জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বক্তব্যে এই দাবি করেন দলটির মহাসচিব।
ফখরুল বলেন, “আজকে একের পর এক ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে একটার পর একটা মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বিএনপিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
তবে এই চেষ্টা সফল হবে না বলেও সরকারকে হুঁশিয়ার করেন তিনি।
রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে জিয়া যে বিএনপি গড়ে ছিলেন, ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যূত্থানে তিনি নিহত হওয়ার পর তিন দশক ধরে সেই দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার স্ত্রী খালেদা।
খালেদার নেতৃত্বে দুই বার সরকার গঠন করে বিএনপি। তবে ২০০৭ সালে ক্ষমতা ছাড়ার নয় বছর পর এখন আন্দোলন চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি মামলায় মামলায় জেরবার দলটি।
আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে দাবি করে ফখরুল বলেন, “গণতন্ত্রকে তারা বিনষ্ট করে দিয়েছে। সমস্ত প্রতিষ্ঠান একে একে ধ্বংস করে দিয়েছে। আজ বাংলাদেশ একটি অগণতান্ত্রিক, শ্বাসরুদ্ধকারী দেশে পরিণত হয়েছে।”
“এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। দেশনেত্রী ইতোমধ্যে আমাদের আহ্বান জানিয়েছেন, আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশপ্রেমিক সকল মানুষকে এক হয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরানোর জন্য আন্দোলন করতে হবে,” দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান মহাসচিব।
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উপস্থিত হলেও বক্তব্য দেননি। তিনি শ্রোতার সারিতে বসে দলীয় নেতাদের বক্তব্য শোনেন।
ফখরুলের সভাপতিত্বে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, সদ্য বিএনপিতে যোগদানকারী ছাত্রমৈত্রীর সাবেক সভাপতি আতাউর রহমান ঢালী।
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কবি আল মাহমুদের লেখা কবিতা ‘ডানাওয়ালা মানুষ’ আবৃত্তি করেন শোনান সাবিনা ইয়াসমীন সীমা ইসলাম।
বক্তব্যে ফখরুল দলীয় চেয়ারপারসনের পাশাপাশি তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টিও তোলেন।
বিএনপির বিরুদ্ধে ইসরায়েল সংশ্লিষ্টতার অপপ্রচার চালানো হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “তিন দিন আগে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে মিটিংয়ের ভিডিও ক্লিপ বেরুনোর পর সেই লোক (মেন্দি এন সাফাদি) নিজেই যখন বলছেন মিটিং হয়েছে, তখন বলা হচ্ছে এটা না কি সাজানো নাটক।
“তোমাদেরটা সাজানো নাটক আর আমাদের আসল, রাষ্ট্রদ্রোহ! জয়কে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।”
প্রবীণ সম্পাদক শফিক রেহমান, আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতা শওকত মাহমুদকে আটক রাখার নিন্দাও জানান বিএনপি মহাসচিব।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, “যখন সরকার দেখছে, হামলা-মামলা দিয়ে বিএনপি বিভক্ত করা যাচ্ছে না, তার জনপ্রিয়তা রোখা যাচ্ছে না, তখনই পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে নানা অপপ্রচার চালিয়ে নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্ত করতে চাইছে। এ ব্যাপারে সকলকে সর্তক থাকতে হবে।”
মওদুদ আহমদ বলেন, “এত নির্যাতন, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, জেল-জুলুম, হত্যা-খুন হচ্ছে; কই আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির কিংবা ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন নেতাও তো শহীদ জিয়ার আদর্শ ছেড়ে আওয়ামী লীগ যায়নি।
“এখনও আমরা টিকে আছি। তাই নেতা-কর্মীদের বলব, হতাশ হওয়ার কিছু নেই্। ”
‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলন সফল করতে দেশপ্রেমিক শক্তি, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবীদের নিয়ে নতুন ‘প্লাটফর্ম’ তৈরির পরামর্শও দেন বিএনপির এই নেতা।