বন্দুকযুদ্ধ: বিচার বিভাগীয় তদন্ত চায় বিএনপি

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় মাদারীপুরে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ফাইজুল্লাহ ফাহিমেরসহ সব ‘বিচারবহির্ভূত হত্যার’ বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2016, 09:04 AM
Updated : 19 June 2016, 06:11 PM

রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা এই ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরোধিতা বরাবরই করে আসছি, এখনো করছি। আমরা এহেন বিচারবহির্ভূত হত্যাগুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাচ্ছি এবং অবিলম্বে এটা বন্ধ করার জন্য বলছি।”

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, গতবছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বা ‘ক্রসফায়ারে’ মোট ১৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত এক মাসেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে কয়েক ডজন।

এ ধরনের ঘটনাকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমালোচনা করে আসছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও।

মাদারীপুরে শিক্ষকের উপর হামলার সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার ‘জঙ্গি’ গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিম রিমান্ডে থাকা অবস্থায় শনিবার সকালে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যান।

শনিবারই গভীর রাতে ঢাকার খিলগাঁওয়ে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শরিফুল ওরফে সাকিব নামে একজন মারা গেছেন, যাকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ‘গুরুত্বপূর্ণ সদস্য’ বলছে পুলিশ।

ফাহিমের মৃত্যুর প্রসঙ্গে টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এটার অবিলম্বে তদন্ত হওয়া উচিত। এটা সম্পূর্ণভাবে আইনবহির্ভূত ব্যাপার। কোনোভাবে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় একজনকে এভাবে হত্যা করা জাতি মেনে নিতে পারে না।”

‘জঙ্গিবাদ নিয়ে ছেলেখেলা কেন’

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সরকার জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, “এত বড় একটা জটিল ও গুরুতর সমস্যা- জঙ্গিবাদ তা নিয়ে ছেলেখেলা খেলছেন কেন? আগুন নিয়ে খেলছেন কেন?

“এর একটাই কারণ, তারা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন এই সমস্যা চিহ্নিত করতে এবং প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে নিয়ে আসতে। কোনো সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়াই বিএনপি ও বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপিয়ে সরকার তার দায়িত্ব শেষ করতে চাইছে।”

শরিফুলের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “আজকেও খিলগাঁওতে একটি ক্রসফায়ার হয়েছে। এর একদিন আগে যে ১৮ বছরের ছেলেটিকে একজন কলেজ শিক্ষককে হত্যার প্রচেষ্টায় মাদারীপুরের জনগণ ধরলো বলা হলো, সেই ছেলেটিকে রিমান্ডে নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যা করা হয়েছে।

“তারও আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হত্যা সন্দেহে যাকে ধরা হলো তাকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে দেখুন- কাশিমপুর জেল থেকে আদালতে নেওয়ার পথে জঙ্গি মামলায় জড়িতদের একজন প্রিজন ভ্যান পালিয়ে যাওয়ার পর তাকেও টাঙ্গাইলের কাছে ধরে হত্যা করা হলো।”

বিএনপি মহাসচিব দাবি করেন, এসব ঘটনায় একটা বিষয় পরিষ্কার যে ‘প্রকৃত তথ্য’ উদঘাটন না করে তাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে।

“এই থেকে জনমনে স্বাভাবিকভাবে যে প্রশ্নটি এসে দাঁড়িয়েছে, সরকার নিজেই কি এর সঙ্গে জড়িত,” বলেন তিনি।

‘প্রকৃত ঘটনা’ আড়াল করতে সুপরিকল্পিতভাবে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানোর অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, “গুপ্তহত্যার সঙ্গে কারা জড়িত- এটা উদঘাটন না করেই শুধুমাত্র বিএনপির ওপর দোষ চাপানো, বিএনপির নেতৃবৃন্দের ওপরে দোষ চাপানো- এটা একটা রাজনৈতিক নীলনকশা, অপকৌশল। উদ্দেশ্যটাই হচ্ছে, যেভাবে হউক বিরোধী দলকে ঘায়েল করা, দমন করা- এটাই হচ্ছে তাদের মূল লক্ষ্য।”

সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে হত্যার পর শুরু হওয়া সাঁড়াশি অভিযানেরও সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

“এক সাপ্তাহে সাঁড়াশি অভিযানে যে ১৩ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হলো, তারাই (সরকার) বলছে, এর মধ্যে ১৭৯ জন চিহ্নিত করতে পেরেছে, তারা জঙ্গি। বাকি ১৩ হাজারই সাধারণ মানুষ।

“এভাবে গোটা দেশকে তারা ভয়াবহ আতঙ্কের রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, বিভাজনের রাজনীতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে, অন্ধকারের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।”

‘দেশে গণতন্ত্র নেই’ বলে ‘এই সঙ্কট’ তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে এসময় আবারও অবিলম্বে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হারুনুর রশীদ, কেন্দ্রীয় নেতা শাহজাহান মিলন, আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম ও শহিদুল ইসলাম বাবুল উপস্থিত ছিলেন।