গুপ্তহত্যা বন্ধে গণপ্রতিরোধের ডাক ১৪ দলের

গুপ্তহত্যা বন্ধে মানববন্ধন থেকে সারাদেশে শহর-গ্রামে, পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ক্ষমতাসীন ১৪ দল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2016, 11:41 AM
Updated : 19 June 2016, 05:19 PM

জঙ্গি কায়দায় সম্প্রতি বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রোববার বিকালে রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন থেকে এই আহ্বান জানানো হয়।

রাজধানীর গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ি পর্যন্ত শ্যামলী, আসাদ গেইট, ২৭ নম্বর রোড, রাসেল স্কয়ার, গ্রিন রোড, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, প্রেস ক্লাব, পল্টন মোড়, নূর হোসেন স্কয়ার, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, গুলিস্থান পার্ক, ইত্তেফাক মোড়, রাজধানী সুপার মার্কেট, সায়েদাবাদসহ ১৯টি স্থানে সড়কের পাশে অবস্থান নেন নেতা-কর্মীরা।

ঢাকার পাশাপাশি সারাদেশে বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ১৪ দলের নেতা-কর্মীরা একই কর্মসূচি পালন করা হয় বলে জোটের নেতারা জানিয়েছেন। 

গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ফটকের সামনে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহম্মদ নাসিম বলেন, “জঙ্গিবাদ ও গুপ্তহত্যা প্রতিরোধের জন্য দেশের প্রগতিশীল সব শক্তি এগিয়ে আসতে হবে। গুপ্তহত্যাকারীদের ঠেকাতে সারাদেশের শহর-গ্রাম-পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।”

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, “আজকের এই মানববন্ধনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে মাদারীপুরের শিক্ষক হত্যাচেষ্টাকারী ফাহিমকে যেভাবে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেভাবে সারাদেশে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”

মানববন্ধন থেকে আওয়ামী লীগ ও জোট শরিক দলের নেতারা জঙ্গি কায়দায় এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটকে দায়ী করেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, “বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে পেট্রোল বোমার তাণ্ডব চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল। সরকার পতনে ব্যর্থ হয়ে এখন গুপ্তহত্যায় জড়িয়ে পড়েছে। বেগম খালেদা জিয়া তার রূপ পরিবর্তন করতে পারেনি।”

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “এদেশের মানুষ গুপ্তহত্যা পছন্দ করে না। খালেদা জিয়ার পেট্রোল বোমা যেভাবে বন্ধ হয়েছে, একইভাবে এদেশে গুপ্তহত্যা বন্ধ হয়ে যাবে।”

গুপ্তহত্যার সঙ্গে সরকার জড়িত বলে বিএনপি চেয়ারপারসনের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে হানিফ বলেন, “আমি বলব, আপনারা গুপ্তহত্যা শুরু করেছেন। আর নিজেদের দোষ আড়াল করার জন্য এখন আপনার দলের নেতাদের মাধ্যমে বলছেন, আন্তর্জাতিক চক্রান্তের জন্য দেশে গুপ্তহত্যা হচ্ছে।”

রাসেল স্কয়ারে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনামলে একুশে অগাস্টের গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার, শাহ এএমএস কিবরিয়া এবং আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যার নজির তুলে ধরে সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যার জন্যও তাদের দায়ী করেন।

তিনি বলেন, “যেখানে ১ লাখ ওলামায়ে কেরাম এক হয়ে ফতোয়া দিয়েছে, এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্য্ক্রম ইসলামে নিষিদ্ধ; সেখানে এদেরকে আড়াল করার জন্য খালেদা জিয়া প্রত্যেক দিন ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে মূলত গুপ্তহত্যাকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

খালেদা জিয়াকে ‘হতাশ নেত্রী’ আখ্যায়িত করে তোফায়েল বলেন, “তিনি ২০১৩ সালে বাংলাদেশকে আগুনের সামনে নিয়ে গিয়েছিলেন। অসংখ্য নিরীহ মানুষ ও অসংখ্য মায়ের কোল খালি করেছেন। ২০১৪ সালে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে তিনি সফল হননি। আবার ২০১৫ সালেও ৯৩ দিন হরতাল করে এবং অনেক মায়ের কোল খালি করে তিনি ঘরে ফিরেছেন।”

গুপ্তহত্যার জন্য খালেদা জিয়া দায়ী মন্তব্য করে তিনি বলেন, “পুরোহিতদের হত্যা করা হয়, বেছে বেছে টার্গেটেড কিলিং করা হয়, যাতে প্রতিবেশীরা প্রতিক্রিয়া জানায়।

“খালেদা জিয়ার একজন ছেলে লন্ডনে থাকে। লন্ডনে কোনোদিনও এমপি খুন হয় নাই। কিন্তু খালেদার ছেলে লন্ডনে, এখন সেখানে গুপ্তহত্যা শুরু হয়েছে। টিউলিপকে পর্যন্ত হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।”

“কিন্তু আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শপথ নিয়েছি আমরা জঙ্গি তৎপরতা নির্মূল করব। খালেদা জিয়া অতীতেও পরাজিত হয়েছেন, এবারও পরাজিত হবেন,” বলেন তিনি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শিগগিরই দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী তোফায়েল।

বিএনপি নেতাদের আহ্বানের জবাবে গুলিস্তানে মানববন্ধনে নাসিম বলেন, “ঐক্য চান ঐক্য হবে। আগে সাহস থাকলে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে ঘোষণা দিন, জামায়াত আপনাদের সাথে থাকবে না। তাহলে আমরা তখন চিন্তা করে দেখব।”

গুপ্তহত্যা প্রতিরোধে আগামী ১৫ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত প্রতিবাদ সপ্তাহ পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন নাসিম।  

গুলিস্তানে মানববন্ধনে জাসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, জেপির (মঞ্জু) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বক্তব্য রাখেন।

রাসেল স্কয়ারে তোফায়েল ছাড়াও বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান।