বুধবার ঢাকায় এক ইফতারে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “এই রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়, এটা পুলিশি রাষ্ট্র হয়ে গেছে। দেশে আজ পুলিশের অধীনে সব কিছু চলছে। তারা যাকে ইচ্ছা ধরে নিয়ে যাচ্ছে, যাকে ইচ্ছা ক্রসফায়ার করছে।
“মহিলাদের পর্যন্ত পুলিশ অত্যাচার করছে, প্রতিবাদ করার কোনো সুযোগ নেই। পুলিশের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তার জন্য আবার জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করতে হয়। দেশে আইন নেই, আদালত ও বিচার কোনোটাই নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে না।”
দেশে সব ধর্মের মানুষ ‘অত্যাচারিত’ দাবি করে এই অবস্থা থেকে উত্তরণে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানসহ সবাইকে ‘দেশ রক্ষায়’ এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া।
“আজ সময় এসেছে, সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। আমি কোন দল করি, আমি বড় দল- সেটা আমাদের কাছে বড় কথা নয়। আমাদের কাছে বড় কথা দেশকে আমরা টিকিয়ে রাখতে পারব কি না?
দেশের ভেতর ‘পুলিশের হাতে প্রতিনিয়ত খুন-হত্যাকাণ্ডের’ পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় অন্য দেশের নিরাপত্তারক্ষীদের দ্বারা মানুষ খুন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।
“প্রতিনিয়ত দেশের ভেতরে খুন হচ্ছে পুলিশের দ্বারা, অন্যদিকে সীমান্ত এলাকায় খুন হচ্ছে অন্য দেশের সিকিউরিটিদের দ্বারা। তাহলে আমরা কী বলতে পারি? বাংলাদেশ কী অবস্থায় চলে যাচ্ছে।
“যেখানে মিয়ানমার পর্যন্ত বাংলাদেশের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। মিয়ানমারের হেলিকপ্টার বাংলাদেশের আকাশ সীমা লঙ্ঘন করছে। অথচ সীমান্তে বিজিবি যে আছে, এরা অসহায়ের মতো। নিজের দেশের মানুষ হত্যা করে তারা নিজেরাই অসহায় হয়ে গেছে। আজ তাদের কোনো ক্ষমতা নেই।”
সীমান্ত হত্যা বন্ধে সরকার ‘উদাসীন’ অভিযোগ করে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ‘দেশকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত’ থাকার অভিযোগ করেন বিএনপি নেত্রী।
তিনি বলেন, “আমরা শঙ্কিত যে আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব আছে কি না। কারণ দেশের মানুষ নির্ভয়ে নির্দ্বিধায় কোনো কাজ করতে পারে না। এই অবৈধ সরকার, অনির্বাচিত সরকার... তারা দেশ পরিচালনার নামে দেশকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত।
“আজকে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে দেশের মানুষকে হত্যা করে যায়। একটা প্রতিবাদ করার সাহস নেই এই সরকারের। আমরা বলতে চাই, এরকম একটা দুর্বল সরকারের দ্বারা মানুষের কল্যাণ হতে পারে না।”
রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব’ এই ইফতারের আয়োজন করে।
এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের হাজারখানেক শিক্ষক-চিকিৎসকরা অংশ নেন।
বক্তৃতা পর্বের পর সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, অধ্যাপক মোহাম্মদ তাহির, অধ্যাপক আবদুল বায়েস ভুঁইয়া, অধ্যাপক আবদুল মবিন খান, অধ্যাপক আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক আবদুল মান্নান মিয়া, ড্যাব এর সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক, মহাসচিব অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেনকে নিয়ে এক টেবিলে বসে ইফতার করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
এছাড়া ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমদ, খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, বিএনপির মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সেলিমা রহমান, মাহফুজউল্লাহ, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের রুহুল আমিন গাজী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনয়নের এম আবদুল্লাহ, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়াও ইফতারে ছিলেন।