সুশাসন আজ গুলিবিদ্ধ: এরশাদ

দেশে আজ সুশাসন ‘গুলিবিদ্ধ’ মন্তব্য করে আর্থিক খাতের ‘দুর্নীতি ও লুটপাটের’ শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2016, 08:57 AM
Updated : 28 June 2016, 11:04 AM

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে আর্থিক খাতের নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ।

তিনি বলেন, “অর্থমন্ত্রী বলেছেন ব্যাংকিং খাতে সাগর চুরি হয়েছে। কিন্তু এর জন্য দায়ী কে? চুরি বন্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? বাজেটে তার রূপরেখা দেওয়া হয়নি। আমরা এই সংসদে লুটপাট নিয়ে আলোচনা করি আর বাইরে দ্বিগুণ হারে এই লুটপাট চলতে থাকে।”

তীব্র গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে কয়েক ডজন মামলা হয়েছিল। 

খেলাপি ঋণ মওকুফের প্রসঙ্গ তুলে তিনি অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, “ব্যাংকের ৩৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। এই অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? জনগণের টাকা, পেনশনভোগীদের টাকা- এদের টাকা অবলোপন করার ক্ষমতা আপনাকে কেউ দেয়নি। আমরা আপনাকে এই অধিকার দেইনি। এটা নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না।”

সাম্প্রতিক সময়ে রিজার্ভ চুরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছে। এই টাকা ক্যাসিনোতে পাওয়া গেছে। আপনি বলতে চান এর সাথে আমাদের কেউ জড়িত নয়।”

ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্তের প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ না করায় প্রশ্ন তোলেন এরশাদ।

“কেন অপরাধীদের আড়াল করে রাখছেন? কেন ঘটনায় জড়িতদের বিচার করছেন না? আপনার কী ভয়? অন্যায় করে বেঁচে যাবে এটা তো হয় না। লুটপাট হবে কিন্তু প্রতিকারে কোনো ব্যবস্থা হবে না- এটা বিচারহীনতার লক্ষণ।”

গত ১০ বছরে দেশ থেকে পাচার হওয়া সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা ফিরিয়ে আনার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, পানামা পেপারস’এ বাংলাদেশিদের নাম এসেছে। এরা কারা? এদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তা বাজেটে উল্লেখ নেই।”

লুট ও পাচার হওয়া টাকা উদ্ধারের বিষয়ে বাজেটে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না রাখার সমালোচনা করে তিনি এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য দাবি করেন।

তিনি বলেন, “সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি অবিলম্বে লুটপাটের অর্থ উদ্ধার করা হোক। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। সরকারের কাছে দাবি জানাব এই লুটপাটের শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হোক।”

বাজেটের ওপর আলোচনা হলেও সাবেক এই রাষ্ট্রপতি আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন।

“পত্রিকায় দেখলাম তনুর মা বলেছেন গরীব বলে কী আমরা বিচার পাব না। ২০০৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে এক হাজার ৭১৫ জন নিহত হয়েছে। গত মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত ১৩ জন গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছে। এর দায়িত্ব কী সরকারকে নিতে হবে না?

“যে সমাজে এসপির স্ত্রী নিরাপদ নয়, সেখানে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী হবে? আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি বহন করে চলেছি।”

প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ব্যবসায়ীরা বলেছে এমন জটিল বাজেট তারা আর দেখেনি। ব্যবসায়ীরা তো বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেন, তারা যদি এমন মত দেয়, তাহলে বাজেট কেমন হয় বুঝতেই পারি।

সংসদে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে এরশাদ বলেন, “সুশাসন আজ প্রশ্নবিদ্ধ নয়, সুশাসন আজ গুলিবিদ্ধ। আসুন এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলি। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব যেসব রাজনৈতিক দল সন্ত্রাস ও জ্বালাও পোড়াওকে বিশ্বাস করে না, তাদের সবাইকে নিয়ে জাতীয় সংলাপের আয়োজন করুন। কঠিন সমস্যা থেকে জাতিকে রক্ষার ব্যবস্থা করুন।”

“এত লোড আপনি নিতে পারবেন না। প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা চালু করলে আপনার এই গুরুভার কমে যাবে। এটা করলে মানুষ চিরকাল আপনারে স্মরণ করবে। স্বর্ণাক্ষরে আপনার নাম লেখা থাকবে।”

আওয়ামী লীগের সঙ্গে দীর্ঘসময় জোটবদ্ধ থাকার কথা তুলে এরশাদ বলেন, “১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে নির্বাচন করেছিলাম। আমরা যুগপৎ আন্দোলন করে অত্যাচারী বিএনপি সরকারকে সরিয়েছি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিলে একুশ বছর পর ক্ষমতায় আসার সুযোগ হয়। ২০০৬ সালে মহাজোট গঠন করে ২০০৮ সালে আপনাদের জন্য বিশাল বিজয় এনে দিয়েছি।

“রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আমি সর্বপ্রথম জাতির জনকের কবর জিয়ারত করি। আমার এখনও ইচ্ছা হয় জাতির জনকের কবর জিয়ারতের, কিন্তু জাতির জনক তো আমাদের নয়, আওয়ামী লীগের? অনুরোধ করব জাতির জনককে সার্বজনীন করুন।”