সরকারের মেয়াদ কমানোর প্রস্তাব বি চৌধুরীর

বাংলাদেশে সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে কমিয়ে চার বছর করার প্রস্তাব করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2016, 11:19 AM
Updated : 29 May 2016, 02:22 PM

রোববার রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক আলোচনা সভায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুলনা করে এই প্রস্তাব দেন তিনি। তবে কেন তা চান, তার ব্যাখ্যা তিনি দেননি।

বি চৌধুরী বলেন, “আমার একটা বিশেষ প্রস্তাব আছে। প্রতিবেশী অনেক দেশে যান, চার বছর পর পর নির্বাচন হয়। আমেরিকায় যান, চার বছর পর পর নির্বাচন, ইংল্যান্ডে যান চার বছর।

“আমাদের কেন পাঁচ বছরে থাকতে হবে? বদলানো যায় না? সরকারকে বলব, আপনি চার বছরে আনুন।”

সেই সঙ্গে নির্দলীয় সরকারের দাবিও তুলে ধরেন বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সভাপতি বি চৌধুরী।

“শেষের তিন মাস সত্যিকার অর্থে যারা নির্বাচিত তাদের নিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন করুন। তাহলেই তাদের অধীনে একটা ফার্স্ট ক্লাস নির্বাচন হবে। এখনকার মতো নির্বাচন- জিরো।”

বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সরকার ও জাতীয় সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর। মাঝে নির্দলীয় সরকারের অধীনে তিনটি নির্বাচন হলেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার সংবিধান সংশোধন করায় সেই বিধান বিলুপ্ত হয়। 

বিএনপি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার সংবিধানে পুনর্স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছে। একই দাবি বি চৌধুরীরও, যিনি ওই দলটির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব এবং ওই দলটির মনোনয়নেই রাষ্ট্রপতি ছিলেন।

বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থার হাল তুলে ধরতে গিয়ে চলমান ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টানেন বিকল্প ধারা সভাপতি।

“এটা কী রকম নির্বাচন? এত মানুষ মারা যায়, ইচ্ছামতো ভোট, অনেককে মনোনয়নপত্র জোর করে প্রত্যাহার করানো হয়। গণতন্ত্র কোথায়? এটা কোনো নির্বাচন হল?”

“সরকারের লজ্জা লাগে না, আমাদের লজ্জা লাগে, কেননা (আমরা) দেশের সিনিয়র সিটিজেন; মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা লজ্জিত, আমাদের মায়েরা লজ্জিত, সন্তানরা লজ্জিত, দেশের মানুষ লজ্জিত।”

এই ধরনের ভোটের জন্য সরকার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) দায়ী করেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।

 

“মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার, তার কোনো মেরুদণ্ড নাই। খবরের কাগজে দেখেছি, উনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে আমার ট্যাংক লাগবে। ট্যাংক নিয়ে যুদ্ধ করে নির্বাচন হবে- লজ্জা লাগে না। আপনার মতো প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কথায় লজ্জায় মরে যাই। এরপরও দাঁড়িয়ে আছেন, এরপরও পদত্যাগ করেন না। আপনি লজ্জায় মরে যান, শরমে মরে যান।”

সরকারের উদ্দেশে বি চৌধুরী বলেন, “গণতন্ত্র মানে কী, এটা সরকারের বোঝা উচিৎ। সরকার বোঝে না, তা বলছি না। কিন্তু সাধারণ মানুষ মনে করে, যত দিন জোর করে ক্ষমতায় থাকা যায়।

“ক্ষমতা পেয়ে যাকে তাকে গ্রেপ্তার করি, যাকে তাকে জেলে দেই, পচা লোককে নির্বাচন কমিশনার বানাই। এটার নাম ক্ষমতা নয়, লোভ। আসুন দেশের মানুষের দায়িত্ব পাওয়ার পর বিবেকের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করি।”

“গণতন্ত্রহীনতা শেষ কথা নয়। এমনটা যারা ভাবছেন একদিন আপনাদের মধ্যে গণতন্ত্র লাঞ্ছিত হবে, হতে বাধ্য। তখন বুঝতে পারবেন গণতন্ত্রের প্রয়োজন ছিল কতখানি,” বলেন তিনি।

মুসলিম লীগের অষ্টম জাতীয় কাউন্সিলে বক্তব্য রাখেন বিকল্প ধারা সভাপতি। এতে সভাপতিত্ব করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল আজিজ হাওলাদার।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান এম এ রকিব, মুসলিম লীগের একাংশের সভানেত্রী জোবেয়দা কাদের চৌধুরী, একাংশের মহাসচিব আতিকুল ইসলাম খোকন, ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব এ টি এম হেমায়েতউদ্দিন, মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, কেন্দ্রীয় নেতা বদরুদ্দোজা সূজা, এস আই ইসলাম মিলন, আনোয়ার হোসেন, আবু তাহের বাচ্চু মিয়া, ওসমান গনি, হাজেরা বেগম বক্তব্য রাখেন।

শতাব্দি প্রাচীন দলটির এই সম্মেলনে সারাদেশ থেকে তিন শতাধিক কাউন্সিলর অংশ নেন বলে নেতারা জানিয়েছেন।