ক্যামেরনকে দেখে শিখুন: হাসিনাকে খালেদা

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে অনুসরণ করে পদত্যাগ করতে শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2016, 03:14 PM
Updated : 27 June 2016, 03:14 PM

যুক্তরাজ্যের ইইউতে থাকার পক্ষে অবস্থান নেওয়া ক্যামেরন গণভোটে হেরে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

বাংলাদেশের সে রকম কোনো বিষয় না ঘটলেও বিএনপিবিহীন দশম সংসদ নির্বাচনকে ‘অবৈধ’ বলে আসছেন খালেদা, যে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ।  

খালেদা সোমবার রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে এক ইফতার অনুষ্ঠানে বলেন, “আওয়ামী লীগকে আমরা বলব, ক্ষমতা ছাড়ুন। একটু দেখুন ব্রিটেনের দিকে, দেখে একটু শিখুন। এখনও গায়ের জোরে অবৈধভাবে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতা দখল করে বসে আছেন।

“সেখানে (ব্রিটেন) নির্বাচিত প্রাইম মিনিস্টার। উনারা গণভোটে হেরে গেছেন, সেজন্য তিনারা ছেড়ে দিচ্ছেন, পদত্যাগ করছেন।”

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়ে আসছে। তবে আওয়ামী লীগ অনির্বাচিত সরকারের অধীনে ওই বিধান সংবিধানে পুনরায় ফিরিয়ে না আনার পক্ষপাতি।

যুক্তরাজ্যের সংসদীয় গণতন্ত্র বাংলাদেশেরও অনুসরণের কথা তুলে ধরে খালেদা বলেন, জনগণের চাওয়ার বিষয়টি গোচরে নিয়ে আওয়ামী লীগেরও উচিৎ ক্ষমতা ছেড়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়া।

“অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হউক, সেই নির্বাচনে জনগণকে যাদেরকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে, আমরা তাদেরকেই মেনে নিতে রাজি আছি,” সরকারের উদ্দেশে বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

বিএনপির কৃষিবিদদের সংগঠন ‘এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ-এ্যাব’ এর উদ্যোগে এই ইফতার অনুষ্ঠান হয়। এতে শেরে বাংলা নগর, ময়মনসিংহ, গাজীপুরের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কৃষিবিদসহ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

বাংলাদেশের কৃষিখাত বর্তমানে দুরবস্থা চলছে দাবি করে খালেদা বলেন, “আজকে কৃষিখাতে নানারকম অবহেলা চলছে। আগের সেই অবস্থা নেই। দেশের উৎপাদন না বাড়িয়ে বিদেশ থেকে আমদানির প্রবণতা বেড়েছে। এর একমাত্র কারণ হল, সেখান থেকে কমিশন পাওয়া যায়। সেজন্য ক্ষমতাসীনরা এই কাজ করছে।

“কেবল তাই নয়, কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ভালো দাম পায় না। পাটের দাম পায় না। ধানের দাম এত কম যে কৃষকদের উৎপাদন খরচই উঠে না। অথচ সরকারের সেই দিকে কোনো দৃষ্টি নেই।”

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করার অভিযোগ তুলে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “ক্ষমতায় আসার আগে বড় বড় বুলি আওড়িয়েছিল যে কৃষকদের বিনা মূল্যে কৃষি উপকরণ দেবে, বিনা মূল্যে সার দেবে। চাল ১০ টাকা কেজি করে মানুষকে খাওয়াবে বলেছিল।

“কিন্তু তারা তাদের কথা রাখতে পারেনি। এই আওয়ামী লীগ সকলের কথার বরখেলাপ করেছে।”

কৃষিখাতে দলীয়করণ চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আজ ভালো ভালো কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। অপরাধ কী তাদের? তারা বিএনপি করে কিংবা বিএনপিকে সমর্থন করে।”

কৃষি ভূমি রক্ষার উপর জোর দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা বলেন, “কৃষি জমি কোনোভাবে কমতে দেওয়া যাবে না। বরং আরও যেসব খাস জমি আছে বা নদী থেকে যেসব জমি উদ্ধার হচ্ছে- সেগুলো আমরা কীভাবে কৃষি জমিতে রূপান্তরিত করতে পারি, সে গবেষণায় গুরুত্ব দিতে হবে।”

অনুষ্ঠানে বক্তব্যের পর এ্যাব আহ্বায়ক আনোয়ারুন্নবী মজুমদার বাবলা, সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ইব্রাহিম খলিল, বিএডিসির সাবেক চেয়ারম্যান মোখলেসুর রহমান, কৃষিবিদ কামরুজ্জামান কায়সার, শামীমুর রহমান শামীম, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে একই টেবিলে বসে ইফতার করেন খালেদা।

বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সেলিমা রহমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক সদরুল আমিন, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের নেতা আনহ আখতার হোসেন, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ হালিম ডোনার, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের নেতা সেলিম ভুঁইয়া অনুষ্ঠানে ছিলেন।