জামায়াত নিষিদ্ধের আইন ‘দ্রুত’ চান মন্ত্রী মোজাম্মেল

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধের বিল ‘দ্রুত’ জাতীয় সংসদে তোলার দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2016, 09:22 AM
Updated : 26 June 2016, 09:26 AM

রোববার সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলাম যুদ্ধাপরাধী দল। কারণ তারা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। তাদের এ দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। তাদের নিষিদ্ধ করা ছাড়া গত্যান্তর নাই।

“তাদের নিষিদ্ধের বিষয়ে আমাদের একটি প্রচেষ্টা ছিলে। আইনমন্ত্রীও আশ্বাস দিয়েছিলেন- এই সেশনেই জামায়াত নিষিদ্ধ করার জন্য আইন আসবে। আমি আশা করি, দ্রুতই সেই আইন সংসদে উত্থাপিত হবে।”

২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) গঠন করে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরু হলে ‘যুদ্ধাপরাধী দল’ হিসেবে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের দাবিও জোরাল হয়।

এরই মধ্যে শর্ত পূরণ না করায় হাই কোর্টের আদেশে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়। ফলে বাংলাদেশে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে দলটি। ওই আদেশের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী আপিল বিভাগে গেলেও সেই শুনানি শুরু হয়নি।

একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াতের শীর্ষ নেতারা কখনও ক্ষমা চাননি, বরং তারা বলে এসেছেন, তাদের সেই অবস্থান ‘সঠিক’ ছিল। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন মামলার বিচারেও মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার তথ্য উঠে এসেছে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের আমির গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ে জামায়াতকে একটি ‘ক্রিমিনাল সংগঠন’ বলা হয়। এরপর বিভিন্ন মহল থেকে দল হিসেবে জামায়াতের যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি জোরাল হয়ে উঠলে প্রসিকিউশন তদন্তও শুরু করে। কিন্তু ব্যক্তির পাশাপাশি দল বা সংগঠনের বিচারে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো না থাকায় বিষয়টি আটকে আছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত মাসে সাংবাদিকদের জানান, আইন সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত হয়ে গেছে; শিগগিরই তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। আর খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, সব আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ বছরই মধ্যেই বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে।

‘মুক্তিযোদ্ধাদের ঈদ ও বৈশাখী ভাতা’

জাতীয় সংসদে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঈদসহ বিভিন্ন উৎসব ভাতার জন্য বরাদ্দের দাবি জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, “মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ না করলে আজ দেশ স্বাধীন হতো না। আমরা কেউ আজকের এ অবস্থানে থাকতে পারতাম না।

“সেই মুক্তিযোদ্ধাদের মনের একটা আকুতি- সামনে কয়েকদিন পরে ঈদ। সকলে ঈদ বোনাস পাবে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা পাচ্ছেন না। বৈশাখী ভাতাও দেওয়া হচ্ছে না। এর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি বড় দাবি- ২৬ ‍মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস এই দুইদিন তাদের জন্য বিশেষ ভাতা চালু করতে হবে।”

“আমরা হিসাব করে দেখেছি, ৪ হাজার টাকা করে ঈদ বোনাস ও ২ হাজার টাকা বৈশাখী ভাতা এবং স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে ৫ হাজার টাকা করে ভাতা দিলে বছরে মাত্র ৪০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হয়। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে এই অর্থ বরাদ্দের অনুরোধ করব,” যোগ করেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধাদের বিনা পয়সার চিকিৎসার উদ্যোগের কথা জানিয়ে মন্ত্রী মোজ্জাম্মেল বলেন,  “আমরা এ বছর সব মুক্তিযোদ্ধাকে বিনা পয়সায় দেশের অভ্যন্তরে সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। তবে, বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।”

‘পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের ভূমিকা’

পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের ভূমিকা অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “পাঠ্যসূচিতে আমরা মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথার ইতিহাস অর্ন্তভুক্ত করেছি। কিন্তু ওই পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর যুদ্ধাপরাধীদের কথা পাঠ্যপুস্তকে নেই।

“এটা হতে পারে না। ওই কাপুরুষ যুদ্ধাপরাধীদের ১৯৭১ সালের ভূমিকা পরবর্তী প্রজন্ম সঠিকভাবে জানতে না পারলে তারা ভালো-মন্দ কীভাবে বিচার করবে?”

আ ক ম মোজাম্মেল অভিযোগ করেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন হয় ‍না।

“অনেক জায়গায় মাঠ নেই অজুহাত দেখিয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না। চাইলে শ্রেণি কক্ষেও জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া যায়। অনেকের গাত্রদহের কারণ জাতীয় সঙ্গীত। এখানে তাদের পাক সার জমিন নেই। এটা না থাকলে তাদের মন ভরে না।”

‘মুক্তিযোদ্ধাদের আইডি কার্ডে ৮ ধরনের নিরাপত্তা’

অনলাইনে ‘অল্প দিনের মধ্যে’ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের এমন আইডি কার্ড দেব যাতে ৮ ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। টাকা জাল করা যাবে; কিন্তু এই কার্ড জাল করা যাবে না।”