়ি-ঘর, জমি-জমা ও মন্দির ক্ষমতাসীনরা দখল করে নিয়েছে। তাদের ওপর অত্যাচার-জুলুম চলছে। প্রতিনিয়ত তাদের মেয়েরা অত্যাচারিত হচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে। কিন্তু কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। কেন? ছাত্রলীগের লোকজন এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদের ধরা হচ্ছে না।”

ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের ৬ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীর সামনে এই ইফতার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহানগর আহবায়ক মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মো. সাহাবুদ্দিন, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কাজী আবুল বাশার, শামসুল হুদা, নাসিমা আখতার কল্পনা, বজলুল বাসিত আনজু, ইউনুস মৃধাকে নিয়ে এক টেবিলে বসে ইফতার করেন খালেদা।

অনুষ্ঠানে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজ উদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক শাহিদা রফিক, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবীর খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, সাখাওয়াত হোসেন জীবন, মাহবুবুল হক নান্নু, শহীদুল ইসলাম বাবুল, ২০ দলীয় জোটের লেবার পার্টির হামদুল্লাহ আল মেহেদি, জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা শওকত আমীন, কল্যাণ পার্টির শাহিদুর রহমান তামান্না, জাগপার আসাদুর রহমান খান, ন্যাপ-ভাসানী রুহুল আমিন, ন্যাপের সৈয়দ শাহজাহান সাজু, সাহিদুন্নবী ডাবলু, খেলাফত মজলিশের গোলাম আজগর, এলিডি‘র শামসুল আলম প্রমুখ।