ফাহিমকে হত্যা করা হয়েছে: খালেদা

বন্দুকযুদ্ধে নিহত নয়, গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিমকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ‘সম্পৃক্ততার’ অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2016, 04:19 PM
Updated : 23 June 2016, 07:36 PM

বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক ইফতার অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “কয়েকদিন আগে ফাহিমকে হত্যা- এটা সম্পূর্ণভাবে একটি সাজানো ঘটনা। কোনো ক্রসফায়ারে নয়, তাকে হত্যা করা হয়েছে। ফাহিমকে কোর্টে নিয়েছিল, এরপর কোর্ট তাকে রিমান্ডে দিয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে সেদিনই শেষ রাতে তাকে হত্যা করা হয়েছে হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায়।

“তার মানে এটা যারা তখন দায়িত্বে ছিল, পুলিশ তাকে হত্যা করেছে।”

গত ১৫ জুন মাদারীপুরে এক কলেজ শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার সময় ঘটনাস্থল থেকে ফাহিমকে আটক করে পুলিশে দেয় জনতা। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।

রিমান্ডে নেওয়ার পরদিন সকালে মাদারীপুরের একটি চরে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ গুলিবিদ্ধ হয়ে ফাহিম নিহত হন বলে কর্মকর্তারা জানান।

ঢাকার উত্তরার কলেজ ছাত্র ফাহিম ‘ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মী’ ছিলেন জানিয়ে কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষক হত্যাচেষ্টার সময় তার ধরা পড়ার মধ্য দিয়ে ‘গুপ্তহত্যায়’ কারা জড়িত তা স্পষ্ট হয়েছে।

গত ১৫ জুন মাদারীপুরে এক কলেজ শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার সময় ঘটনাস্থল থেকে ফাহিমকে আটক করে পুলিশে দেয় জনতা।

ফাহিম নিহতের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে খালেদা জিয়া বলেন, “পুলিশ হত্যা করা মানে হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) এর সঙ্গে ইনভলবড। হাসিনা হলো হোম মিনিস্টার।”

খালেদা জিয়া এই অভিযোগ করলেও প্রায় এক বছর ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

দশম সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠনের পর কামালকে প্রথমে প্রতিমন্ত্রী করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী কোনো মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী না থাকলে তা প্রধানমন্ত্রীর অধীনে থাকে। গত বছর জুলাইয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

গুলশানে ইমানুয়েলস কনভেনশন হলে জোট শরিক লেবার পার্টির এই ইফতার পার্টিতে বক্তব্যে ফাহিমের ঘটনা নিয়ে দলের আইনজীবীদের উচ্চ আদালতে যেতে বলেন খালেদা জিয়া।

“ফাহিমকে হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় পাওয়া গেছে। পুলিশের হেফাজতে মারা গেছে। এই অবস্থায় কোর্ট খুললে আমাদের আইনজীবীদের এটা নিয়ে মুভ করা উচিৎ কীভাবে এই ছেলেটা মারা গেল।”

পুলিশের বিরুদ্ধে তার দলের নেতাকর্মীসহ সরকারবিরোধীদের নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেত্রী।

“এই রমজান মাসে পর্যন্ত আমাদের দেশের ছেলে-পেলেরা নিজের বাসায় শান্তিতে সেহেরি করতে পারে না।”

পুলিশের বিরুদ্ধে ‘গ্রেপ্তার বাণিজ্যের’ অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “ব্যবসা চলছে, ঈদের আগে তাদের (পুলিশ) অনেক টাকা বানানো দরকার। তাদের স্ট্যান্ডার্ড হাই হয়ে গেছে। তাদের ভালো ভালো বাড়ি হচ্ছে, তারা ভালো ভালো খাবার-দাবার খাচ্ছেন। সরকার থেকে তাদের দেয় এবং অন্যদিকে তাদের পুশে রাখার জন্য তারা বাণিজ্য করে ব্যাপক অর্থ উপার্জন করছে। এই হচ্ছে অবস্থা।”

বিচার বিভাগ নিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “যারা বিচার বিভাগে আছেন, তারা বুঝতে পারছেন, এই বিভাগকে পুরো দলীয়করণ করে শেষ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, আজকে সকলের জন্য সমান বিচার ও ন্যায়বিচার নেই। আওয়ামী লীগের জন্য এক রকম বিচার আর বিএনপিসহ বিরোধী দল ও সাধারণ মানুষের জন্য অন্যরকম বিচার।

“কেবল তাই নয়, জেলেও একই অবস্থা। আওয়ামী লীগের কেউ যত বড় অপরাধ করুক না কেন জেলে গেলে কিছুদিন পর সে ছাড়া পেয়ে যাবে। আর বিএনপির লোকজন হলে তারা জামিন পেলে একটার পর একটা নতুন মামলা দিয়ে জেলে আটকিয়ে রাখা হয়।”

কারাগারে বিএনপির নেতা-কর্মীদের চিকিৎসায় ‘অবহেলা’ দেখানো হয় বলেও অভিযোগ খালেদার।

“বিএনপি ও সাধারণ মানুষ হলে জেলখানায় চিকিৎসা পাবে না। এভাবে কারাগারে আমাদের কয়েকজন চিকিৎসার অভাবে মারাও গেছেন।”

‘এই অবস্থা’ থেকে উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “আসুন, আমরা যা কিছু করছি, কিছু পাওয়ার জন্য নয়, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি হওয়ার জন্য নয়। আমরা যা কিছু করছি দেশকে বাঁচানোর জন্য, মানুষকে বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য।”

বক্তব্যের পর লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদি, ফারুক রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক রহমান, এমদাদুল হক চৌধুরী, আমিনুল ইসলাম রাজু, আলাউদ্দিন আলী, মাহবুবুর রহমান খালেক, অ্যাডভোকেট উম্মে হাবিবা রহমান, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, জামায়াতে ইসলামীর কর্ম পরিষদের সদস্য মো. সেলিমউদ্দিনকে নিয়ে এক টেবিলে বসে ইফতার করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

মুসলিম লীগের এএইচএম কামারুজ্জামান খান, এনডিপির খন্দকার গোলাম মূর্তজা, ন্যাপের জেবেল রহমান গানি, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাপ-ভাসানীর আজাহারুল ইসলাম, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, ইসলামিক পার্টির আবু তাহের চৌধুরী, এলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, বিজেপির সালাহউদ্দিন মতিন প্রকাশও ইফতারে ছিলেন।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, আবদুল মান্নান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, শাহজাহান ওমর, রুহুল আলম চৌধুরী, হায়দার আলী, আহমেদ আজম খান, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, তৈমুর আলম খন্দকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ২০ দলীয় জোটের মসিউল আলম, খন্দকার লুৎফর রহমান, গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, মুস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, সৈয়দ মাহবুব হোসেন, লেবার পার্টির সামসুদ্দিন পারভেজ, মাহমুদ খান, হিন্দুরত্ন রামকৃষ্ণ সাহা, মহসিন ভুঁইয়া, শামীমাম চৌধুরী প্রমুখ ইফতারে অংশ নেন।

এছাড়া তুরস্ক ও অস্ট্রেলিয়ার দুইজন নাগরিকও ইফতারে ছিলেন।