জঙ্গিবাদ নির্মূলে ফের ‘জাতীয় কনভেনশনের’ প্রস্তাবে বিএনপি

জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে দেশের সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে দ্রুত ‘জাতীয় কনভেনশন’ করার জন্য সরকারকে ফের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2016, 03:31 PM
Updated : 21 June 2016, 03:31 PM

মঙ্গলবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আয়োজনে এক আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, “আমরা বলতে চাই, বিরোধী দলকে বাইরে রেখে এই ভয়াবহ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। ছাত্রদলের এই সমাবেশ থেকে আমি সরকারের প্রতি আবারও আহ্বান রাখতে চাই, অনেক হয়েছে... এনাফ ইজ এনাফ, দেশ ধ্বংস করে দিয়েছেন।

“এখন জঙ্গিবাদের নাম করে আরও যে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের দিকে দেশ যাচ্ছে, তাকে বন্ধ করার চেষ্টা করুন। সমস্ত রাজনৈতিক দলকে ডেকে কনভেনশনের মধ্য দিয়ে একটা জাতীয় প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। অন্যথায় এই ভয়াবহ এই অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার আমাদের কোনো উপায় নেই।”

এর আগে ঢাকায় ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডের পর জঙ্গিবাদ নির্মূলে জাতীয় কনভেনশন ডাকার আহ্বান জানিয়েছিল বিএনপি।

ফের জঙ্গিবাদ নির্মূলে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা এই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বার বার বক্তব্য রেখেছি। শুধু বক্তব্য রাখিনি, আমরা কাজ করেছি।

“আমরা ইতালির নাগরিক তাভেল্লা হত্যার সঙ্গে সঙ্গে সরকারকে একটা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, সমস্ত রাজনৈতিক দল নিয়ে একটা জাতীয় কনভেনশন ডাকার জন্য। যেখানে সব রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এই জঙ্গিবাদকে রুখে দেবে, জঙ্গিবাদ সমূলে উৎপাটন করবে।”

সরকার জঙ্গিবাদ দমনের নামে মিথ্যাচার করে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ মির্জা ফখরুলের।

“দেশে গণতন্ত্র নেই। এই সরকার গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করেছে। এখন তারা জঙ্গিবাদ দমন করার কথা বলে মিথ্যাচার করছে, তারা গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।”

‘জঙ্গিবাদ নির্মূল সরকারের উদ্দেশ্য নয়’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সরকারের উদ্দেশ্য জঙ্গিবাদের কথা ব্যবহার করে বিরোধী দলকে নিচিহ্ন করে দেওয়া, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেওয়া। আর সেজন্যই সরকার কী মিথ্যাচার করছে?”

লেখক অভিজিৎ রায় হত্যার আসামি হিসেবে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মুকুল রানার (যার একাধিক ছদ্ধনামের কথা জানিয়ে শরীফ নামে পরিচয় দিয়েছে পুলিশ) বিষয়ে সরকার মিথ্যাচার করেছে বলে অভিযোগ করেন এই বিএনপি নেতা।

“শরীফ… অভিজিৎ হত্যার আসামি করে যাকে ধরা হয়েছিল, যাকে ধরার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই শরীফ দেখা গেল আজকের পত্রিকায় এসেছে, সে শরীফ নয়, মাসুদ রানা। তাকে চার মাস আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাকে আটকিয়ে রাখা হয়েছিল। তারপরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এসএসসিতে জিপিএ-৫, এইচএসসিতে জিপিএ-৫।

“তার আগে ফাহিমকে হত্যা করা হয়েছে, যার ১৮ বছর বয়স। কেন তাকে গুলি করে মারলেন? কেন রিমান্ডে নেওয়ার প্রথম দিনই তাকে গুলি করে মারা হলো?”

গুপ্তহত্যার আসামিদের চিহ্নিত করে ‘আসল সত্য গোপন করে বিরোধীদের ওপর দোষ চাপাতেই’ সরকার তাদের গুলি করে হত্যা করছে বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল।

“লক্ষ্য করবেন… প্রত্যেকটি গুপ্তহত্যার আসামি চিহ্নিত করে ধরা হচ্ছে, অভিযুক্ত করে ধরা হচ্ছে, তাদেরকে গুলি করে, ক্রসফায়ার করে মারা হচ্ছে। কেন? আসল সত্য গোপন করেছেন, বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। মিথ্যা কথা বলে, জনগণকে বিভ্রান্ত করে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।”

দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

সরকার দেশকে অন্ধকারের গহব্বরে নিয়ে গেছে দাবি করে এ অবস্থায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে ‘আশার আলো’ হিসেবে দেখছেন মির্জা ফখরুল, যাকে কিছুদিন আগে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব থেকে মহাসচিবের দায়িত্ব দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।

ফখরুল বলেন, “আমাদের সামনে ঘোর অন্ধকার। আমরা অন্ধকার গহব্বরের মধ্যে চলে গেছি। এই সরকার দেশকে অন্ধকারের গহব্বরে আমাদের নিয়ে গেছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

“আমরা গহব্বরের ওই প্রান্তে, টানেলের ওই প্রান্তে একটু আশার আলো দেখতে পাই- সেই আশার আলো হচ্ছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। যিনি সবসময় গণতন্ত্রের জন্য আপোষহীন নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখনো তিনি বলছেন, আমার শেষ বয়সে, জীবনের শেষ সায়াহ্নে এসে আমি আরও শক্ত হয়ে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার জন্য লড়তে চাই।”

‘সহাবস্থা: পরমত সহিষ্ণু-ইতিবাচক ছাত্র রাজনীতি চর্চার মাধ্যমে আগামী দিনের জাতীয় নেতৃত্ব বিকাশে ডাকুস নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ছাত্র সমাজের করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা আয়োজন করে ছাত্রদলের ঢাবি শাখা।

এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ঢাকসু) নির্বাচন না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ব্যাপারে ছাত্রদের সোচ্চার হতে বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদি তালুকদারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশারের পরিচালনায় সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক সুকোমাল বড়ুয়া, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ছাত্র দলের সভাপতি রাজীব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের আজিজুল বারী হেলাল, শফিউল বারী বাবু,  আবদুল কাদের ভুঁইয়া, শহিদুল ইসলাম বাবুল, ওবায়েদুল হক নাসিরসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।