আসলামের রিমান্ড শুনানি পেছাল

নাশকতা ও রাষ্ট্রদ্রোহের তিন মামলায় বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর রিমান্ড শুনানি পিছিয়ে গেছে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2016, 07:51 AM
Updated : 30 May 2016, 10:26 AM

রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় পুলিশের করা দশ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে মঙ্গলবার।

আর মতিঝিল ও লালবাগ থানার নাশকতার দুই মামলায় দশ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ড আবেদন আদালত শুনবে ৬ জুন।

সোমবার এই তিন মামলায় আসলাম চৌধুরীকে ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করা হলে তিনজন বিচারক আদালাভাবে শুনানির নতুন তারিখ ঠিক করে দেন।

রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় রিমান্ড শুনানি করেন মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন। আর মতিঝিল ও লালবাগ থানার নাশকতার মামলার শুনানি করেন হাকিম গোলাম নবী ও মাজহারুল ইসলাম।

আসলাম চৌধুরীর অন্যতম আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে ধারায় আসলাম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা বৈধ কি না- এ বিষয়ে হাই কোর্টের নির্দেশনার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা এ বিষয়টি মাননীয় আদলতকে জানালে তিনি বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শুনানির দিন পিছিয়েছেন।”

ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন দল লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গত ১৫ মে ঢাকার খিলক্ষেত থেকে আসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। 

এ বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করেই আসলামের আইনজীবীরা হাই কোর্টে যান, যা আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে। 

চট্টগ্রামের নেতা আসলাম চৌধুরীকে মাস খানেক আগে বিএনপির নতুন কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে মনোনীত করেন খালেদা জিয়া।

আর লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদি ইসরায়েলের বর্তমান সরকারের উপমন্ত্রী এম কে আয়ুব কারার একজন সাবেক উপদেষ্টা। তিনি নিজের নামে মেন্দি এন সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস প্রতিষ্ঠানটি চালান।

সম্প্রতি ভারতের এক সম্মেলনে তাদের দুজনের সাক্ষাতের ছবি ও খবর গণমাধ্যমে এলে আলোচনার সূত্রপাত হয়। আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করতে বিএনপি ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল এবং দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে মিলে ‘ষড়যন্ত্র’ করছে।

ইসরায়েল কিংবা মোসাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, আসলামের ওই সফর ছিল ‘ব্যক্তিগত’। তবে আসলাম বা সাফাদি কেউই ভারতে ওই সাক্ষাতের খবর অস্বীকার করেননি।

গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মেন্দি এন সাফাদি যে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির নেতা, তা তিনি সে সময় ‘জানতেন না’ ।

আর সাফাদিও বিবিসির বাংলাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আসলামের সঙ্গে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে দেখা হলেও তাদের মধ্যে ‘কোনও গোপন বিষয়ে’ কথা হয়নি।

এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ১৫ মে আসলামকে গ্রেপ্তার করে পরদিন আদালতে তোলে পুলিশ।

সন্দেহভাজন হিসেবে সাত দিনের রিমান্ড শেষে ২৪ মে তাকে আদালতে হাজির করার পর নতুন করে নাশকতার দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ২০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়।

মতিঝিল থানার মামলাটি গত বছরের ৪ জানুয়ারির এবং লালবাগ থানার মামলাটি গত বছরের ৫ জানুয়ারির। দুই মামলায় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এরপর ২৬ মে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক গোলাম রব্বানি গুলশান থানায় আসলামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাটি করেন, যেখানে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১২০/বি (রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র), ১২১/এ (রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার ষড়যন্ত্র) এবং ১২৪/এ (রাষ্ট্রদ্রোহ) ধরায় অভিযোগ আনা হয়।

পরদিন এ মামলাতেও আসলামকে দশ দিনের রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করে পুলিশ।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, “সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর প্রচেষ্টায় নানা ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রম, ষড়যন্ত্রমূলক হত্যা ও বোমাবাজির সঙ্গে আসামি আসলাম চৌধুরীর যোগসূত্র রয়েছে। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য তাকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।”

পুলিশ প্রধান একেএম শহীদুল হক মামলা হওয়ার দিন সাংবাদিকদের বলেন, মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে ‘চুক্তি করার কথা’ আসলাম পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ‘স্বীকার করেছেন’।

“সেই নেতা এই সরকার উৎখাতে ষড়যন্ত্র করবে; আসলাম তাকে টাকা দেবে- তা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।”

শহীদুল হক বলেন, ইসরায়েলের সেই রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ‘সম্পর্ক আছে’। আর তার সঙ্গে আসলাম চৌধুরী ‘একাধিক মিটিং’ করেছেন ভারতে।

“জিজ্ঞাসাবাদে সে যেসব তথ্য উপাত্ত দিয়েছে, তাতে স্পষ্ট প্রতিয়মান হয়েছে, সে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে সস্পৃক্ত ছিল।”